আলহাজ হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) একজন সুদক্ষ শিক্ষক, পরিচালক, সংগঠক, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ও খতিব ছিলেন। একই সাথে তিনি ছিলেন অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারবিরোধী একজন মোজাহেদ আলেমেদ্বীন ও আন্তর্জাতিক খ্যাতির অধিকারী ইসলামী মোফাক্কের। কোন আধুনিক শিক্ষাকেন্দ্রে পদার্পণ না করেও তিনি আধুনিক চিন্তাধারার অধিকারী ছিলেন। তিনি পশ্চিমা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জবানী-কলমী জেহাদে লিপ্ত ছিলেন সক্রিয়ভাবে। তিনি পীর পরিবারের কৃতি সন্তান হওয়া সত্ত্বেও কখনো পীর-মুরিদী করেননি; বরং ভন্ড পীরালীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। হক্কানী উলামা, পীর-মাশায়েখের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। তিনি মাদরাসা তথা ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন-সংস্কারে, মসজিদ নির্মাণে, এতিমখানা প্রতিষ্ঠায় এবং মানবতার কল্যাণে যে কীর্তিমালা ও অবদান রেখে গেছেন, সেগুলোর যথাযথ মূল্যায়ণ করা হলে দেখা যাবে, তিনি ছিলেন ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি মানবকল্যাণেরও অগ্রদূত। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ইসলাম প্রচার ও ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন বিস্তারে তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা বলাই বাহুল্য।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) পীর ইসলামী ঐতিহ্যধারায় বেড়ে উঠেন। তিনি গ্রামীণ সমাজের সমস্যাসংকুল পরিবেশ পরিস্থিতি শুরু থেকেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তাদের নানা দুঃখ-দুদর্শা সম্পর্কে সরাসরি অবহিত ছিলেন। কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর তিনি তাদের সে কঠিন অবস্থার কথা ভুলে যাননি। তিনি শিক্ষা জীবন শেষ করে তার মুরব্বীদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্ব স্বহস্তে গ্রহণ করে দ্বীনের শিক্ষা বিস্তারে আত্মনিয়োগ করেন এবং তাকে এলাকায় সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার কৃতিত্ব ছিল এককভাবে তাঁরই। বর্তমানে তাঁর সেই পৈত্রিক প্রতিষ্ঠান দেশের সর্বোচ্চ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা ‘টাইটেল বা আলিয়া মাদরাসা’ নামে পরিচিত। ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া আলিয়া মাদরাসার কথাই বলছি। বিগত ষাটের দশকে এ প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলে সর্বোচ্চ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের স্বীকৃতি-অনুমোদন লাভ করে।
১৯৬২ সালে রাজনীতির অঙ্গনে অবতীর্ণ হবার পরও মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ২০০৬ সালে তাঁর ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত অর্ধ-শতাব্দীকাল উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে হাদিস শাস্ত্রে (এম.এ) সনদ নিয়ে বের হয়েছেন অসংখ্য আলেম। তাদের মধ্যে অনেকেই দেশ-বিদেশে ইসলামী শিক্ষা বিস্তার ও দ্বীনের অন্যান্য সেবায় নিয়োজিত।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) প্রতিষ্ঠিত এতিমখানায় বহু এতীম, অসহায় লালিত-পালিত হয়ে দেশের সুনাগরিক হিসেবে জীবন-যাপন করছেন এবং সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এ প্রতিষ্ঠান তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সাহায্য-সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছে। তাঁর মানবতাবোধের এটি একটি অপূর্ব নির্দশন। জানা মতে, মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) জীবদ্দশায় সর্বদায় অসহায়, বিধবা-নারী, বিপদগ্রস্ত ও হতদরিদ্র , উপেক্ষিত বঞ্চিতদের নীরবে যথাসাধ্য সাহায্য করতেন, এমনকি অভাবী বহু শিক্ষার্থীও তাঁর কাছ থেকে উপকার ভোগ করতো। দরিদ্র, ফকির-মিসকিন, প্রতিবন্ধি তথা বঞ্চিত শ্রেণীর লোকদের বিপদাপদ ও দুঃখ-দুদর্শায় এগিয়ে আসতেন এবং সাহায্যের হাত প্রসারিত করতেন।
পার্থিব বিষয়গুলোর সাথে ইসলাম ধর্মের সম্পর্কের বিষয়টিকে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতেন। গাউসুল আজম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি আজীবন নিয়মিত খুৎবাপূর্ব বয়ান দিয়ে গেছেন। এসব খুৎবা হতো তাঁর জ্ঞানগর্ভ গবেষণাধর্মী এবং তথ্যভিত্তিক। তাঁর প্রতিটি খুৎবার বিষয়বস্তু চয়ন করার ক্ষেত্রে তিনি ইসলামের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে মানব জীবনের অপরিহার্য দিকগুলো কোরআন ও হাদীসের আলোকে সহজ বোধগম্য করে শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করতেন। কোন্ সময় কোন্ বিষয়ের প্রয়োজন, সেদিকে তাঁর বিশেষ দৃষ্টি থাকত। সময়োপযোগী বিষয়গুলোকেই তিনি বিশেষ প্রাধান্য দিতেন। যেমন, দেশে গাছ লাগানোর মওসুমে গাছের ওপর বয়ান থাকতো। ইসলামে গাছ লাগানো সুন্নত, এ কথা তিনি কোরআন ও হাদীসের আলোকে পেশ করতেন। পরিবেশ দূষণরোধে গাছের ভূমিকা সর্ম্পকে বিজ্ঞানীদের গবেষণার কথা উল্লেখ করতেন। কোরআন ও হাদীসের উপর ভিত্তি করে মাওলানা মান্নান (রহ.) একটি গুরুত্বপূর্ণ খুৎবা অর্থাৎ খুৎবাপূর্ব বয়ান দিয়েছিলেন, যা সকলকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘বেশি করে গাছ লাগান, এটি রসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নত’ ।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) একজন প্রাজ্ঞ ও সুদক্ষ আলেমেদ্বীন ছিলেন। তিনি আলেম সমাজের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে কার্পণ্য করতেন না। তাদের ভালবাসতেন। এ ব্যাপারে তিনি দলীয় মতাদর্শকে কখনো বিবেচনায় রাখতেন না। সকল দল ও মতাদর্শের আলেমগণ তাঁর কাছে সমান মর্যাদা লাভ করতেন। ফলে সকল মত ও পথের আলেমগণ বিনা সংকোচে তাঁর কাছে আসতেন। তবে কোনো আলেমের অন্যায়কে তিনি কিছুতেই সমর্থন করতেন না। বলতেন, ‘আলেম সমাজকে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে’। তিনি নিজেও এ নীতির উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং তাঁর প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোদর্রেছীনকে এ নীতির উপর সুসংগঠিত করেছিলেন। ফলে এ সংগঠন মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠনে পরিণত হয়, যার মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আলেম সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্ম্পকে তিনি বলতেন, ‘প্রকৃত আলেমের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, জনগণের সামনে কোরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা, অকপটে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে সংগ্রাম করা’। এ সর্ম্পকে একটি খুৎবাপূর্ব দীর্ঘ ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাতে তিনি বলেছিলেন:
‘রাসূলে পাক (সা.)কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, ‘সর্বাপেক্ষা মন্দলোক কে? রাসূলে পাক (সা.) বললেন, মন্দলোক সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করো না, বরং আমাকে ভালো লোক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন, অতঃপর বললেন, জেনে রেখো, সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক হচ্ছে আলেমদের মধ্যে যারা মন্দ। এভাবে সর্বাপেক্ষা ভালো লোক হচ্ছে আলেমদের মধ্যে যারা ভালো।’ এর অর্থ মানুষ আলেমদের অনুকরণ ও অনুসরণ করে। আলেমগণ যখন মিথ্যার আশ্রয় নেয়, সত্য গোপন করে, মানুষ তখন স্বাভাবিকভাবেই বিপথগামী ও অসৎ হয়ে যায়। যে আলেম মানুষের মন জুগিয়ে কথা বলে নেতা অখুশি হবে বলে, মিথ্যার আশ্রয় নেয় সে আলেম সর্ম্পকে আল্লাহর নবী বলেন, তার চেয়ে মন্দ ও নিকৃষ্ট এ বিশ্বে আর কোথাও নেই, সে হলো সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক। অন্য এক হাদীসে আাছে, হযরত আবু দার্দা (রা.) বলেন, কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাপেক্ষা মন্দ বা নিকৃষ্ট ব্যক্তি সেই হবে, যে তার ইলম্ দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি।
হযরত জিয়াদ ইবনে যুবাইর (রা.) বলেন, একদিন হযরত ওমর (রা.) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামকে কি’সে ধ্বংস করবে, বলতে পার? তখন তিনি বললেন, আলেমদের পদস্খলন, মোনাফেকদের আল্লাহপাকের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা।’
সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। তাই তিনি এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্বের কথাও বলতেন, কেয়ামতের দিন আমকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি অকপটে একথাও বলতেন, ‘রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, সত্য কথা বলতে যারা নির্বাক থাকে, তারা বোবা শয়তান সমতুল্য।’
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর সত্য প্রকাশে স্পষ্টবাদিতার অজস্র প্রমাণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এখানে একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। পবিত্র রমজান মাস। প্রতি রমজানে তিনি ইনকিলাবের স্টাফদের ইফতার করাতেন। একবার ইফতার অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানান এবং তিনিও তার স্টাফের কয়েকজন কর্মকর্তা সমেত ইনকিলাব ভবনে যথাসময়ে উপস্থিত হন। ইফতারপর্ব শেষ হওয়ার পর মাওলানা সাহেব তাকে স্বাগত জানিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাষণে কোরআনের সূরা আল-ইমরানের বিখ্যাত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন (কুলিল্লাহ হুম্মা মালেকাল মূলকে---)। আয়াতের অর্থ হচ্ছে: ‘বলুন, হে আল্লাহ! তুমি সার্বভৌম শক্তির অধিকারী, তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর, আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর! তোমারই হাতে রয়েছে সর্বশক্তি।’
আয়াতটি পাঠ করে মাওলানা সাহেব তার অর্থের সাথে ব্যাখ্যাও বলতে থাকেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত যারা আয়াতটির অর্থ জানতেন তারা ফিস্ ফিস্ করে বলাবলি করতে লাগলেন, তার এ ভাষ্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়তো রাষ্ট্রপতির মধ্যে দেখা দিতে পারে। কিন্তু তিনি (রাষ্ট্রপতি) নীরবতা পালন করলেন। এক্ষেত্রে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) সত্য প্রকাশে এক্ষেত্রে কার্পণ্য করেননি।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) পীর পরিবারের কৃতি সন্তান ছিলেন, সে কথা আগেই বলা হয়েছে। চাইলে তিনি গদি-নশীন পীর কিংবা উত্তরাধিকারী সূত্রে পীর হতে পারতেন এবং সে যোগ্যতাও তাঁর ছিল কিন্তু তিনি পীর-মুরিদী অবলম্বন করেননি।
আলেম সমাজের ন্যায় পীর-মাশায়েখের প্রতিও এম এ মান্নান (রহ.) অত্যন্ত ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শন করতেন। গাওছে পাক বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জীলানী (রহ.) এর প্রতি তাঁর ভক্তি সম্পর্কে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, তিনি বড় পীর সাহেবের স্মরণেই মহাখালীতে ‘গাওসুল আজম মসজিদ’ কায়েম করেন এবং কাদেরিয়া প্রকাশনা তাঁর আরেকটি নিদর্শন। তবে শরীয়তের বরখেলাফী যাদের পীর-মুরিদী তাদেরকে তিনি সমর্থন করতেন না। তিনি বলতেন, শরীয়তের ওপরই দাঁড়িয়ে থেকে তরিকত, মারফত ও হাকীকত এবং শরীয়তকে বাদ দিয়ে এগুলি কল্পনা করা যায় না। তাঁর বিভিন্ন রচনায় ভণ্ড পীরদের বর্ণনা রয়েছে। কোরআন-হাদীস সর্ম্পকে অজ্ঞ লোকদের ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে তাদের ভক্ত বানায় এবং এ ভক্তরা তাদের কথায় বিশ্বাস করে। এ সম্পর্কে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)বলেন, ‘তারা ঐ ভণ্ডের কথা বিশ্বাস করে টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল পীরের নামে মানত করে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম! পীর ঐ টাকা দিয়ে আলিশান বাড়ি বানায়, মিল-ফ্যাক্টরি গড়ে তুলে আর মুরিদ নামক মূর্খগুলো টাকা-পয়সা দিতেই থাকে। এক একজন ভণ্ড পীর এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।’
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) একটি উন্নতমানের দৈনিক পত্রিকা (ইনকিলাব) প্রকাশ করে একদিকে দেশ ও জনগণের সেবার জন্য উৎসর্গ করে গেছেন, অপরদিকে অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে গেছেন। এটি তাঁর মানবতা প্রদর্শনেরও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এতদ্ব্যতীত এটির মাধ্যমে এদেশে ইসলামের প্রচার এবং ইসলামী আদর্শ শিক্ষার উন্নয়ন ও বিস্তার ছাড়াও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষাসহ নানা অনাচার-পাপাচার ও কুসংস্কার প্রভৃতি অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ হিসেবে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর চিন্তা-ধারার প্রতিফলন এ সংবাদ মাধ্যম। তাঁর রেখে যাওয়া সংস্কার ও কীর্তিমালার আলোকে বলা যায়, তিনি একজন সংস্কারকের ভূমিকা পালন করে গেছেন সার্থকভাবে।
পরিশেষে বলতে চাই, মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ব্যক্তিগত ও সরকারি পর্যায়ে নানা ক্ষেত্রে ধর্মীয় কর্তব্য পালনের পাশাপাশি মানবতা ও সেবারও স্বাক্ষর রেখে গেছেন, যার প্রভাব আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষভাবে আরব বিশ্বে অনন্য। ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানরা ছাড়াও বিভিন্ন সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব ভাইদের জন্য তিনি তাঁর ঐতিহ্যবাহী সংগঠন জমিয়তের পক্ষ হতে যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন। বিশেষত যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকী ভাইদের জন্য সরকারের ধর্ম ও ত্রাণমন্ত্রী হিসেবে তিনি হেলিকপ্টার ভর্তি ওষুধপত্র ও ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করেছেন এবং একই পদে অধিষ্ঠিত থেকে বাংলাদেশের বন্যা-প্লাবন কবলিত দুর্গত মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে আরব বিশ্বের সাহায্যও কামনা করেছিলেন, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন ইরাক সরকার বন্যাকবলিত বিভিন্ন দুর্গত এলাকাগুলোতে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ ও বিতরণের লক্ষ্যে সাময়িকভাবে সাতটি হ্যালিকপ্টার প্রদান করেছিল। এটি কেবল তাঁরই আহ্বানে সম্ভব হয়েছিল বললে অত্যুক্তি হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন