তদন্তের দায়িত্বে র্যাব : ৮৫ বারেও জমা পড়েনি প্রতিবেদন
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের ঘটনার দশ বছরেও তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় হতাশ তাদের পরিবারগুলো। নৃশংস এ জোড়া খুনের প্রায় দশ বছর হলেও কেউ জানে না কারা খুন করেছে কিংবা কেন করেছে। দশ বছরে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আদালত ৮৫ বার সময় দিয়েছেন। তবে এ দীর্ঘ সময়েও হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি র্যাব বা অতীতের কোন তদন্তকারী সংস্থা।
এরইমধ্যে সাত বার বদল করা হয়েছে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১১ ফেব্রæয়ারি। সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি এই সাংবাদিক দম্পতিকে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় তাদের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি। ঘটনার সময় ঐ বাসায় থাকা তাদের একমাত্র শিশু সন্তান মাহি সরওয়ার মেঘ বেঁচে যায়। দশ বছর আগে হত্যাকান্ডের পর পরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ইতোমধ্যে পার হয়েছে অনেক ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘ দশ বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্তদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়নি এটা অবশ্যই দুঃখজনক। নির্মম ওই জোড়া খুনের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখনও খুনীরা গ্রেফতার হয়নি কেন? আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রæত খুনীদের আইনের আওতায় আনা হউক। সাংবাদিক সমাজসহ পুরো জাতি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার চায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান বলেন, তাদের মাঝে একদিকে রয়েছে শূন্যতা, অন্যদিকে হতাশা। সাগর-রুনি›র শিশু সন্তান মেঘ বড় হচ্ছে। এখন সে বুঝতে শিখছে, নির্মমভাবে বাবা-মা হারানোর ঘটনা তার ওপর প্রভাব ফেলছে। এ নিয়েই আমরা পরিবারের সদস্যরা এখন শঙ্কিত।
মামলা বিষয়ে সাগর সরওয়ারের এক আত্মীয় বলেন, গত দশ বছর হয়ে গেলো, এখনো হত্যার বিচার পেলাম না। কেন তাদের খুন করা হলো সেটাও জানতে পারলাম না। আদৌ মামলার তদন্ত কি শেষ হবে? ইচ্ছাকৃতভাবে বা অদৃশ্য কোনো কারণে না রাজনৈতিক কারণে মামলাটির তদন্ত শেষ হচ্ছে না। মামলার তারিখ আসে আর যায়।
তিনি আরো বলেন, র্যাব যদি রহস্য উদঘাটন করতে না পারে তাহলে ব্যর্থতা স্বীকার করে মামলা ছেড়ে দিক। অন্য কোনো সংস্থা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে। অনেক আলোচিত মামলার বিচার শেষ হয়েছে। শুধু সাগর-রুনি হত্যারই বিচার হচ্ছে না কেন? সাংবাদিক হত্যার বিচার হলো না। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ইনকিলাবকে জানান, এ মামলায় র্যাব কর্তৃক আটককৃত ও সন্দিগ্ধ আসামিসহ ২৫জনের নঁপপধষ ংধিন ও আলামত ডিএনএ টেস্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইএফএস-এ পরীক্ষাকারে পাঠানো হয়। র্যাবে কর্মরত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইএফএস-এ পরীক্ষাকার থেকে পাঠানো ডিএনএ প্রতিবেদন অধিকতর তদন্ত চলছে। ডিএনএ-এর অধিকতর তদন্তের বিষয়ে ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মামলা তদন্তের সাথে সংশ্লিস্ট্র র্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। গ্রিল কাটা এবং বিভিন্ন চোর ডাকাত, এ রকম সন্দেহভাজন ১৩০ জনের মতো ব্যক্তিকে সন্দেহ করে তদন্ত হচ্ছে। হত্যাকান্ডের সময় হারানো ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন ব্যাপারেও র্যাব বিটিআরসির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এগুলো কেউ চালু করলেই সন্ধান পাওয়া যাবে। বিভিন্ন বিষয়ই আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের জন্য প্রথম ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম তদন্তভার নেন। এরপের ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রæয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর, ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি সোমবার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু র্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। আদালত আগামী ২৩ ফেব্রæয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নতুন তারিখ ধার্য করেছেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এই তারিখ ঠিক করেন। আদালতের নথিপত্রের তথ্য বলছে, এ নিয়ে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আদালত ৮৫ বার সময় দিলেন। তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার ৮ আসামির দুই জন বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও কথিত বন্ধু তানভীর রহমান জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম, এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিল ও আবু সাঈদ কারাগারে আটক আছেন। এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার ৮ জনের কেউই এখন পর্যন্ত হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন