রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

চক্রের সন্ধানে পুলিশ

চারজন কারাগারে লেগুনার হেলপার সেজে হত্যার রহস্য উদঘাটন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

লেগুনাচালকের সহকারী (হেলপার) সেজে ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও চারজনকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয়ার পর গত বৃহস্পতিবার চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তবে এ চক্রের সাথে জড়িত আরো বেশ কয়েকজনকে খুঁজছে পুলিশ। ফ্লাইওভারের ওপরের অজ্ঞাত লাশটি ছিল মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ফ্লাইওভারের ওপরে নিয়ে এসে তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নেন জড়িতরা। এরপর তাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, খুব অল্পসময়ের মধ্যে ক্লু-লেস এ হত্যাকাণ্ডের আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। শিগগিরই এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হবে। গ্রেফতারকৃতরা গত বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এরপরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এ চক্রের সাথে আরো বেশ কয়েকজন জড়িত থাকার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানায়, গত ২২ জানুয়ারি ভোর পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর অংশ থেকে অচেতন অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন পথচারীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন বিকেলেই খাইরুল ইসলাম নামে এক যুবক যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল আল আজাদ বলেন, তদন্তভার পেয়েই গুলিস্তান ফ্লাইওভার সংলগ্ন বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। সিসিটিভি ফুটেজে একটি লেগুনা শনাক্ত করা গেলেও নম্বর প্লেট দেখা যায়নি। কিন্তু লেগুনায় যাত্রী ওঠার সিঁড়িতে লাল রং ছিল। এটাকেই ক্লু হিসেবে ধরে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করি। টানা চারদিন বেশ কয়েকটি রুটের লেগুনার হেলপারি করি। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে চিটাগাং রোড, নূর কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনাপাড়া হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার, যাত্রাবাড়ী ইলিশ কাউন্টার থেকে পোস্তগোলা, শনির-আখড়া থেকে নিউমার্কেট সবশেষে সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া জালকড়ি রুটে হেলপারি করি। প্রায় ৭০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই।
তিনি বলেন, কখনো কখনো স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাকরি খোঁজার নামে খুঁজতে থাকি সেই লাল রঙের লেগুনাটি। হেলপার সেজে ঘুমিয়ে ছিলাম গাড়ির ভেতরেই। এভাবে অন্তত ৩০০ লেগুনা যাচাই করেছি। লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চালানোর আগ্রহের কথা জানাই অন্য চালক সহকর্মীদের কাছে। লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি না, তা খুঁজতে থাকি। শেষপর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা নষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করে চালানো যাবে। কারণ এর চালক অসুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে গিয়ে পাই সেই লাল পা-দানির লেগুনা।
তিনি আরো বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম রহস্য উদঘাটনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এরপর সেই লেগুনার মালিককে খুঁজে বের করি। তার কাছে জানতে চাই, এর আগে কে চালিয়েছিল এ লেগুনা। ঠিকানা নিয়ে জানতে পারি, ফরহাদ নামে সেই চালক মাদারীপুর শ্বশুড়বাড়িতে রয়েছেন। এরপর ২৪ জানুয়ারি রাতে টিম নিয়ে চলে যাই মাদারীপুর। পেয়েও যাই চালককে। কিন্তু চালক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলতে থাকেন, ২১ জানুয়ারি তিনি লেগুনা জমা দিয়ে চলে এসেছিলেন। প্রযুক্তিগত তদন্তেও তার কথার প্রমাণ মেলে। এতে রহস্য উদঘাটনে হতাশ হয়ে যাই।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ফের লেগুনার হেলপার সেজে যান কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে। জানতে পারেন ২২ জানুয়ারি রাতে লেগুনাটি নিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক চালক। তার হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান। দুইজনের নাম জানলেও তাদের কোনো মোবাইল নম্বর বা বাসার ঠিকানা পাচ্ছিলাম না। গ্যারেজ থেকে বলা হয়, ওই দুইজন বিভিন্ন স্ট্যান্ডে আর বিভিন্ন গ্যারেজে থাকেন। কিন্তু দুই-তিনদিন ধরে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর ফের আমি হেলপার সেজে অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে মঞ্জুর নামের ওই চালককে খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে জানতে পারি, মঞ্জুরের হেলপার রহমান এখন বাসে হেলপারি করেন। শেষপর্যন্ত তাকে আটক করা গেলেও মঞ্জুরকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে, আটকের বিষয়টি গোপন রেখে রহমানকে মূলত চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল এবং তার মাধ্যমে মঞ্জুরকে খোঁজা হচ্ছিল। এরপর সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে কাকতালীয়ভাবেই পাওয়া যায় মঞ্জুরকে। তাদের দুইজনের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় রিপন আর রুবেল নামে আরও দুইজনকে। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে পরিচয় লুকিয়ে করি হেলপারি।
তিনি বলেন, আটককৃতদের তথ্যমতে, ফ্লাইওভারের ওপরের লাশটি ছিল মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ফ্লাইওভারের ওপরে নিয়ে এসে তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নেন আটকরা। এরপর তাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে হত্যা করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন