শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দুশ্চিন্তায় ফুলচাষিরা

সাভারে গোলাপ বাগানে ছত্রাকের হানা

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

ছত্রাক ঘটিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে সাভারের গোলাপ গ্রামের বিঘার পর বিঘা ফুলক্ষেত। ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। ফুলচাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিসকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাই এ বছরে তারা দিশাহারা। তারা মনে করছেন, যে ভাবে ফুলগাছে রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে গোলাপ গ্রামের নামই আর থাকবে না। তবে দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি আমরা যেভাবে বলছি গোলাপ চাষিরা তা মানছে না। তাই ফুল চাষে রোগের সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ গ্রামের ছোট কালিয়াকৈর, বাঘ্নীবাড়ী, মইস্তাপাড়া, কাকাবর, সামাইর, সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, আকরাইন, বনগাঁসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষেত দেখা গেছে, গাছের শাখা-প্রশাখার ডাল প্রথমে লালচে ও পরে কালো হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও গাছের পুরো অংশই কালো রং ধারণ করেছে। ফুলের কলি আসলেও ফুল না ফুটতেই ঝরে যাচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময়ে গোলাপে ভর্তি ছিল বাগান। আর এ বছর কিছুই নেই।
শ্যামপুর গ্রামের গোলাপ চাষি আব্দুল খালেক জানান, এক লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ করে ১২০ শতাংশ জমিতে চায়না গোলাপের চাষ করেছেন। কিন্তু ছত্রাকজনিত রোগে সব গাছ মরে যাচ্ছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি, এবং ২৬ মার্চে ফুলের ভালো দামও পাওয়ার আশায় ছিলাম অথচ অজ্ঞাত ছত্রাক রোগে সব শেষ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে কৃষি অফিস থেকেও এই রোগের প্রতিকারের বিষয়ে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
বাঘ্নিবাড়ী এলাকার ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছি, কিন্তু সর্বশেষ পুরো ক্ষেতের ফুল ঝড়ে পরেছে। ফুলে ছত্রাক লাগার পর আমরা প্রথমে উপজেলা কৃষি অফিসের শরণাপন্ন হলে তারা আমাদের তেমন সহযোগিতা করেনি। অজ্ঞাত এ রোগের হাত থেকে নিজেদের বাগান রক্ষার্থে তাদের দীর্ঘ দিনের কোনো অভিজ্ঞতাই কাজে আসছে না। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক ছিটিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় গোলাপের উৎপাদন কমেছে ব্যাপক হারে। এতদিন গোলাপ চাষ করে ভালো মুনাফা অর্জন হলেও এখন গাছগুলো মরে যাওয়ায় বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে চাষিরা। তিনি গোলাপ চাষিদের এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সহজ শর্তে সরকারের কাছে ঋণ দাবি করছেন।
সাভার কুমারখোদা ফুলচাষি বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় ফুলচাষি আমজাদ হোসেন জানান, ১৯৮৩ সাল থেকে সাভারের গোলাপের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে এক হাজারের বেশি ফুল চাষি রয়েছে। এরমধ্যে তাদের রেজিষ্ট্রার্ড চাষি সাড়ে ছয়শ’র বেশি। এই ছত্রাকের কারণে ফুল ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় প্রত্যেক চাষির পরিবারে হা হা কার শুরু হয়েছে। ক্ষেত করতে গিয়ে প্রত্যেক কৃষক ঋণগ্রস্থ্য হয়ে পরেছে।
গোলাপ গ্রামে গিয়ে দেখা হয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান ও মোজাম্মেল হকের সাথে। তারা চাষিদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিতে এসেছেন। তারা বলেন, সাভারের প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে গোলাপ, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে ৪০ হেক্টর জমির গোলাপ গাছ ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়েছে। আরও ২০ হেক্টর জমির গাছ আক্রান্তের পথে।
তারা আরও বলেন, বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষা ও গবেষণার পর ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে, কোনো ঔষধ কাজ করছে না। তাছাড়া চাষিদের আমরা যে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছি তারা তা মানছে না।
আমরা চাষিদের বলেছি, ক্ষেতে প্লাবন সেচ বন্ধ করে দিতে হবে। পানি যাওয়ার জন্য গাছের দুই সাড়ির মাঝে ক্যানেল করে দিতে হবে যাতে পানি আটকে না থাকে। ছত্রাকের জন্য রেডোমিল গোল্ড ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গেড়ায় ঢেলে দিতে হবে। কিন্তু পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে ভেবে চাষিরা গাছে বেশি পানি দিচ্ছে ফলে গোড়া পচে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলছেন, অতিমাত্রায় শীতের কারণে এবার বাগানে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। একটু গরম পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন