দেশে করোনা মহামারীর মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তদের সেবা কার্যক্রম চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা ভাইরাসটির প্রাদূর্ভাবে রোগীদের হাসপাতালে আসতে বিলম্বিত হওয়া এবং প্রান্তিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এছাড়া রাজধানীকেন্দ্রিক হাসপাতালে শয্যা সংকট এবং ভর্তির পূর্বে করোনা টেষ্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় রেডিও ও কেমোথেরাপির শিডিউল বাতিল উল্লেখ্যযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে করোনা মহামারি ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
এমন প্রেক্ষপাটে ‘ক্লোজ দ্যা কেয়ার গ্যাপ অর্থাৎ ‘বৈষম্য কমাই ক্যান্সার সেবায়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে সারাবিশ্বের মত আজ দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০২২। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর ফর ক্যান্সার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) এ বছরসহ আগামি তিন বছরের জন্য এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে গতকাল কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার, বাংলাদেশ ক্যান্সার সচেনতা ফোরাম ও মার্চ ফর মাদার মোর্চা ক্যান্সার সচেতনতা নিয়ে ভার্চ্যুয়াল ও স্বশরীরে একটি হাইব্রিড আলোচনা সভা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটউিট ও হাসপাতালের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় হাতিরঝিলে সচেতনতামূলক নৌ-র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের একাধিক চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ বাড়ায় ৫০ শয্যা থেকে ক্রমান্বয়ে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। সারাদেশে ক্যান্সারের সমন্বিত চিকিৎসায় ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালটিতে সবসময় রোগী চাপ থাকে। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় এ ক্যান্সার হাসপাতালে করোনা ইউনিট ও করোনা পরীক্ষা সুযোগ নেই। এতে সেবা নিতে এসে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। করোনা সনদের জন্য পরীক্ষা ব্যবস্থা করতে সময় লাগছে। ফলে দুরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা দিনের পর দিন হাসপাতালেরর বারান্দা ও সিড়ির পাশে অবস্থান করতে হচ্ছে।
ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, রোগীদের করোনা হওয়ায় ক্যান্সার চিকিৎসা শেষ না করেই ৩০ শতাংশ রোগী বাড়ি ফিরছেন। চিকিৎসা শেষ না করা রোগীদের ৭৫ শতাংশই গত এক বছরের মধ্যে মারা গেছেন বলে ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের করা একটি গবেষণাও উঠে আসছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গেøাবোক্যানের সর্বশেষ হিসাব বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছে। এ ছাড়া দেশে প্রতিবছর ১ থেকে দেড় লাখ মানুষের নতুন করে ক্যান্সার শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিবছর ১ লাখ ৯ হাজার রোগী মারা যায়। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনা মধ্যে ২০ থেকে ৩০ গুণ বেশি
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা সরকারি-বেসরকারি মিলে ২৬টি প্রতিষ্ঠান কাজ থাকলেও সমন্বিত ক্যান্সার চিকিৎসা সুযোগ রয়েছে মাত্র জাতয়ি ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে। এই হাসপাতালে বছরে ৩০ হাজার রোগী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার রোগী সেবা ২৫টা কেন্দ্রে সেবা নিচ্ছে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিউিটের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় সংকট নিরসনে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ গড়ে তুলতে হবে। ক্যান্সারের চিকিৎসা এককভাবে করা যায় না। উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে মাল্টিডিসিপ্লিনারি এ্যাপ্রোচ বাস্তবায়ন করতে হবে। দিন দিন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্যান্সার মোকাবিলা করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন