দক্ষিণ আফ্রিকায় গত বছরের নভেম্বরে সংগ্রহ করা নমুনাতেই করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছিল। তবে বাংলাদেশে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছিল, তাতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতিই ছিল বেশি। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এসে সেই চিত্র বদলে গেছে। নতুন বছরে এখন পর্যন্ত যেসব নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে, তার ৯০ দশমিক ২৪ শতাংশেই মিলেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি। বাকি ৯ দশমিক ৭৬ নমুনায় পাওয়া গেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জার্মান সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিআইএসএইডে) ওয়েবসাইটে জমা হওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র উঠে এসেছে। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য বিভিন্ন স্থানে জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এই ওয়েবসাইটে ফল জমা রাখা হয়।
জিআইএসএইডের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সিকোয়েন্সিংয়ে জন্য সংগ্রহ করা ৪১টি নমুনার মাঝে ৩৭টিতেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি নমুনায় পাওয়া গেছে ওমিক্রনেরেই ‘গুপ্ত রূপ’ হিসেবে পরিচিত বিএ.২ লিনেজ। অন্যদিকে, রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম, যশোর ও কুষ্টিয়ার নমুনাতেও ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
জিআইএসএইডসহ বিশ্বের অন্যান্য ডাটাবেজ সাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে এখন পর্যন্ত ৭০টি নমুনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয় গত ১৪ নভেম্বর সংগ্রহ করা একটি নমুনায়। এরপর ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সংগ্রহ করা নমুনাতেও ছিল ওমিক্রনের উপস্থিতি।
সিকোয়েন্সিং তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয় ৪১টি নমুনা। এগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে তার ফলাফল এরই মধ্যে জিআইএসএইডে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানকার তথ্য বলছে, এর মধ্যে যে ৩৭টি নমুনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে চট্টগ্রামে সিকোয়েন্সিং করা দুইটি এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকোয়েন্সিং করা চারটি নমুনায় ছিল বিএ.২ লিনেজ। বাকি ৩৩টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে বিএ.১ লিনেজ শনাক্ত হয়েছে।
এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত জিআইএসএইডে করোনাভাইরানসের চার হাজার ২৮৭টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ফল জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এ চলতি বছরের প্রথম ২১ দিনে জমা হয়েছে ৪৫৯টি নমুনার সিকোয়েন্সিং ফলাফল। এর মধ্যে ৪১টি নমুনা এ বছরের প্রথম ৯ দিনে সংগ্রহ করা। এর মধ্যেই ওই ৩৭টিতে মিলেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।
এদিকে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ১৬ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয় দিনে সংগ্রহ করা ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ হাজার ১২৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ৫৬ জন। আর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২৪ শতাংশের বেশি।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে ভ্যারিয়েন্ট যাই আসুক না কেন, ভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে হলে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। একইসঙ্গে হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে। মাস্ক না পরে যদি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কেউ দুঃশ্চিন্তা করে, তবে লাভ কী! তিনি আরো বলেন, কেউ যদি ভাইরাসকে নিজের কাছে প্রবেশের সুযোগ না দেয়, তাহলে ভাইরাসের পক্ষে কাউকে আক্রান্ত করা সম্ভব না। সে কারণেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। একইসঙ্গে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ভ্যাকসিন একদিকে যেমন সংক্রমণের ঝুঁকি কমাবে, অন্যদিকে সংক্রমিতদের হাসপাতালে যাওয়ার সংখ্যাও কমাবে। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন