শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

মাহে রমজান ইবাদতের বসন্তকাল হিসেবে খ্যাত। এ দেশের ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান। তারা এ মাসে রোজা ছাড়াও নানা ইবাদতে নিজেদের শামিল রাখে। নিত্যদিনের কাজকর্ম অফিস-আদালত, কৃষিকাজ, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি করেও তারা ইবাদতের জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। এ মাসের ইবাদতের ফল অন্যান্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি। মাহে রমজানে পূর্ববর্তী ১১ মাসের যাপিতজীবনে আসে আমূল পরিবর্তন। ধর্মীয় আবহ, পরিবেশ, রীতি, খাদ্যগ্রহণ প্রথা, আচরণ, অনুসরণ প্রায় সর্বত্র ঘটে পরিবর্তন। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এ মাসে বন্ধ থাকে। দীর্ঘ এক মাসের অবকাশে শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্মচর্চা ও ধর্মানুশীলনের একটা সুযোগ পায়। গত বছর করোনার প্রকোপ কমায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, পরে অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আশা করা গিয়েছিল, পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এবং বাস্তবতার বিবেচনায় এবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু হয়নি। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কথা জানিয়েছেন। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর মতে, প্রাথমিক ও ইফতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলবে ২০ রমজান পর্যন্ত। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলবে ২৪ রমজান পর্যন্ত। ২০ অথবা ২৫ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় কতটা সুফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট সংসশয়। যারা শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক, তাদের বেশির ভাগই রোজা রাখবে। এ সময় রোজার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা কিংবা শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়া করা অত্যন্ত কঠিন। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা কিংবা শিক্ষকদের পাঠদান করাও সহজ নয়। ফলে, যে সুফল বা লাভের কথা বলা হচ্ছে, তা খুব কমই পাওয়া যাবে।

এ বছর প্রচণ্ড গরম ও দাবদাহ চলছে। রাজধানীসহ শহরগুলোতে চলাফেরা করা অত্যন্ত কষ্টকর। তার ওপর নজিরবিহীন যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে রাস্তাঘাটে। রমজানে জনচলাচল ও পণ্য পরিবহন একটু বেশি হয়। পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও বেচাকেনা তুলনামুলকভাবে বেশি হয়। রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহনের ভিড়ভাট্টা লেগেই থাকে। এমতাবস্থায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে পরিবেশ-পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে বা দাঁড়াতে পারে তা অনুমানের অতীত নয়। জন ও যান চলাচলে বাধা, দুর্ভোগ ও অচলাবস্থা যেমন দেখা দেবে তেমনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকবে না। ইতোমধ্যে এ নিয়ে সকলের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সম্পর্কে নানারকম মতামত প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিপক্ষে। অনেকের অভিমত, রমজানের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। বলা হচ্ছে, করোনাকারণে দু’বছর শিক্ষার অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষতি ও ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা দরকার। সত্য বটে, দু’বছর শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এই ক্ষতি একমাসে বা দু’মাসে পোষানো সম্ভব নয়। এ জন্য আরো বেশি সময় প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাধ্যমে ধীরে ধীরে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে হবে। এক মাসের কম সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রেখে এতদিনের ক্ষতি পূরণ করা যাবে, এমন ‘উর্বর’ চিন্তার কোনো সুযোগ এখানে আছে বলে মনে হয় না। অনেকে মনে করেন, কোনো ধর্মীয় উপলক্ষ কেন্দ্র করে একমাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা বা রাখা কিছু লোকের হয়তো পছন্দ নয়। তারা কোনো না কোনো অজুহাত সৃষ্টি করে এই বন্ধ বাতিল করতে চায়। গত বছর ও এ বছর এ বন্ধ নিয়ে যে ব্যতিক্রম সৃষ্টির চেষ্টা, সেটা তাদেরই কারসাজি হতে পারে। বলা বাহুল্য, মাহে রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা আমাদের অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। এর অন্যথা করা যাবে না।

রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার পক্ষে যত কথাই বলা হোক না কেন, তা ধোপে টিকবে না। এতদিন রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের বড় কোনো ক্ষতি হয়েছে, তেমন প্রমাণ নেই। আর এই একমাস খোলা রাখলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মহা-উপকার হয়ে যাবে এমনটাও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। ধর্মীয় দিক ছাড়াও রমজান মাসের আরো অনেক দিক আছে। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়। রমজানকে উপলক্ষ করে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলে, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে, মালামাল পরিবহনের জোয়ার তৈরি হয়। এই সময় সবকিছু সচল ও গতিশীল রাখা আবশ্যক ও অপরিহার্য। কোনো দুর্ঘটে কিংবা যানজটে যদি অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় তবে অর্থনীতির ক্ষতি অনিবার্য। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাজধানীর যানজটে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। জ্বালানিতে প্রতি মাসে ক্ষতি হয় ২২৭ কোটি টাকা। এমনিতে গরম, তার ওপর যানজট দীর্ঘায়িত হলে মানুষের দুর্ভোগও চরম সীমায় ওঠা স্বাভাবিক। আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে জনদুর্ভোগ ও যানজট বাড়বে। এতে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির যে ক্ষতির আশংকা, তা পূরণ হওয়া অসম্ভব। কাজেই অর্থনৈতিক স্বার্থেও যাতায়াত ব্যবস্থা সচল ও মসৃণ রাখা আবশ্যক। এ জন্য রাস্তাঘাটে জনচাপ ও যানজট কমাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা জরুরি। সবদিকের বিবেচনায়, অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলে আমরা আশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Younush Shorif ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৪ এএম says : 0
আমরা বন্ধের পক্ষে।
Total Reply(0)
Lutfor Chowdhury Donel ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৮ এএম says : 0
মুসলিম দেশের প্রেক্ষাপটে রোজা রাখাটা যতটা সহজ অমুসলিম দেশে ততটা সহজ নয়। যারা আমেরিকাতে থাকে তাদের জন্য রমজান মাসটা কিছুটা কষ্টের। যেমন বাংলাদেশে ইফতার সেহেরীর সময় মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষনা দেয়া হয়, চারিদিকে রমজানের একটা আমেজ কাজ করে, মুসলিম অমুসলিম সকলেই রোজার পবিত্রতা মেনে চলে কিন্তু আমেরিকাতে সেগুলো নেই। বাংলাদেশে রমজানের সময় সমস্ত স্কুল কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে নয়তো শিথিল থাকে কিন্তু আমেরিকাতে শিক্ষার্থীদের ১৭/১৮ ঘন্টা রোজা রেখেই ক্লাস করতে হয়, তারউপর আছে পার্ট টাইম জব কারণ এসব দেশে শিক্ষার্থীকে পার্ট টাইম কাজ করেই লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হয় l অবশ্য সব মুসলিম স্টুডেন্টরাই যে রোজা রাখে তা কিন্তু নয়। যাদের পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষা মজবুত সেসব শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও রোজা পালন করে। এই বছর নিউ ইয়র্কে আমাদের প্রায় 14 ঘন্টা রোজা রাখতে হবে অর্থাৎ সেহরী এবং ইফতারের মধ্যবর্তী সময়ে প্রায় 14 ঘন্টা । বাংলাদেশে রোজার দিনে সবাই সেহেরী খেয়ে একটু বেলা করে আস্তেধীরে উঠে। কারন এই সময়ে অফিসের সময়সূচী একটু শিথিল থাকে কিন্তু আমেরিকাতে দেখা গেলো, সেহেরী খেয়ে আর সময় নেই, ডিউটিতে চলে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে যারা রেস্টুরেন্টে জব করে। ইফতারের সময় দেখা গেলো, একজন রোজাদার ইফতারীর জন্যে ব্রেকও পায়নি। অগ্যতা ডিউটিরত অবস্থায় একগ্লাস পানি খেয়ে হয়তো কোনোমতে তাকে ইফতারী করতে হচ্ছে। এখানেই শেষ নয় আরো আছে, পশ্চিমা দেশ গুলোর কিছুকিছু জায়গায় ১৭থেকে ১৮ঘন্টার রোজা হয়ে থাকে কারন সামারে এখানে দিন অনেক বড় হয় । সূর্য ডোবে প্রায় দশটায় l সারাদিন চাকুরী করে ১৭/১৮ঘন্টার রোজা রাখাটা সত্যিই কঠিন l মোটকথা অনেক প্রতিকূল পরিবেশে আমেরিকাতে রোজা পালন করতে হয়। সমস্ত রমজান মাসে আমাকে 20 দিন ইফতারের সময় কাজে থাকা লাগবে অর্থাৎ ডিউটিৱত অবস্থাতেই ইফতারি করা লাগবে । অবশ্য সব বাঙালি আমেরিকানদের যে একই অবস্থা - তা কিন্তু নয়। শত প্রতিকূলতার মাঝেও এই রমজানে সবাই যেন ভালো থাকে। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
Total Reply(0)
Afjal Hossain ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৫ এএম says : 0
সম্পূর্ণ বন্ধ রাখলে বেশি ভালো হয়।
Total Reply(0)
MD Sayem Ahmed Rahim ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৫ এএম says : 0
২ বছর এর ক্ষতি। এক মাসে পুষিয়ে নেয়া কি সম্ভব। তা ও রমজান মাসে।হায়রে বাংলাদেশ
Total Reply(0)
Abou Zafor Md Saleh ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৬ এএম says : 0
বিষয়টি সরকারের ভেবে দেখা দরকার
Total Reply(0)
ঝুমি ঝুমি ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৯ এএম says : 0
রমজান মাসে স্কুল খোলা রাখা মানেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবার কষ্ট, দয়া করে বন্ধ রাখুন ।
Total Reply(0)
MD Ashraful ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৯ এএম says : 0
দুবছর নাপড়েও সবাই পাশ করল আর এই পবিএ রোমজান মাস আল্লাহর স্রেষ্ট মাস এই একটি মাস বলার ভাষা নেই!
Total Reply(0)
Oni Kha ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১০:২৯ এএম says : 0
দুইবছরের সিলেবাস কি ২৪ দিনে complete হয়ে যাবে? রমজানে গরমের দিনে ক্লাস নিলেই কি সব শেষ হয়ে যাবে? রমজানে স্কুল খোলা, আমরা কি আসলে মুসলিম দেশের নাগরিক?
Total Reply(0)
Md. Ataur Rahman ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৪:০৬ পিএম says : 0
পুরো রমজান মাস সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখা উচিত। ২ বছর গচ্ছা গেছে। অমুসলিম দেশে আমাদের মুসলিম ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া করছে। আমাদের দেশের যারা ১২ টাকার সব্জি ৪৮ টাকা বিক্রি করে তাদের নিয়ে কথা বলে না। মসজিদে যত লোক তারাবি পড়ে তার অর্ধেক মানুষ সৎ হলে বাংলাদেশ বেহেশতে রুপান্তর হতো। ছেলে মেয়ে দের ভবিষ্যত চিন্তা করে শুধু ঈদের ৩দিন ছুটি রাখা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি সরকারি ছুটির অনুরুপ হওয়া উচিত।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন