দেশজুড়ে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আজ সোমবার। দেশের আলোচিত এই হত্যা মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বাংলাদেশের মানুষ। রায়ে কি শাস্তি হতে পারে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতদের। এ নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতুহল। তবে ভুক্তভোগীসহ সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হোক। এতে ন্যায় বিচার পাবে সিনহার পরিবার এবং নির্যাতিতরা।
টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালে প্রদীপের রোষানলে নির্যাতিত পরিবারের চাওয়া একটাই প্রদীপ ও তার সহযোগীদের যেন ফাঁসি হয়। শুধু তাই নয়, রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই বিশেষ প্রার্থনা ও রোজা রেখে ওই দোয়াই করছে টেকনাফের অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবার।
মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের আশা, প্রধান দুই আসামি প্রদীপ কুমার-লিয়াকতের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক। বাকি আসামিদের সাজা হোক যার যার অপরাধের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে বিচারবহিভূঁত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
দেড় বছরে মাত্র ২৯ কর্মদিবসে আলোচিত এ মামলাটির বিচারকার্য সম্পন্ন করেছেন আদালত। যদিও মামলার রায় নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন দাবি করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে মেজর সিনহাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেটা আদালতের সামনে স্পষ্টভাবে, সন্দেহাতীতভাবে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলেন, প্রদীপ যখন নিশ্চিত হলো যে সিনহা মরে যায়নি তখন বাম পাশের পাঁজোরে বুট জুতা দিয়ে লাথি দিয়েছে। এতে সিনহার তিনটা হাড় ভেঙে গেছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, ঘটনাটি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ। তাই ন্যায়বিচার না পেলে উচ্চ আদালত আপিলে যাবেন তারা। আসামি প্রদীপের পক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডে ওসি প্রদীপ জড়িত ছিলেন না। মামলার এভিডেন্স অনুযায়ী তিনি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ছয় দিন পর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করার পর আদালত তদন্তভার দেয় র্যাবকে।
র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য নেয়া হয়। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
সবশেষে ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় দু’পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। মামলার ১৫ আসামি মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন ও এপিবিএনের ৩ জন। অপর ৩ জন পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন