রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

লেগুনার হেলপার সেজে খুনি ধরলেন এসআই

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৪৩ এএম | আপডেট : ১১:৫২ এএম, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২

রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে পড়ে ছিল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যাক্তির লাশ; লেগুনা চালকের সহকারী সেজে তদন্ত চালিয়ে সেই খুনের রহস্য উদঘাটন করেছেন পুলিশের একজন উপ পরিদর্শক, তার হাতে ধরা পড়েছে হত্যায় জড়িত চার ছিনতাইকারী।

যাত্রাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিলাল আল আজাদ জানান, এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে টানা পাঁচ দিন হেলপারি করে দিনে তিনশ টাকা আয় হয়েছে তার। শেষ পর্যন্ত ২৬ জানুয়ারি সফলতা আসে।

গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, লেগুনা নিয়ে যাত্রী তুলে ছিনতাই করত তারা। ফ্লাইওভারে যার লাশ পাওয়া গিয়েছিল, তার কাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে লেগুনা থেকে ফেলে দিয়েছিল তারা। সেই টাকায় তারা পরে ইয়াবাও কিনেও সেবন করেছে।

এসআই আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে হানিফ ফ্লাইওভারে ওই ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। সেদিন সন্ধ্যায় তার ছেলে মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করে। জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম মহির উদ্দিন, বয়স ৫০। তিনি একজন মাছ বিক্রেতা।

মহির উদ্দিন কীভাবে মারা গেলেন তা জানতে ফ্লাইওভারে সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করেন আজাদ। দেখতে পান, একটি চলন্ত লেগুনা থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই লেগুনার কোনো নম্বর নেই। তবে পাদানির লাল রঙ নজর কাড়ে।

তদন্তের দাযিত্ব পাওয়ার পর ওই লেগুনা খোঁজা শুরু করেন এসআই আজাদ। পরিচয় গোপন করে এক দালালের মাধ্যমে নিজের যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, কোনাবাড়ী, ডেমরা, চিটাগাং রোড আর নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি রুটের একটি লেগুনায় চালকের সহকারীর কাজ নেন। শুরু হয় গোয়েন্দাগিরি।

তার চেষ্টা ছিল চালক ও হেলপারদের সাথে মিশে হত্যার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। সেজন্য পরিবার বাদ দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হেলপারের ছদ্মবেশে তিনি সেই লাল পাদানির লেগুনার সন্ধান চালিয়ে যান।

এক পর্যায়ে আজাদ নিজেই চালক হিসেবে কাজ করার জন্য লেগুনা আছে কি না, সেই খোঁজ করতে শুরু করেন লাইনম্যানদের কাছে। একজন তাকে জানান, ৭২৮ নম্বরের একটি লেগুনা রুটের সিরিয়ালে থাকলেও দুদিন ধরে সেটি দেখা যাচ্ছে না। সেটার খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।

অনুসন্ধান করে আজাদ জানতে পারেন, লেগুনাটি কদমতলীর একটি গ্যারেজে আছে। সেখানে গিয়েই তিনি খুঁজে পান লাল পাদানির সেই বাহন। বিকল অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে ছিল সেটি।

তিনি বলেন, “ওই লেগুনার চালকের নাম ফরহাদ। সে মাদারীপুরে আছে জানতে পেরে চলে যাই সেখানে। কিন্তু সেখানে গিয়েও হতাশ হতে হয়।”

ফরহাদকে খুঁজে বের করা গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তিনি দাবি করেন, ২১ জানুয়ারি দুপুরে তিনি লেগুনা বুঝিয়ে দিয়ে মাদারীপুরে বাড়ি চলে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তার দাবি সঠিক।

এসআই বিলাল আল আজাদ পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ফরহাদ ঢাকা ছাড়ার পর লাল পাদানির ওই লেগুনা চালিয়েছিলেন মঞ্জু নামের এক চালক, তার হেলাপারের নাম আব্দুর রহমান।

পরে আব্দুর রহমানের বাবার ফোন নম্বর পাওয়া যায় জানিয়ের আজাদ বলেন, “তার কাছে গিয়ে আমরা নিজেদের লেগুনার চালক ও মালিক হিসেবে পরিচয় দিই। তাকে বলি, তার ছেলে লেগুনার চাকা আর তেল বিক্রি করে দিয়েছে। পরে তার ছেলের সন্ধান জানতে চাওয়া হয়।

“রহমান এটা করতে পারে তা তার বাবা বিশ্বাস করতে চাননি। তবে তিনি ছেলেকে ডেকে আনেন। রহমানকে বুঝতে না দিয়ে আমরা তাকে ধরে ফেলি এবং মঞ্জুকে কোথায় পাওয়া যাবে জানতে চাই। পরে সে বলে, শান্ত নামের একজনের মাধ্যমে তাকে পাওয়া যাবে।”

পরে শান্তকে নিয়েই অভিযানে যায় পুলিশ। কিন্তু প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে আরেকবার চেষ্টা করে ধরা হয় মঞ্জুকে।

২৬ জানুয়ারি তাদের গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মঞ্জু আর রহমান জানান, সেই রাতে তাদের সাথে রুবেল ও রিপন নামে আরো দুজন ছিল। পরে কদমতলী থেকে তাদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এসআই আজাদ বলেন, ২১ জানুয়ারি রাতে লেগুনা নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল ওই চারজন। মধ্যরাতে একজন যাত্রী তাদের লেগুনায় উঠলেও পরে বিপদ বুঝে চলন্ত লেগুনা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান। পরে ভোরবেলা মহির উদ্দিন ওঠেন ওই লেগুনায়।

আজাদ জানান, তদন্ত করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা তার এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭ সালে ফেরিওয়ালা সেজে তিনি এক হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
jack ali ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৬ এএম says : 0
Excellent Job:::: congratulations. May Allah help you in every aspect of your life. Ameen If our country rule by Qur'an then crime would have been decrease because Allah said that the Muslim's highest nations because they Stop the crime and enjoin the good.
Total Reply(0)
MD Akkas ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ২:০৬ পিএম says : 0
Good job dear brother. Allah bless you and your family.
Total Reply(0)
Monir Alam ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:৪১ পিএম says : 0
গর্ব করার মত ভাই ।
Total Reply(0)
Md. Abdul Matin ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:৪৯ পিএম says : 0
This police officer desrved to be promoted to the upper position. The story resembles the famous serial, "Blind Justice".
Total Reply(0)
Shamim ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৪৬ পিএম says : 0
emon police officers kub e proyjon a deshe dua roilo vair jonno..
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন