কমন কোল্ড এবং ফ্লু সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে। সাধারণ জণগণের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা না থাকর কারণে তাদের বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। আসুন আমরা সহজ ভাষায় বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করি। কমন কোল্ড এবং ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) দুটি রোগই উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমণ। অনকেইে ভেবে থাকেন কমন কোল্ড এবং ফ্লু দুটি রোগই একই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু আসলে একই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয় না। ফ্লু এর লক্ষন গুলো সচরাচর ঠান্ডা বা কমন কোল্ডের লক্ষণ থেকে খারাপ থাকে। ফ্লু এর কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে নিউমোনিয়া, ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ফ্লু এর চিকিৎসায় এন্টিভাইরাল ঔষধ রয়েছে যা অসুখ কমাতে সাহায্য করে থাকে। আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রহণ করলে ভালো কাজ করে। ফ্লু এর লক্ষন মাঝে মাঝে খুব মারাত্বক হয়ে থাকে। লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, শরীর ব্যথা, অতিরিক্ত দুর্বলতা এবং শুষ্ক কাশি। দুই থেকে পাচ দিনের মধ্যে ফ্লু এর লক্ষণগুলোর উন্নতি দেখা যায়। কমন কোল্ড বা ঠান্ডা-এর লক্ষণ সাধারণত ছোট হয়ে থাকে। প্রায়ই সোর থ্রোট দিয়ে শুরু হয় এবং নাক দিয়ে মিউকাস যেতে পারে। অধিকাংশ লক্ষণ ঘাড়ের উপরে থাকে। ঠান্ডার লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে আসে এবং এক সপ্তাহ থাকে।
কমন কোল্ডের ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর দেখা যায় না। যদি জ্বর থাকে তাহলে খুব কম মাত্রার জ্বর থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে কমন কোল্ডের লক্ষণ হিসাবে জ্বর বেশী দেখা যায়। অন্যদিকে ফ্লু এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ রোগীরা ১০০-১০২ ডিগ্রি জ্বর অনুভব করে থাকে। আবার এর চেয়েও বেশী তাপমাত্রা দেখা যেতে পারে। ফ্লু ভাইরাসের লক্ষণ হিসাবে সবার জ্বর দেখা যায় না। ফ্লু এর লক্ষণগুলো এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ থাকতে পারে। মাথা ব্যথা কমন কোল্ড এবং ফ্লু উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে। যেহেতু কমন কোল্ড এবং ফ্লু উভয়ই উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমণ তাই উভয়ক্ষেত্রেই লক্ষণ হিসাবে কফ বা কাশি থাকাটাই স্বাভাবিক। কমন কোল্ডের লক্ষণ হিসাবে প্রথমে কফ বা কাশি প্রডাক্টিভ হবে কিন্তু পরে শুকনো কাশি হয়ে যায়। ফ্লু এর ক্ষেত্রে কফ শুকনো হয়ে থাকে এবং বেশী হয়ে থাকে। ফ্লু এর জটিলতা হিসাবে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে, যা রোগীকে অসুস্থ করে দেয় এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হলে অতি দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করেত হবে। অন্যথায় যে কোনো ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে। অতএব, কমন কোল্ড এবং ফ্লু এর লক্ষণ সম্পর্কে সাধারণ জণগণের সচেতন হতে হবে। ভয় পাবেন না। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ দুটি বিষয় জানার ফলে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সবার ধারণা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং একটি থেকে আরেকটি আলাদা করতে পারবেন। তবে যে কোনো অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করবেন না।
আপনি চাইলে কমন কোল্ড প্রতিরোধ করতে পারেন। সর্দি, কফ, সোর থ্রোট, হাঁচি কমন কোল্ডের অন্তর্ভূক্ত। ২০০ এর উপর ভাইরাস কমন কোল্ডের জন্য দায়ী। সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। হাত দিয়ে মুখে বা চোখে হাত দেওয়া বা স্পর্শ করা যাবে না। ধুমপান থেকে বিরত থাকুন। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে ডিসপোজেবল পাত্র ব্যবহার করেত হবে। ঘরে ব্যবহার্য যেমন ব্যাসিন পরিষ্কার রাখুন। বাচ্চাদের খেলনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। পেপার টাওয়েল ব্যবহার করুন। মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন।
একটি কথা সবার জানা প্রয়োজন যে, বর্তমানে অমিক্রণ জাতীয় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আমাদের বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। অমিক্রণ জাতীয় করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে সাধারণত উপরের শ্বাসনালীতে অবস্থান করে ও তা আক্রান্ত করছে। করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ধরণের মতো অমিক্রণ ফুসফুসকে বেশী মাত্রায় আক্রমণ করে না। তাই খুব দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার পরেও অমিক্রণ প্রজাতির করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ করোনা ভাইরাসের পূর্ববর্তী ধরণগুলোর চেয়ে কম তীব্র সমস্যার সৃষ্টি করছে। তারপরও প্রতিদিন অনেক রুগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, অনেকে মারাও যাচ্ছে।
গবেষনায় দেখা গেছে, অমিক্রণ প্রজাতির করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে নাক-গলা এবং শ্বাসনালীতে অবস্থান করে। শরীরে প্রবেশের পর ফুসফুসের দিকে অমিক্রণ প্রজাতির করোনা ভাইরাস কম অগ্রসর হয়। অমিক্রণ সংক্রমণে ফুসফুসের কম ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। অমিক্রণ জাতীয় করোনা ভাইরাসের ফুসফুসে অবস্থান ডেল্টা ধরণের করোনা ভাইরাসের তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগ। তার অর্থ হলো, অমিক্রণ জাতীয় করোনা ভাইরাস উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমণ ছাড়াও ফুসফুসে যেতেও পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধিতে আক্রান্ত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অর্থাৎ বয়স্ক তাদের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি মেনে চলা উচিত। মাস্ক পরুন, ভিড় এড়িয়ে চলুন।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন