আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামী, ভাষা আন্দোলনের অগ্রসেনানী, স্বনামধন্য চিন্তক, বাগ্মী, শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক, প্রতিথযশা সাংবাদিক এবং দৈনিক ইনকিলাবের ফিচার সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর গুরুতর অসুস্থ। জাতির নবতিপর এই কৃতীসন্তান নানা রোগব্যধিতে ভুগছেন। ক’দিন আগেও হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন; এখন বাসায়। ইউরিন ইনফেকশন ছাড়া বার্ধক্যজনিত অন্যান্য জটিতাও আছে। করোনাকালে বাসা থেকে বের হননি বলতে গেলে। ভালোই ছিলেন। এখন রীতিমত শয্যাশায়ী। গত বছর এই ফেব্রুয়ারিতে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেছিলেন, ‘ভালো আছি। বয়সের কারণে কিছু সমস্যা তো থাকেই। তবে এখনো চিন্তা করতে পারছি, লিখতে পারছি, এটাই বড় কথা।’ এই ফেব্রুয়ারিতে এসে দেখা যাচ্ছে, তিনি চিন্তাশক্তি অনেকটাই হারিয়েছেন। লেখালেখির সামর্থ্যও আর আগের মতো নেই। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে, তাঁর স্মৃতিশক্তি ক্রমহ্রাসমান। কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলেন, একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন কিংবা ভুলে যান।
অধ্যাপক আবদুল গফুর দীর্ঘদেহী। অনেকের থেকে তার শির অনেক উঁচুতে। এই শির কখনো অবনমিত হয়নি। ৯৩ বছর বয়সেও তিনি আলিফের মতো সোজা। লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি কোনো কিছুই তাঁকে এতটুকু বাঁকাতে পারেনি। তাঁর জীবনব্যাপী এই প্রতিজ্ঞার প্রতিফলনই লক্ষ করা গেছে: ‘শির দেগা, নাহি দেগা আমামা।’ অধ্যাপক আবদুল গফুর জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন, ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধভিত্তিক জনমানস গঠনে অনলস ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর এসব কোনো কাজের জন্য তিনি কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করেননি। কর্তব্যবোধেই করেছেন। তাই বলে জাতি বা রাষ্ট্র কি তাঁর জন্য কিছুই করবে না? খোঁজ পর্যন্ত নেবে না? যিনি পুরো জীবনটা জাতির মুক্তি, মঙ্গল, সমৃদ্ধি এবং দেশের কল্যাণ ও মর্যাদার জন্য ব্যয় করেছেন তাঁর প্রতি এই অবহেলা দুঃখজনক। সরকার কি জানে, দেশের মানুষ কি জানে অধ্যাপক আবদুল গফুর কী অবস্থায় আছেন, কেমন আছেন, কীরূপে তাঁর দিন কাটছে? আমরা নিশ্চিতেই বলতে পারি, কেউ কিছু জানে না। এটা আমাদের সকলের জন্য অমোচনীয় লজ্জার বিষয়।
অধ্যাপক আবদুল গফুরের মতো মানুষ শ’য়ে শ’য়ে জন্মায় না। কখনো কখনো দু’ একজন জন্মায়। তাঁর গোটা জীবনচিত্র সামনে রাখলে এটা স্পষ্ট হবে, তিনি ভিন্ন ধাতুতে গড়া অন্যরকমের একজন মানুষ, যিনি সর্বদা অন্যের কথা বলেন, পরহিতে কাজ করেন। নিজের চিন্তা, নিজের পরিবারের চিন্তা তাঁর কাছে এতটুকু গুরুত্ব ও স্থান পায় না। এমন একজন ত্যাগী, দেশ-জাতির জন্য উৎসর্গীকৃত মানুষ আমাদের দেশ ও সমাজে এখন খুব কমই আছে। জাতির উচিৎ, রাষ্ট্রের উচিৎ অধ্যাপক আবদুল গফুর ও তাঁর মতো কীর্তিমান মানুষদের সব সময় খোঁজ-খবর রাখা, প্রয়োজনে সাহায্য ও সহায়তা করা। কবে আমাদের মধ্যে এই ঔচিত্যবোধ জাগ্রত হবে?
১৭৫৭ সালে উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে একশ’ বছর পর। এরপর ৯০ বছর সরাসরি ব্রিটিশরাজের শাসনাধীনে থাকে উপমহাদেশ। এই সর্বমোট ১৯০ বছর উপমহাদেশের মুসলমানরা একনাগাড়ে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন ও সশস্ত্র লড়াই চালায়। ১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের আগ দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের নিজস্ব হোমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ সামনে আসে। হিন্দু-মুসলমানের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে স্বাধীনতার পর, এই নিশ্চয়তা থাকলে এ প্রসঙ্গ উঠতো না। হিন্দু নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের সমঅধিকার দিতে রাজি না হওয়ায় মুসলমানরা তাদের জন্য আলাদা হোমল্যান্ড দাবি করতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার দু’ জাতির জন্য দু’টি হোমল্যান্ড প্রতিষ্ঠায় রাজি হয়। এ জন্য মুসলমানদের আন্দোলন করতে হয়, যা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। এই জাতীয় মুক্তি ও আত্মপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন ছাত্রকর্মী ছিলেন অধ্যাপক আবদুল গফুর। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ফরিদপুর জুনিয়র গার্লস মাদরাসায় দু’ সপ্তাহের যে ক্যাম্প হয়েছিল তাতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পরে সিলেট রেফারেন্ডমের সময় সেখানে যান এবং লোকজনকে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, সিলেট রেফারেন্ডামে ছাত্রনেতা হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও অংশ নেন।
রাজনীতি দিয়ে শুরু হলেও অধ্যাপক আবদুল গফুর পরে আর রাজনীতিতে থাকেননি। হয়েছেন সাংস্কৃতিক কর্মী এবং জাতীয় সংস্কৃতি পুনর্নির্মাণের একজন পুরোধা। এখানে আগের কথা কিছু বলা দরকার। অধ্যাপক আবদুল গফুর বৃহত্তর ফরিপুরের রাজবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়া করেন তাঁর গ্রামের মক্তবে, পাবনার তালিম নগর মাদরাসায়, ফরিদপুর ময়েজউদ্দিন হাই মাদরাসায়, এরপর ঢাকার গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে, জগন্নাথ কলেজে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪৫ সালে হাই মাদরাসা থেকে ম্যাট্রিকুলেশনের সমমানের পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টার মিডিয়েট কলেজে ভর্তি হন। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় আসাম ও বাংলায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হওয়ায় তিনি ফ্রি স্টুডেন্টশিপ ও বিনাখরচায় হোস্টেলে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পান। ১৯৪৭ সালে আইএ পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন।
১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে স্বাধীন পাকিস্তানের অভ্যুদয় ঘটে, যার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ছিল আজকের বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর ১৭তম দিবসে ঢাকায় ‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্ম হয়, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাসেম ও কয়েকজন। পাকিস্তানের সংস্কৃতিক উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যেই এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঘটনাচক্রে এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন অধ্যাপক আবদুল গফুর। বলা বাহুল্য, ভাষা আন্দোলনের সূচনাকারী সংগঠন এই তমদ্দুন মজলিস। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে প্রথম পুস্তক রচনা ও প্রকাশের কৃতিত্বও এই সংগঠনের। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর তমদ্দুন মজলিসের নিজস্ব পত্রিকা সাপ্তাহিক সৈনিকের প্রকাশ শুরু হয়। এ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন কথাশিল্পী শাহেদ আলী। অন্যতম সম্পাদক ছিলে এনামুল হক এবং সহকারী সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক আবদুল গফুর ও সানাউল্লাহ নূরী। এভাবেই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী ভাষা আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক আবদুল গফুর হয়ে যান সাংবাদিক। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছায়, তখন অধ্যাপক আবদুল গফুর সাপ্তাহিক সৈনিকের সম্পাদক। তাঁর সম্পাদনাতেই সৈনিক ভাষা আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্রে পরিণত হয়। ভাষা আন্দোলনের সুবাদে তাঁকে তখন নানা রকম বিড়ম্বনার শিকার এবং এমনকি পালিয়ে বেড়াতে হয় অনেক দিন। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে স্মরণ করা যেতে পারে, নিজস্ব জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রেরণায় অধ্যাপক আবদুল গফুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার ইতি ঘটান। এ প্রসঙ্গে তিনি স্বয়ং এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন: ‘১৯৫০ সালের কথা, তমদ্দুন মজলিস, ভাষা আন্দোলন এবং সৈনিক পত্রিকা সব মিলিয়ে সংগঠনের কাজ বাড়ছিল। এ অবস্থায় একদিন আবুল কাসেম সাহেব বললেন, আমাদের একজন সার্বক্ষণিক কর্মী দরকার, যিনি কোনো ডিগ্রি নেবেন না, চাকরি করবেন না, বিয়ে-সংসার করবেন না। উপস্থিত আর কেউ রাজি হলেন না। অবশেষে আমি রাজি হয়ে গেলাম। তখন কাসেম সাহেব বললেন, তাহলে কালকেই আপনি জায়গীর বাড়ি ছেড়ে আমার বাড়িতে চলে আসবেন। আমার তখন বাংলায় অনার্স পরীক্ষার ২/৩ মাস বাকী। সেই অবস্থাতেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে কাসেম সাহেবের বাসায় উঠে গেলাম।’ (সূত্র: সৈয়দ ইবনে রহমত-এর গ্রহণ করা অধ্যাপক আবদুল গফুরের ‘ইসলাম এবং বাংলাভাষাই বাংলাদেশের মৌলিক ভিত্তি’ শীর্ষক সাক্ষাৎকার, দৈনিক ইনকিলাব ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১) সংস্কৃতির জন্য, ভাষার জন্য, দেশের জন্য এমন ত্যাগ আর কেউ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। পরবর্তীকালে জগন্নাথ কলেজ (নাইট শিফট) থেকে বিএ পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোস্যাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৬২ সালে এমএ পাস করেন। পাস করে প্রথমে চট্টগ্রাম ডিস্ট্রিক্ট সমাজকল্যাণ অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এর পরপরই ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যে রাজেন্দ্র কলেজ সরকারি হয়ে যায়। তাঁর বিভিন্ন স্থানে ও উপলক্ষে বক্তৃতা দেয়ার অভ্যাস থাকায় এবং বক্তৃতার বিষয় আগে জেলা প্রশাসককে জানানোর বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনিশ্চিত জীবন বেছে নেন। ঢাকায় এসে আবুজর গিফারী কলেজে যোগ দেন। সেখানে বেতন অনিশ্চিত ও অপর্যাপ্ত হওয়ায় সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন। দৈনিক দেশে যোগদান করেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে। সেখান থেকে চলে যান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগে। পরে প্রতিষ্ঠানলগ্ন থেকে যোগ দেন দৈনিক ইনকিলাবের ফিচার সম্পাদক হিসেবে। সেই থেকে ইনকিলাবেই আছেন।
অধ্যাপক আবদুল গফুর এমন ব্যক্তি, যিনি যা বিশ্বাস করেন, ভালো বলে মনে করেন, তার জন্য যে কোনো ধরনের শ্রম, কষ্ট, ত্যাগ করতে পারেন অবলীলায়। তার সারাজীবন বলতে গেলে অনিশ্চয়তায় ও দুঃখ-কষ্টে কেটে গেছে। তাতে তার কোনো বিকার বা অনুশোচনা দেখা যায়নি। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সাক্ষাৎকারে: ‘আপনার জীবনে কোনো অপূর্ণতা আছে বলে মনে হয়?’ তাঁর উত্তর ছিল: ‘ যেভাবে চলতে চাই, সেভাবে পারি না। বিশেষ করে আদর্শের দিক দিয়ে। আল্লাহর নির্দেশনাগুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করা হয়ে ওঠে না, ঠিক যেভাবে আল্লাহ চান। তাই আল্লাহর কাছে দয়া চাই, তিনি যেন আমার ভুলগুলো ক্ষমা করে দেন এবং ভালো কাজ ও চিন্তাগুলোকে কবুল করেন।’
আমরা সাক্ষ্য দিতে পারি, অধ্যাপক আবদুল গফুর সব সময় উত্তম চিন্তা ও ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তার চিন্তা ও কাজের কেন্দ্রে ছিল দেশ, জাতি ও মানুষ। তিনি কারো কাছে এর জন্য কোনো বিনিময় চাননি। তিনি স্বাধীনচেতা মানুষ। দৃঢ় ও ঋজু তাঁর ব্যক্তিত্ব। তিনি দলবাজিতে বিশ্বাসী নন। কোনো রাজনৈতিক দলে সঙ্গে যুক্তও নন। তাই কোনো সরকারের আমলেই তুল্যমূল্য তিনি পাননি। বরং দৃষ্টিকটু অবহেলা ও উপেক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। এতেও তাঁর ক্ষোভ-দুঃখ দেখা যায়নি। এই হলেন অধ্যাপক আবদুল গফুর।
কিন্তু যার জন্য, যাদের জন্য তিনি জীবন ব্যয় করেছেন তাদের কি কোনো করণীয় ও দায়িত্ব নেই? আমরা আশা করতে চাই, রাষ্ট্র ও সরকারের তরফ থেকে তার খোঁজ-খবর নেয়া হবে এবং কোনো সাহায্য বা সহায়তার প্রয়োজন হলে তা দেয়া হবে। এভাবেই আমরা জাতির কৃতীপুরুষদের ঋণ যৎসামান্য হলেও পরিশোধ করতে পারি। পরিশেষে আল্লাহপাকের কাছে অধ্যাপক আবদুল গফুরের দ্রুত সম্পূর্ণ নিরাময় কামনা করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন