সেন্টমার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার ২৩ বছর অতিবাহিত হলেও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গ্রহন করা কোন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হয়নি। যার ফলে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত পর্যটায়ন। সেন্টমার্টিনে স্থায়ী বাসিন্দা প্রায় ৯ হাজার হলেও প্রতিদিন রাত্রিযাপন করে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
এ কারণে প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য হারাতে বসেছে দ্বীপটি। পরিবেশবাদীদের মতে সেন্টমার্টিন রক্ষায় সুনিদৃষ্ট পরিকল্পনা গ্রহন করে বাস্তবায়ন না করলে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এই দ্বীপটি। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেছেন ভিন্ন কথা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, জীববৈচিত্র রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সরকার। স্বচ্ছ পানি ও চারপাশজুড়ে প্রবাল পাথরবেষ্টিত মনোলোভা পুরো দ্বীপটিই নিসর্গ। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের পার্শ্ববর্তী ৮ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এটির অবস্থান। দেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপ সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্রও।
এখানে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ট বা কড়ি জাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, পাঁচ প্রজাতির ডলফিন, চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্থন্যপায়ী প্রাণী, ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, দুই প্রজাতির বাদুড়সহ নানা প্রজাতির বসবাস ছিল। এসব প্রজাতির অনেকগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন সময়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব জীববৈচিত্র্য। অতিরিক্ত পর্যটক ও বসবাস দ্বীপের ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।
পরিবেশবাদীদের মতে, এই প্রবাল দ্বীপ রক্ষায় বসবাস কমিয়ে আনার পাশাপাশিঅপরিকল্পিত পর্যটায়ন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বর্তমানে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে রিসোর্ট। এই আকর্ষনীয় দ্বীপটি এখন প্রভাবশালীদের বাণিজ্যের স্থানে পরিণত হয়েছে। কনক্রিডের স্থাপনা নির্মাণের উপর বিধি নিষেধ থাকলেও তা বাস্তবায়ন নেই। গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। রাতের আঁধারেই নামানো হয় ইট ও পাথর। পুরো সেন্টামর্টিন জুড়ে কোন কতৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই।
মানুষের চাপে অচল হয়েপড়ছে পুরো দ্বীপ। যে যার মত বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। পর্যটকরা যাতে সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন না করে তা নিরুৎসাহিত করার উপর জোর দিতে হবে। সেখানে যারা স্থায়ী বাসিন্দা রয়েছেন তারাও পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। স্থায়ী বাসিন্দা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু এই দ্বীপের ধারণক্ষমতা কতটুকু সেটাও গবেষণা করে নির্ধারণ করে দিতে হবে।জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শুধু আইন করলে হবে না, সেটার প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। দ্বীপটি রক্ষায় নিয়মিত তদারকি দরকার।
পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'এনভায়রনমেন্ট পিপল' এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, 'সেন্টমার্টিনের বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হয় সেখানে কোন প্রশাসন নেই। সেন্টমার্টিনে ভবন নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও সেখানে প্রকাশ্যে গড়ে উঠছে একের পর এক বাণিজ্যিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ। যত্রতত্র প্লাস্টিকে সয়লাব পুরো দ্বীপ ও সৈকত। হাজার হাজার পর্যটকের আগমনকে ঘিরে সেন্টমার্টিনে আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা। অথচ সেন্টমার্টিন দ্বীপটি নানা স্থাপনা ও দূষণের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া এটি একটি পতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কোন বিকল্প নেই।
অপরদিকে সেন্টমার্টিনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, এই দ্বীপের বাসিন্দারা মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। স্থানীয়দের অন্যত্র সরানোর কোন প্রয়োজন নাই জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করলে আর কোন সমস্যা হবে না। যত্রতত্র ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি নন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন