ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি আর বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলাসহ সারা দেশে ২ কোটি সাড়ে ৯ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে বোরো ধানের আবাদে কৃষক এখন মাঠে। আমন ও আউশের লক্ষ্য অর্জনের পরে এবার দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় সোয়া ৩ লাখ হেক্টরসহ সারা দেশে প্রায় ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে ভাটি এলাকা বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার প্রায় ১৮ ভাগ জমিতে এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলার প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে ইতোমধ্যে অগ্রহায়নের অকাল বর্ষনের পরে পৌষ-মাঘের হাড় কাঁপানো শীতের ‘কোল্ড ইনজিুরী’তে বোরো বীজতলার যথেষ্ঠ ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু এসব ছাপিয়ে আবাদ লক্ষমাত্রা অর্জনে মাঠে মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন সকাল-সন্ধা বোরো বীজ উত্তোলন থেকে বপন সহ সেচ ও সার প্রয়োগে ব্যাস্ত।
এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সার ও ডিজেল সঙ্কট নেই। কিন্তু এখনো দেশের মোট আবাদকৃত বোরো জমির ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকায় ডিজেলচালিত পাম্পে সেচ দেয়া হলেও সরকারি ভর্তুকি রয়েছে ২০ ভাগেরও কম বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রে। ফলে বোরো আবাদে বেশিরভাগ কৃষকই সরকারি কোন ধরনের প্রনোদণা পাচ্ছে না।
বোরো ধান ইতোমধ্যে দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের স্থান করে নিলেও দক্ষিণাঞ্চলে এখনো আমন প্রথম স্থানেই রয়েছে। এরপরেও প্রতি বছর দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বোরো ধান থেকে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন হচ্ছে। গত বছর রবি মৌসুমে দেশের প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মত ২ কোটি ৮ লাখ টনেরও বেশি বোরো চাল উৎপাদন হয় বলে কৃষিমন্ত্রী দাবি করেছেন। চলতি বছরে দেশে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৪৮.৭৩ লাখ হেক্টরের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৭ হেক্টর এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় আরো প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে। সারা দেশে ২ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলাতেই প্রায় ১৫ লাখ টন চালের লক্ষ্য স্থির রয়েছে।
তবে গত বছর রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও এবার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ একের পর এক বৈরী আবহাওয়া ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। অগ্রহায়নের শেষে অকাল বর্ষণ যেমনি বোরো বীজতলাকে প্লাবিত করে, তেমনি কয়েক দিনের ব্যবধানেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের প্রায় ৫ ডিগ্রি নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক জমির বীজতলাই কোল্ড ইনজুরির শিকার হয়। গত দু’দিন ধরে ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের বীজতলাসহ রোপা বোরোর জমি ঝুঁকির কবলে রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার যে সাড়ে ১০ লাখ কৃষক ইরি-বোরোর আবাদ করে থাকেন, তাদের সেচকাজে প্রায় ৬৫ হাজার পাওয়ার পাম্প ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যারমধ্যে মাত্র ৬ হাজারের মত বিদ্যুৎচালিত। অবশিষ্ট প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি পাম্প ডিজেলচালিত বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিগত দিনের একটি পরিসংখ্যানে জানা গেছে।
বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশেই এখনো সেচ ব্যয় সর্বাধিক ২৮-৩০%। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের মরু এলাকা পাঞ্জাবে সেচ ব্যয় মোট উৎপাদন ব্যয়ের মাত্র ১৩%। যা থাইল্যান্ডে ৮% ও ভিয়েতনামে মাত্র ৬%। উপরন্তু এবার ডিজেলের মূল্য ২৩% বৃদ্ধির ফলে দেশে সেচ ব্যয় আরো বেড়ে যাবার আশঙ্কা কৃষিবিদদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন