ভাটি মেঘনায় নাব্যতা সংকটে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট নৌপথে ফেরি চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরত্বের উপমহাদেশের সর্বাধিক দূরত্বের এ ফেরি রুটের কয়েকটি স্থানে মেঘনার ডুবোচরার কারনে ফেরি চলাচল অনেকটাই জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এমনকি নাব্যতা সংকট এড়িয়ে ফেরি ও যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে এখন প্রায় ২৫-২৬ কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রম করতে হচ্ছে।
ফলে চট্টগ্রামের সাথে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল হয়ে মোংলা ও খুলনা পর্যন্ত সড়ক পরিবহন অনেকটাই বিপর্যস্ত। এতেকরে দেশের ৩টি বিভাগ ছাড়াও চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহনের চাপ বাড়ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উপর। ভাটি মেঘনার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভোলার ইলিশা ফেরি ঘাটের সামনে বিশাল এলাকা জুড়ে চড়ার সৃষ্টি হওয়ায় ফেরি সহ সবধরনের নৌযানকেই প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে পন্টুনে ভিড়তে হচ্ছে। নৌপথে মেঘনায় আরো কয়েকটি স্থানেও নাব্যতা সংকট ক্রমশ বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র তরফ থেকে ইতিমধ্যে ইলিশা ঘাট থেকে মজুচৌধুরীর হাট ফেরি ঘাট পর্যন্ত হাইড্রোগ্রাফী সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সার্ভের ভিত্তিতে পাইলটেজ ও কনজার্ভেন্সী বিভাগ থেকে দিবারাত্র ফেরি সহ সব ধরনের নৌযানের চলাচলের বিষয়টি নিরাপদ রাখতে বয়া, বিকন ও মার্কা সহ লাইটেড বয়া স্থাপন করা হয়েছে।
বিআডব্লিউটিএ’র চাঁদপুর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক জানান, ইলিশা থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত নৌযান চলাচলে নির্বিঘ্ন রাখতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে ইলিশা ফেরি ঘাটের সামনে চড়া অপসারন আপাতত সম্ভব নয় বিধায়, ঘুরা পথে ফেরি সহ অন্যসব নৌযানের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে আমরা নতুন নৌপথ চিহ্নিত করে সব ধরনের নৌ সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। তবে এতে করে নৌপথটির দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার থেকে ২৫-২৬ কিলোমিটারে বৃদ্ধি পেয়েছে ।
এদিকে এই ফেরি রুট ব্যাবহারকারী বরিশাল ও চট্টগ্রমের একাধিক ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানের চালকসহ মালিকগণ নানা দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে, চট্টগ্রাম থেকে এখন লক্ষ্মীপুরে এসে মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলা থেকে ভেদুরিয়া-লাহারহাট ফেরি পার হয়ে বরিশালে পৌঁছতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। এ সড়ক পথের দূরত্ব আড়াইশ কিলোমিটারের কম। তাদের মতে মেঘনায় নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট রুটে নাব্যতটা সংকটে দুরত্ব বৃদ্ধি ছাড়া মাত্র ৩টি কে-টাইপ ফেরি চলাচল করায় সব যানবাহনকে দিনের পর দিন ঘাটে আটকা থাকতে হচ্ছে। বরিশাল ও ভোলার মধ্যবর্তী ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ লাহারহাট ও ভেদুরিয়া রুটে ৫টি ইউটিলিটি ফেরি থাকলে ৪টির বেশি চলছে না। এমনকি রাতের বেশিরভাগ সময়ই এইরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার অভিযোগ করেন পরিবহন চালকগণ।
এ মহাসড়ক ব্যবহার থেকে ক্রমে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পণ্যবাহী চালকগণ। এই ভোগান্তির কারনে ৩টি বিভাগীয় সদরের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন যাত্রীবাহী যানবাহন চালু হয়নি। বর্তমানে এই জাতীয় মহাসড়কটির উপর দেশের উপকূলীয় ৩টি বিভাগের সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বাহুলাংশে নির্ভরশীল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন