শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

অবিলম্বে মাদরাসা-ই-আলিয়ার জমিতে অধিদপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন

সংবাদ সম্মেলনে প্রাক্তন ছাত্র ফোরাম নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫১ পিএম

উপ-মহাদেশের শিক্ষাঙ্গনের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও গৌরবের ধারক বাহক সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার জমিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। মাদরাসার জমিতে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপনের পরিকল্পনা করে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার চক্রান্ত বরদাশত করা হবে না। আজ রোববার দুপুর ১২টায় সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আলিয়া মাদরাসার জতির ওপর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার প্রাক্তন ছাত্র ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রাক্তন ছাত্র ফোরামের সদস্য সচিব মাওলানা মোহাম্মদ সুরুজুজ্জামান। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের আহবায়ক মাওলানা আজিজুল হক মুরাদ, মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাঈল ফারুক, মাওলানা আমিনুল হক, মাওলানা হাবিবুল্লাহ খান, মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইয়ূম, শহিদুল ইসলাম কবির, মাওলানা মোখতার আহমাদ খান, মাহমুদুল হাসান ও জুবায়ের আহমদ। সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন,দীর্ঘ ৬৬ বছর অতিবাহিত হলেও মাদরাসা-ই-আলিয়ার আর কোন অবকাঠামোগত উল্লেখযোগ্য নির্মাণ কাজ পরিলক্ষিত হয়নি। বর্তমানে এখানে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। অথচ শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র জরাজীর্ণ এবং বসবাসের অনুপযোগী একটি হল যা ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করলেও সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা বরাবরই রয়েছে অবহেলিত ও বঞ্চিত। বর্তমানে মাদরাসার ৪ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত উপমাদেশের প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠের আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাস মিলে নাম মাত্র দুটো ভবন ছাড়া পুরো মাঠ এবং জমি দখলের পাঁয়তারা চলছে। সর্বশেষ হলের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত প্রধান হল সুপার এবং সহকারী হল সুপারের বাসভবন ভেঙ্গে সেখানে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। গত ৮ জানুয়ারী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “আলিয়া মাদরাসার ছাত্ররা শুধু শুধু আন্দোলন করছে। মাদরাসা-ই- আলিয়ার ছাত্রাবাসে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর হবে এটা সরকারী সিদ্ধান্ত।” সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার বর্তমান ছাত্ররা বিষয়টি জানতে পেরে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। আমরা মনে করি একটি স্বতন্ত্র ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বিনষ্ট করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ভবন নির্মানের পরিকল্পনার প্রতিবাদ করা ছাত্রদের মৌলিক দায়িত্ব। সাধারণ ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ জানুয়ারী হঠাৎ করেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রদেরকে বিকেল ৪ টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় এবং ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দেয়ায় আবাসন সঙ্কটের ফলে ছাত্ররা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী ও সচিবসহ সরকারের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যে, মাদরাসা ও কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য ভবন আলাদা ও স্বতন্ত্র কোন স্থানে হতে পারে। সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার মত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসের প্রাচীরের ভেতর উক্ত প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা শুধু অমানবিকই নয়, অনৈতিক এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষার এ বিদ্যাপিঠকে অবজ্ঞা, অবহেলা ও তিলেতিলে ধ্বংসের দিক ঠেলে দেয়ার এক গভীর চক্রান্ত ও নীল নকশার অংশ।
বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছে। অথচ সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার ছাত্রাবাসসহ এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিবর্তে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভেতর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন করার পরিকল্পনা সরকারের দ্বিমূখি আচরণ ও মাদরসা শিক্ষাকে অবজ্ঞা করার শামিল। আমলাতান্ত্রিকতার কূটকৌশলে সরকারকে ভুল বার্তা দিয়ে মাদরাসা শিক্ষক, ছাত্র তথা সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনতার মাঝে একটা ভুলবোঝাবুঝির ও দূরত্ব সৃষ্টির অপকৌশল কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নেতৃবৃন্দ বলেন, হটকারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি । সাথে সাথে অবিলম্বে এ ধরনের হটকারী, অযৌক্তিক ও অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় সংগত কারণেই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ বিদ্যাপিঠকে রক্ষা করার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রগণ এদেশের ধর্মপ্রান জনতাকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে কতিপয় দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিসমূহ হচ্ছে, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার নিজস্ব ভূমিতে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন স্থাপন করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে,
সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার নামে ৪ একর জমি দখলমুক্ত করার কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার ছাত্রদের আবাসন সঙ্কট নিরসন কল্পে কমপক্ষে আরো দু’টি হল নির্মাণের কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার বর্তমান ছাত্রদের নামে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহর ও ছাত্রাবাস অবিলম্বে খুলে দিতে হবে। মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার ২৫০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষাকল্পে সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাকে “ঢাকা আলিয়া বিশ^বিদ্যালয়” করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার জমি দখল করে অন্য প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করলে দেশের আপামর জনতার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবে এবং সরকার ও জনতাকে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দেবে, যা সরকারের জন্য সুফল বয়ে আনবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন