করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় ফের দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই সপ্তাহ বন্ধ ঘোষণা করে নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ধাপে ধাপে সেই ছুটি বাড়ানো হয়। অবশেষে সংক্রমণ কমে এলে ৫৪৪ দিন পর গতবছরের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয় সরকার। তাতে দীর্ঘদিন পর শ্রেণিকক্ষে ফেরার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হয়।
নতুন বছরের শুরু থেকেই দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিগত কয়েকদিন ধরে বলে আসছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে টিকাদান কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে সরকার। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেন, সরকার বিধিনিষেধ দিলেও মানুষ সেভাবে মানছে না। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণ বাড়ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণেই ফের স্কুল বন্ধের মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা স্কুল খুলেছিলাম। কিন্তু ইদানীং লক্ষ্য করলাম স্কুল কলেজের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। তারা আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে আসছে চিকিৎসার জন্য। এটা আশঙ্কাজনক। সংক্রমণ এভাবে বাড়লে ঢাকার শহরের সব হাসপাতালে দেখা যাবে বেড খালি নেই। এ কারণে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে উনার সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উদ্দেশ্য সংক্রমণ যেন কমে, বাচ্চারা যেন আক্রান্ত না হয়। দুই সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, সংক্রমণের হার কমে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণের হার কমে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তবে এখন অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চলমান থাকবে। মন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করেই শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়, পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্কুল বন্ধের যে নির্দেশনা আমরা পেয়েছি, এটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা চলাচল করবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও ক্লাসে ফিরবেন তারা। তবে শিক্ষকরা প্রশাসনিক কাজে যোগ দিতে পারবেন। কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারও বন্ধ থাকবে। এসময় তিনি টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
ঢাবি রাবি জাবিতে অনলাইনে ক্লাস: মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারির পর সশরীরে ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হল খোলা রেখে অনলাইনে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে আগে থেকেই অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতায় অব্যাহত থাকবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রমও সীমিত করা হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকবে। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট, স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মত জরুরি পরিষেবা যথারীতি অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজ নিজ আবাসস্থলে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হল। ক্যাম্পাসে সভা, সমাবেশ ও জনসমাগম না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকলেও এই সময়ে অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, আমরা বৃহস্পতিবারই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেসব ডিপার্টমেন্টে সংক্রমণ বেড়েছে, তাদের অনলাইনে পাঠাব। এখন যেহেতু সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েই দিয়েছে, আমরাও ফিজিক্যালি না নিয়ে অনলাইনে চলে যাব।
একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্বল্পতায় পরীক্ষা সশরীরে নেয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেণ, আপাতত অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার মতো অবকাঠামো আমাদের নেই। পরবর্তীতে হলে তখন আমরা অনলাইনে নিতে পারব। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ পুরোপুরি খোলা রাখা হবে। সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন