ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রো রেলের ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো অংশের কাঠামো দৃশ্যমান হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে ৫৮২ ও ৫৮৩ নম্বর পিয়ারের মাঝে শেষ ভায়াডাক্টটি বসানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বিষয়টি জানান।
মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, এই প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ০৮ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণকাজ এগিয়েছে ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকছে ১৬টি স্টেশন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের নয়টি স্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বাকি সাতটি স্টেশনের কাজও বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান। এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ১০ সেট ট্রেন। প্রতি সেট ট্রেনে ছয়টি করে কোচ রয়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন প্রকল্পের কাজে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। ফলে আরও সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে। মেট্রোরেলে যে ১৬টি স্টেশন থাকছে, এর নিচে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে যাত্রীরা সহজে ওঠা-নামা করতে পারবেন না বলে মনে করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এ জন্য স্টেশনের আশপাশে বাড়তি জমি অধিগ্রহণ করে যাত্রীদের চলাচল সহজ করা এবং পাশের ফুটপাত উন্নত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর বাইরে উত্তরাসহ কিছু স্টেশন ঘিরে আয়বর্ধক অবকাঠামো নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নির্মাণ ব্যয়ের মতোই সরকারের এ মেগা প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার খরচও তুলনামূলক বেশি। ফলে কেবল যাত্রী পরিবহন করে মেট্রোরেলের ব্যয় মেটানো কঠিন হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে বিপণিবিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ শুরু করা হয়। ওই অংশে গত বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হয়। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার দ্বিতল রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২৭ জানুয়ারি এ অংশের সর্বশেষ ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ সম্পন্ন হলো। সব ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে ট্রেন।
তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে অধিকাংশ রেল স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। মেট্রোরেল পথে ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩৯ মিনিট। জানুয়ারির মধ্যে পুরো লাইন-৬-এর উড়ালপথ নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। এই লক্ষ্য অর্জন একটা মাইলফলক। এর মাধ্যমে বড় একটা কাজ শেষ হচ্ছে। এখন আস্তে আস্তে মেট্রোরেলের নিচের পথ খুলে দেয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন