মানুষের কিছু মৌলিক অধিকার আছে, সেগুলো হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকার। সাথে রয়েছে মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার এবং রাজনৈতিক অধিকার। মানুষ মাত্রই ধর্মে বিশ^াসী। ধর্মে বিশ^াস করে না এমন মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। অথচ, আজকের পৃথিবীর বহু দেশে বহু সমাজে বহু মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষদের ধর্মপালনে বাধা দিচ্ছে। ফলে সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ, অসন্তোষ ও ঘৃণা। ফলে সমাজ অস্থির হচ্ছে, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বিশ^ব্যাপী এটা ছড়িয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সবারই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষদের ধর্মীয় বিশ^াসকে সম্মান করতে হবে। তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষা করতে হবে।
পৃথিবীতে আলো, বাতাস, অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। অথচ, পৃথিবীর সকল মানুষের আজো বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। কিছু মানুষ হাজার কোটি টাকা টাকার মালিক, অথচ অনেক মানুষ দিনে আনে দিনে খায়। কেউ বাস করে জাঁকজমক প্রাসাদে, আবার কেউ বাস করে বস্তিতে। কেউ কেউ ফুটপাতেও বসবাস করে। পৃথিবীর সকল মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা সমান হবে না, একথা সত্য। কিন্তু তাই বলে মানুষের মাঝে এত বেশি ব্যবধান কাম্য নয়। এখানে সাম্য এবং মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা ইচ্ছা করলেই পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি। ধনী ব্যক্তিরা প্রত্যেকে যদি একটি পরিবারের জীবনমান উন্নত করার জন্য দায়িত্ব নেয়, তাহলে সময়ের ব্যবধানে সবার জীবনই উন্নত হবে। সমাজের সচ্ছল মানুষের প্রত্যেকেই যদি একজন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়, তাহলে সময়ের ব্যবধানে সমাজের সকল মানুষই শিক্ষিত হবে। ধনী দেশগুলো সমরাস্ত্রের পিছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তার সামান্য অংশও যদি দরিদ্রতা দূরকরণে ব্যয় হতো, তাহলে বহু আগেই পৃথিবী থেকে দরিদ্রতা বিদায় নিত।
পারিবারিক সহিংসতা এবং নারী নির্যাতন আজ বিশ^জুড়েই একটি সামাজিক সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমরা যতই অগ্রসর হই না কেন, নারী নির্যাতন বাড়ছেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশে দেশে, যেখানে নারীরা ভোগ করছে অবাধ স্বাধীনতা, যেখানে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ ছাড়া যৌন সম্পর্ক একটি স্বাভাবিক এবং স্বীকৃত বিষয়, সেখানেও নারীরা আজ ব্যাপকহারে নির্যাতনের শিকার। সেখানেও নারীরা প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে এবং এসব দেশে নারী নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি। এমনকি শিক্ষকের হাতে ছাত্রীরাও আজ নির্যাতিত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, সংসারেই সুখ। স্বামী-স্ত্রী-সন্তান-সন্ততি মিলে বসবাসেই জীবনের স্বার্থকতা এবং এতেই মানুষের জীবন সুখের এবং শান্তির হয়। ঘর সংসার যদি না থাকে তাহলে এত আধুনিক হয়ে এবং ভালবাসার গান গেয়ে লাভ কী? সত্য কথা বলতে কী, এখনো যারা পারিবারিক মূল্যবোধ আকড়ে ধরে আছে, তারাই জীবনে সুখী। আর যারা এসব না করে লাগামহীন জীবনকে বেছে নিয়েছে, তাদের জীবন থেকে সংসার, সুখ এবং শান্তি সবই হারিয়ে গেছে। সুতরাং লাগামহীন জীবন বাদ দিতে হবে, সংযমী হতে হবে এবং পরিমিত জীবন গড়ে তুলতে হবে।
মাদকের ভয়াবহতা সমাজকে আজ গ্রাস করেছে। হাত বাড়ালেই এখন মাদক পাওয়া যায়। ইয়াবা, ফেনসিডিল, আইস এবং হিরোইনের উপস্থিতি সর্বত্র। মাদকের প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওরা এখন কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত হচ্ছে। অথচ, ওরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ, ওরাই তো দেশের কান্ডারী। সুতরাং পিতামাতাকে সতর্ক হতে হবে, সন্তানদের নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হবে। মাদকমুক্ত জীবন গড়ার জন্য উপদেশ দিতে হবে। সন্তান মাদকসেবক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং দুর্নীতিবাজ হোক- এটা কখনো পিতামাতার কাম্য নয়। দুর্ভাগ্য আজ ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হচ্ছে, সন্তানের হাতে পিতামাতা খুন হচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয়ে আজ ছাত্র খুন হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের সত্য ও ন্যায়ের পথেই চলতে হবে।
লেখক : প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক
omar_ctg123@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন