বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেসরকারি ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার চাপে দিশেহারা কর্মীরা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:২৫ এএম

বাংলাদেশের বেসরকারি একটি ব্যাংক এই বছর ১৮০ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আমানত সংগ্রহের সেই দায়িত্ব গিয়ে পড়েছে ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের ওপর।

ব্যাংকের একজন নারী কর্মী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ''আমাদের ব্রাঞ্চে কয়েক কোটি টাকার টার্গেট পড়েছে। আমার ভাগে পড়েছে ৪০ লাখ টাকার আমানত সংগ্রহ করার। দেখেন, এখন তো মানুষ ব্যাংকে টাকা জমিয়ে রাখতে চায় না, সঞ্চয়পত্র কিনে রাখে। আর এতো ব্যাংক, ব্যবসায়ীরাও কয়টা ব্যাংকে যাবে? ব্যাংকের কাজ করি আর সারাক্ষণ চিন্তা করতে থাকি, কোথায় কার কাছ থেকে কিছু টাকা ব্যাংকে আনা যায়।''

তিনি জানান, চাকরির প্রথম দিকে আত্মীয়স্বজনদের ধরে ব্যাংকে আমানত সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এখন আর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের এমন কেউ নেই যে, নতুন করে টাকা জমা রাখতে পারে। আবার যারা আগে বেশি সুদের আশায় ব্যাংকে টাকা রাখতেন, তারাও সেই টাকা তুলে অন্যত্র বিনিয়োগ করেছেন।

কিন্তু ব্যাংকের বেঁধে দেয়া লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলে তার বছর শেষের মূল্যায়নে প্রভাব ফেলবে, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে চাকরির ওপরেও।

কেন আমানত সংগ্রহের এই চাপ?

ব্যাংক শুধু যে আমানত সংগ্রহের জন্যই তার কর্মীদের চাপ বা লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়, তা নয়। ঋণ দেয়া, কার্ড বিক্রি বা অন্যান্য সেবার বিক্রির জন্যও লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ব্যাংকের ব্যবসাই তো হল আমানত সংগ্রহ করে সেটাকে ঋণ হিসাবে বিতরণ করে মুনাফা করা। আর সেটা করার জন্যই ব্যাংককে বিভিন্ন সময় লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করতে হয়। আর ব্যাংকের কর্মীর হিসাবে সেই লক্ষ্য পূরণের দায়িত্ব তো কর্মীদের ওপরেই পড়বে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ''প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিবছর একটি লক্ষ্য ঠিক করে দেয়া হয় যে, এই পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করতে হবে বা এই পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে হবে। কোন কোন ব্যাংক এটা শাখা প্রতি নির্ধারণ করে দেয়। তখন শাখার ম্যানেজার তারা স্টাফদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেন। আবার কোন কোন ব্যাংক প্রত্যেক কর্মীর জন্য আলাদা আলাদা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়।''

তিনি জানান, তিনি কয়েকটি ব্যাংকে চাকরি করেছেন। সব ব্যাংকেই আমানত সংগ্রহের জন্য তাকে চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

''প্রথম দিকে ভাবতাম, কোথায় কার কাছ থেকে টাকা আনতে পারবো। ব্যাংকে যেই আসতো, সবাইকে ডিপোজিট করার জন্য অনুরোধ করতাম। কিন্তু মানুষ তো সচেতন, তারা যাচাই-বাছাই করেই টাকা রাখে। একবার তো কিছু টাকার জন্য লক্ষ্য পূরণ হচ্ছিল না, আমার তখন রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল,'' তিনি বলছেন।

মোঃ নুরুল আমিন বলছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যাংকগুলো মুনাফার জন্যই কাজ করে। আবার পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি হলে তাকে লভ্যাংশও দিতে হয়। ফলে বোর্ড অব ডিরেক্টরস থেকে এমডিদের ওপরেও চাপ থাকে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তখন আমানত আর ঋণের মধ্যে মুনাফা করার চেষ্টা করেন। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পড়ে ব্যাংকের কর্মীদের ওপর।

''আমানতকে আমরা বলি ব্লাড ফ্লো অব দ্যা ব্যাংক। সেই আমানত সংগ্রহের জন্য ব্যাংককে টার্গেট ঠিক করতে হয়। ম্যানেজমেন্ট তখন চায়, এই লক্ষ্য পূরণের ব্যাংকের প্রত্যেক এমপ্লয়ি জড়িত হোক। যেহেতু ব্যাংক টার্গেটে কাজ করে, তখন সেটা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়। সেটি ব্রাঞ্চ বা এলাকা ভেদে কর্মীদের ওপর ভাগ করে দেয়া হয়,'' বলছেন মি. আমিন।

সাধারণত শহর বা ব্যবসায়িক এলাকাগুলোয় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বড় থাকে। আবার গ্রামীণ বা ছোট এলাকাগুলোয় এর আকার থাকে কিছুটা কম।

বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে নিয়ে আসার কারণে আমানতের সুদহারও কমে গেছে। বর্তমানে আমানত ও ঋণের হার ৬-৯। ফলে ঋণের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ থাকলেও বেসরকারি ব্যাংকে আমানত রাখতে সাধারণ গ্রাহকরা আগ্রহী হন না।

আমানত সংগ্রহ করতে না পারলে কী প্রভাব পড়ে?

সরকারি ব্যাংকগুলোয় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও সেটা পূরণ না হলে কর্মীদের বেতন-ভাতা বা সুযোগ-সুবিধার ওপরে কোন প্রভাব পড়ে না।

কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকের বেলায় এই চিত্র একেবারে উল্টো।

সেখানে কর্মীদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করা হয় 'কেপিআই' বা 'কি পারফর্মেন্স ইনডেক্স' নামের একটি পদ্ধতিতে।

ব্যাংকের কর্মীরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে কর্মী লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছেন কিনা, কতটা ঋণ বিতরণ করতে পেরেছেন, বাড়তি কোন অবদান রেখেছেন কিনা ইত্যাদি বিষয় বিচার করা হয়।

এর ওপর ভিত্তি করে বছর শেষে তার প্রমোশন, বোনাস, বেতন বৃদ্ধি, পোস্টিং ইত্যাদি নির্ভর করে।

''কেউ যদি টার্গেট পূরণ করতে না পারে, বছর শেষে হয়তো তার ইনক্রিমেন্ট হবে না বা বোনাস কম পেলেন। অনেক সময় দূরে বা গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন শাখা বা বিভাগে বদলি করে দেয়া হয়,'' বলছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।

আমানত সংগ্রহের এই চ্যালেঞ্জের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো।

এখনো গ্রাহকদের আস্থা পুরোপুরি অর্জন করতে না পারায় এসব ব্যাংকে বেশিরভাগ গ্রাহক আমানত রাখতে চান না। তার ওপর এখন ব্যাংকের আমানতে সুদের হারও অনেক কম। ফলে ব্যাংকের কর্মীদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে বেশি পড়তে হয়। বিবিসি বাংলা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Abdus Sattar ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:২৬ পিএম says : 0
আমার পরিচিত একজনকে ২০২২সালে ১৭৫ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করতে লক্ষ্য মাত্রা দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশের সকল প্রাইভেট ব্যাংকের ব্যাংকারদের এভাবে লক্ষমাত্রা দিলে পৃথিবীর সব টাকা প্রাইভেট ব্যাংকে এদেশের প্রাইভেট ব্যাংকে জমা রাখতে হবে!
Total Reply(0)
Humayun Kabir ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:২৬ পিএম says : 0
ব্যাংকে মানুষ টাকা রাখবে সেই টাকায় ব্যাংক ব্যবসা করবে বছর শেষে লেনদেনের প্রতি লাখে 150 টাকা হারে গ্রাহককে আবগারি শুল্ক দিতে হবে এটাইতো নিয়ম !
Total Reply(0)
Golam Azam ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:২৭ পিএম says : 0
৩০% ভ্যাট কাটবেন।
Total Reply(0)
মোঃ সাইদুর রহমান ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৪৮ পিএম says : 0
আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী, আল্লাহ পাক এর কাছে শুকরিয়া যে আমি ব্যাংকিং সেক্টর থেকে আসতে পেরেছি। এ সেক্টর মানুষ কে হীনমন্যতার দিকে নিয়ে যায় সারাক্ষণ টার্গেট। এটা কোন চাকরির পর্যায়েই পরে না তার পর ও প্রয়োজনেন জন্য করতে হয়। আমাকে তো আর বসিয়ে বসিয়ে ব্যাংক বেতন দিবে না!!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন