শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল পেলো বিশ্বসেরা পুরস্কার

সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোটার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:০৩ পিএম

শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল পেলো বিশ্বসেরা পুরস্কার। শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে অবস্থিত ‘শ্যামনগর ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল’ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক রয়্যাল ইনষ্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) এর বিচারে সেরা স্থাপত্যের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের রিবা পুরস্কারের জন্য শ্যামনগর ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতালের নাম ঘোষণা করে।
গত ১৬ নভেম্বর জার্মানের জেমস-সায়মন গ্যালারী ও ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতুর সাথে সেরা তিন স্থাপত্যের তালিকায় জায়গা করে নেয় সুন্দরবন ঘেঁষা উপকূলপাড়ের এ স্থাপনা।
এর আগে বিশ্বের মোট ১১টি দেশের ১৬টি ব্যতিক্রমী নকশার স্থাপত্যের মধ্য থেকে চুড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়েছিল পরিবর্তীত জয়বায়ু পরিস্থিতির বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলা শ্যামনগর ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল। স্বল্প খরচে নয়নাভিরাম স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ সৃষ্টি করা এ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতির বিষয়াবলী।
উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই একর জমির উপর আধুনিক যাবতীয় সুযোগ সুবিধা রেখে হাসপাতালটি নির্মিত। সুনিপুন নকশা আর অনন্য স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটিয়ে ২০টি ভবনের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনাটি। স্থানীয় প্রযুক্তি ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মিত প্রায় ৪৮ হাজার বর্গফুটের ব্যতিক্রমী নকশার এ স্থাপনা তিন পাশে পানি বেষ্ঠিত।
পরিবেশ বিপর্যয় রোধে গোটা স্থাপনার যাবতীয় বর্জ্য তাৎক্ষনিকভাবে ধ্বংসে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এসটিপি’র ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সীমানা প্রাচীরের পরিবর্তে ভবনসমুহের মধ্যভাগ ও পাশ দিয়ে জলাধার সৃষ্টির মাধ্যমে নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে সেখানে।
জানা যায়, স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ৮০ শয্যার এ হাসপাতালের নকশা তৈরী করেছেন। নকশা প্রস্তুতকালে বাতাসের গতিপথ বিবেচনায় হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো অবস্থান নির্ধারণ করেন তিনি। ইতোপুর্বে বাংলাদেশের এ স্থপতির নকশাকৃত গাইবান্ধার আরবানা ভবনটি আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ডসমুহের সম্মুখভাগে রাখা হয়েছে উন্মুক্ত বিস্তর খালি জায়গা। তীব্র লবণাক্ততার বিষয় বিবেচনায় পলেস্তারা ছাড়া দেয়াল ও ছাদে শুধুমাত্র ইটের গাঁথুনী আর ঢালাইয়ের উপস্থিতি গোটা সৃষ্টিকে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে। সমগ্র স্থাপনাজুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে সামঞ্জস্যমত নানান প্রজাতির গাছ লাগিয়ে মুল নকশার আক্ষরিক বাস্তবায়ন ঘটানো হয়েছে। তিন পাশে ঘিরে থাকা লবণ পানির উপস্থিতির জন্য স্থাপনার মধ্যে লবনাক্ত পানি শোধনে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
স্থাপনার চতুর্পাশ ঘুরে দেখা যায়, মনোরম স্থাপত্য শৈলীর মাধ্যমে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরের ক্ষেত্রে দুই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জায়গা স্বল্পতার কথা বিবেচনায় নিয়ে সীমানা প্রাচীরের পরিবর্তে বিভিন্ন অংশে ১০ ফুট প্রশস্থ জলাধারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে এখানে। হাসপাতালটিতে আউটডোর ও ইনডোর চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি সুপরিসর করিডোরসহ অডিটোরিয়াম, কনভেনশন সেন্টার, ক্যান্টিন আর প্রার্থনা কক্ষেরও উপস্থিতি বিদ্যমান।
সমগ্র স্থাপনার একাধিক অংশে ইট ও কাঁচের সমন্বয়ে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাসহ প্রশস্থ দরজা-জানালার উপস্থিতি- গোটা স্থাপত্যে দৃষ্টি কেড়েছে। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে সুপরিসর করিডোর আর বিস্তর প্রাকৃতিক আলো বাতাসের উপস্থিতি স্থাপত্য শৈলীকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ভবনসমুহের তলদেশ দিয়ে আধুনিক পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি পাশের কল্যানপুর খালের মাধ্যমে মাদার নদীতে নিস্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে।
শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এহসানুল হক রোকন জানান, শ্যামনগর উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ২০১৪ সালে এ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালে কাজ সম্পন্নের পর একই বছরে সেখানে উপকূলীয় জনপদের সেবা প্রত্যাশীদের চিকিৎসা সেবা শুরু হয়। মূল স্থাপনার মধ্যে ৫টি ভবন আবাসিক ও ১৫টি স্বাস্থ্য সেবার কাজে ব্যবহৃত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন সুবিধা এ স্থাপনার বিশেষত্ত¡।

তত্বাবধায়ক শাহিনুর রহমান জানান, ৬ জন চিকিৎসক ও ১২ জন সেবিকাসহ সাহায্যকারী জনবলের মাধ্যমে সেখানে ২৪ ঘন্টা জরুরী বিভাগে সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় প্রতি মাসে দেশের বাইরে থেকে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে এসে রোগীদের চিকিৎসা দেন। স্বল্প খরচে সব ধরণের পরীক্ষা নীরিক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে। এলাকার বাইরের রোগীর হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, স্থাপনাটির চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা খাল। গ্রীষ্মকালের গরম থেকে
বাঁচতে ভবনের ভেরতের খালগুলোতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা
হয়েছে।
এছাড়া, হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরের জন্য রয়েছে দুটি আলাদা জায়গা।
ভবনটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে প্রতিটি ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস
চলাচল করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন