ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের আর্থিক হিসেব থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি অনুযায়ী অনুষদের নবনির্বাচিত ডিন প্রফেসর সীতেশ চন্দ্র বাছারের নিকট সাবেক ডিন প্রফেসর এস এম আব্দুর রহমান দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার সময় আর্থিক হিসাব থেকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে।
এ ঘটনায় ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমেদকে আহ্বায়ক করে গত ১০ জানুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন প্রফেসর আব্দুর রহমান। অন্যরা হলেন, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. জাকির আহমেদ চৌধুরী (সদস্য) এবং ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী অ্যান্ড ফার্মাকোলজী বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মুহিত (সদস্য সচিব)। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। কিন্তু প্রায় ৩ সপ্তাহ পার হতে চললেও রিপোর্টের দেখা নেই।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক শাখায় ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (নং ০২০০০০০৯৪৭৬৭৪) ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (নং ২০০০০৯৩৭৯৫৬৫) নামে দুটি হিসাব থেকে গত দুই বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, যার কোন তথ্য অনুষদের নথিতে নেই। আর্থিক লেনদেনের তথ্য বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে দেখা যায়, অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত আনুমানিক ২০টি চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে এ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে ঠিক কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তার সঠিক হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি তা নিরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ২০ লাখ টাকার হিসাব মিলছে না।
তবে প্রফেসর আব্দুর রহমানের ভাষ্য মতে, তা প্রায় ১১ লাখ টাকা। যা তার সই নকল করে উত্তোলন করা হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি ধমাচাপা দিতে প্রফেসর আব্দুর রহমান নিজে বাদি হয়ে বা তার অফিস বাদি হয়ে এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা করেনি বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য তার সই জালিয়াতির অভিযোগ এনে তড়িঘড়ি করে তার অনুগত শিক্ষকদের দিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন সাবেক এই ডিন।
যার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তিনিই কীভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করেন- প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অনুষদের তহবিল ও ব্যাংক হিসাবের চেক বই ডিনের তত্ত্বাবধানে থাকে আর ডিনের একক স্বাক্ষরেই উক্ত হিসাব থেকে টাকা তোলা হয়। তাই অভিযোগটা তো তার বিরুদ্ধেই আসবে।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন এটা আইনসম্মত কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, আসলে সরাসরি কেউ ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেননি। অর্থ তসরূফের বিষয়টা ওনি নিজেই ফাইন্ড আউট (আবিষ্কার) করেন। আর নিজেই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা এখন অফিসে যেতে পারছি না তাই একটু বিলম্ব হচ্ছে, তবে আশা করছি চলতি সপ্তাহের মধ্যে আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা আসলে তেমন কোনো ফাইন্ডিংস (তথ্য) বের করতে পারিনি, কে রেসপন্সিবল (দায়ি) এবং কীভাবে এটা হলো। কারণ প্রফেসর আব্দুর রহমানের ভাষ্য মতে তার সই জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আমরা এটাই ফাইন্ড আউট করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সই জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ করতে হলে আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্টের সাহায্য লাগবে। এই স্বাক্ষরটা আসলে কার এটা আমাদের পক্ষে বের করা কঠিন। ফৌজদারি মামলা হলে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এ বিষয়গুলো বের হয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রফেসর আব্দুর রহমান বলেন, এখানে আসলে আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমার অফিসের টাকা আত্মসাত হয়েছে এজন্য আমি নিজেই তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এখানে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কে করবে! আমার অফিসের কেউ এ টাকাটা উত্তোলন করে থাকলে এবং সেটা খুঁজে বের করার জন্যই তো তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এর আগেও অফিসের দুই স্টাফ অর্থ তসরূফের ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে জানান আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, হতে পারে তারাই এ কাজটা করেছে। তদন্ত বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটা অংশ হতে পারে। তা না হলে এতদিনে কেন তারা তদন্তের রিপোর্ট দিচ্ছে না! আবার তিনি নিজেই বলেন, তদন্ত কমিটির একজন সদস্য করোনায় আক্তান্ত হওয়ায় এতদিনে হয়তো হয়নি। তবে খুব শিগগিরই তারা তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন