পাঁচ মাসের মাথায়ই দেশের উন্নয়নের মাইলফলক পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে এর সুবিধা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পরিবহন সেক্টরে কবে পৌঁছাবে তা অজ্ঞাত। সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে পদ্মা সেতুকে সংযুক্ত করে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন হয়েছে। পদ্মা সেতুর ওপর রেল লাইনও বসছে। এ রেললাইন প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে ফরিদপুর-রাজবাড়ীসহ পশ্চিমাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে। পাশাপাশি ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে খুলনা এবং বেনাপোল হয়ে কোলকাতাকেও সংযুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কিন্তু প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পেতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো জাতীয় মহাসড়কের উন্নয়ন জরুরি হলেও তা কাগুজে প্রকল্পে সীমাবদ্ধ আছে। ফলে আগামী জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের সব জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বহুগুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পৌঁছালেও সেখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে বরিশাল, ৯৩ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর, ১৩৩ কিলোমিটার পশ্চিমে বেনাপোল স্থলবন্দর, ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌঁছার সড়ক-মহাসড়কের কোনটিই মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ। ২০০৫ সালে নির্মিত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে ৬৭ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে গোপালগঞ্জ, ১২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খুলনা মহাসড়কটিও ৩০ ফুট প্রস্থ। ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কটিও মাত্র ২৪ ফুট প্রস্থ। ঢাকার সাথে যশোর ও বেনাপোলকে সংযুক্তকারী গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া থেকে নড়াইল হয়ে যশোরের মহাসড়কটি মাত্র ১৮ ফুট প্রস্থ। বরিশালের লেবুখালী থেকে পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা মহাসড়কটিরও একই অবস্থা।
ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা ৬ লেন মহাসড়ক নির্মাণে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত ভূমি অধিগ্রহণে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন লাভ করে। ২০২০ সালের জুনে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করার কথা থাকলেও তা আগামী জুনেও সম্ভব হবার খুব একটা লক্ষণ নেই। প্রকল্পটির জন্য ইতোপূর্বে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করলেও বরিশাল মহানগরীকে এড়িয়ে বাইপাস নির্মাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বাইপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলেও নকশা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান মহাসড়কটিই ৬ লেনে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হলেও কবে কাজ শুরু হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক অবসরে যাওয়ায় নতুন কাউকে সেখানে নিয়োগও দেয়া হয়নি। তবে সম্ভাব্য প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অর্থায়নের কথা রয়েছে।
অপরদিকে ভাঙ্গা থেকে ভাটিয়াপাড়া হয়ে যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটির বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ডিপিপি প্রণয়নসহ তা সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন কবে নাগাদ সম্ভব হবে তা বলতে পারেননি কেউ।
অপরদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-খুলনা অংশের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ নকশা প্রণয়নের সরকারি সিদ্ধান্ত হলেও তেমন কোন অগ্রগিত নেই। এসব বিষয়ে বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করা হলে সকলেই বিভিন্ন জটিলতার কথা বললেও বিধি মোতাবেক সব কিছু আগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তবে প্রকল্পগুলোর বাস্তব অবকাঠামো নির্মাণ কবে নাগাদ শুরু হবে তা বলতে পারেননি কেউ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন