শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জানুয়ারিতে টিকা প্রয়োগের রেকর্ড

ওমিক্রনের সংক্রমণে বেড়েছে আগ্রহ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণের হার তলানিতে নেমে এসেছিল। কিন্তু করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বিভিন্ন নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমে মাঝে কিছুটা সময় মানুষের মাঝে আগ্রহের হার কম দেখা গেলেও জানুয়ারি মাসে রেকর্ড পরিমাণ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। শুধুমাত্র এই মাসে দেশে প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার মিলিয়ে তিন কোটি ৫৮ লাখ ৪১ হাজার ৮১৫ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টার (এমআইএস) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, দেশে ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি মাসে বেড়েছে টিকা গ্রহণের জন্য আগ্রহীদের নিবন্ধন সংখ্যা। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে টিকা নিতে আগ্রহীরা নিবন্ধন করছে সুরক্ষা। একইসঙ্গে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন নেই তাদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় টিকা দেওয়া হচ্ছে সরকারিভাবে। শুধুমাত্র তাই নয়, টিকা গ্রহণেও অন্য সকল মাসের পরিসংখ্যানকে ছাপিয়ে গেছে জানুয়ারি। আর তাই নিবন্ধনের চাইতেও বেশি টিকা গ্রহীতার সংখ্যা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরে ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। অর্থাৎ ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার মানুষকে টিকা দিতে হবে এই সময়ে। এর মাঝে এখন পর্যন্ত ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৬০ জন সুরক্ষা প্লাটফর্মে নিবন্ধন করেছেন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ইতোমধ্যে ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯১ হাজার ৮৪২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছে। ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের আওতায় আনতে আরও ২ কোটি ১৭ লাখ ২৯ হাজার ১৫৮ জনকে টিকা দিতে হবে। দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ২৪ কোটি ৮৯ লাখ ডোজ।

জানুয়ারিতে টিকা প্রয়োগ পরিসংখ্যান : করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় নভেম্বর মাসের নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে। পরবর্তীতে ডিসেম্বর মাসের নমুনায়ও পাওয়া যায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। জানুয়ারি মাসে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে। এ সময়েই মূলত দেশে টিকা প্রয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় সরকার। আগের মাসগুলোতে কেন্দ্রে টিকা গ্রহণের জন্য আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কমতে থাকলেও জানুয়ারি মাসে সরকার বিভিন্ন বয়স ক্যাটাগরিতে টিকা প্রয়োগে গুরুত্ব দেয়। এর মাঝে অন্যতম হলো ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগ।

এমআইএস বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে জানুয়ারি মাসে সুরক্ষা প্লাটফর্মে টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছে ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৭ জন। এই মাসে টিকা গ্রহণ করেছেন তিন কোটি ৫৮ লাখ ৪১ হাজার ৮১৫ জন। অর্থাৎ এই মাসে ২৭ কার্যদিবসে গড়ে ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৫ জনকে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে টিকা গ্রহণ করে এক কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৯ জন। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ডিসেম্বরের চাইতে দুই দশমিক ৯৭২ শতাংশ বেশি টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মাঝে প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছে দুই কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৮ জন। এই সংখ্যার মধ্যে আছে এক কোটি তিন লাখ ৮৬ হাজার ১৭০ জন শিক্ষার্থী যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ এক কোটি ৩৬ লাখ তিন হাজার ৩৫৮ জন টিকা পেয়েছে যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি। জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন এক কোটি তিন লাখ ১৭ হাজার ৫৯৯ জন। এর মাঝে ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৪৮ জন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সসীমার মাঝে।

জানুয়ারি মাসে দেশে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৮ জন বুস্টার ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন। প্রথমদিকে সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে বয়সসীমায় পরিবর্তন আনা হয়। ধাপে ধাপে দুই দফায় বয়স কমিয়ে ৫০ বছর ও ৪০ বছর করা হয়। ৩০ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান ৪০ বছরের বেশি বয়সীরাও টিকার বুস্টার ডোজ পাবেন।

টিকা প্রয়োগে রেকর্ড : দেশে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে টিকা প্রয়োগ শুরু করা হয়। সেই মাসে টিকা প্রয়োগ করা হয় ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৮ জনকে। পরবর্তীতে মার্চ মাসে ২২ লাখ ৫৯ হাজার ৯০৬ জনকে টিকা প্রয়োগ করা হয়। তবে এর পরে ভারতে সংক্রমণ বাড়তে থাকার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমে। সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে না পারায় এপ্রিল মাসে মাত্র চার লাখ ৪৯ হাজার ২২৫ জনকে টিকা প্রয়োগ করা হয়।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, সরকার সবাইকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। মূলত জানুয়ারি মাসে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে তা আমাদের সক্ষমতারই প্রমাণ দেয়। আমরা আরও দ্রুত নতুন পরিকল্পনা নিয়ে দেশের সকল জনগোষ্ঠীর মাঝে টিকা পৌছাতে চাই। আমরা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগ করেছি। যারা এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে নি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে গেছে তাদের মতন ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের টিকার আওতায় নিয়ে আসবো। পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি কোনো পরামর্শ দেয় তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাবো। আমাদের সকল ধরণের প্রস্তুতি আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন