র্যাগ-ডে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি বহুল পরিচিত শব্দ। স্নাতকোত্তর পড়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগে ছাত্র-ছাত্রীরা একটি বিদায়ী আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করে থাকে। দিন ভর নাচ-গান, আমোদ-প্রমোদ, খাওয়া-দাওয়ায় বিপুল অর্থ ব্যয়। সারা দিন উৎসব শেষে সন্ধ্যায় বিদায়ী শিক্ষার্থীদের সৌজন্যে প্রতিষ্ঠান প্রধানের পক্ষ থেকে একটি ডিনারের আয়োজন। এই যেন র্যাগ-ডে’র চিরচেনা রূপ। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটেছে গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের র্যাগ-ডে’তে। চিরচেনা এই প্রথা ভেঙে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। আনন্দ উল্লাসে অর্থ ব্যয় না করে বিভাগের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করেছেন তারা। পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্রও বিতরণ করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়ক বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এআর কামরুজ্জামান বাবু বলেন, প্রতিবছর লক্ষ্য করা যায় যে, শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে র্যাগ ডে, গালা ডে, গালা নাইট, ব্যাচ ট্যুরসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে থাকে শিক্ষার্থীরা। আমার একজন শিক্ষক ড. আরসাম কুদরত এ খোদার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই চিরাচরিত প্রথা থেকে বেরিয়ে আসিএ তিনার পিতাও আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি বলতেন, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ব্যাক্তি শুদ্ধ হয় আর ব্যাক্তি শুদ্ধির মাধ্যমে সমাজ শুদ্ধ হয়। সেই ব্যাক্তি ও আত্মশুদ্ধির মানসে আমার মনে এই পরিকল্পনার উদয় হয়। তবে আমাদের এই কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। বিভাগের সকল বন্ধুদের পাশাপাশি শিক্ষকগণ সহযোগিতা করেছেন বিধায় কাজটি সম্পন্ন করতে সচেষ্ট হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের অর্থে বিভাগের বর্তমান ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষের মোট ২২ জন দরিদ্র ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদেরকে এককালীন জন প্রতি তিন হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করলাম। ইতোমধ্যে অর্থের একাংশ দিয়ে অসহায় শীতার্তদের মাঝেও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় কলা ভবনের ‘পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ ১৯তম ব্যাচ স্মারক বৃত্তি’ প্রদান কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে কলা অনুষদের ডিন ড. আবদুল বাছির, পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও একুশে পদক প্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সুমন কান্তি বড়ুয়াসহ বিভাগের সকল শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই মহতী অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করে ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, এখানে দু’টি বিষয় সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, নতুন চেতনা ও মৌলিক চিন্তা সৃষ্টি হয়েছে। যা আগামীতে র্যাগ ডে না করে মানবিক ও গঠনমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অভিভূত করবে। এতে শিক্ষার্থীরা তোমাদের ব্যাচকে অনুকরণ করবে। দ্বিতীয়ত, তোমাদের কাজে দায়িত্ববোধের উদাহরণ তৈরি হয়েছে। যা নতুনদের জন্য শিক্ষণীয় হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন