স্বপ্নের দেশ ইউরোপের গ্রিসে গিয়ে নিজের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণের চেষ্টার শেষ সারথি হলো বরফে জমে মৃত্যু। ২২ জনের অভিবাসন প্রত্যাশীর একটি দল গ্রিসের সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। অভিবাসন প্রত্যাশীর ওই দলটিতে ছিল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তিন যুবক। গত বৃহস্পতিবার তুরস্ক-গ্রিস সীমান্ত থেকে ১২ জন অভিবাসন প্রত্যাশীর লাশ উদ্ধার করেছে তুরস্কের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। দেশটির এর্ডিনা প্রদেশের ইপসালা গ্রামে ঠাণ্ডায় জমে পড়েছিল লাশগুলো। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হলে যুবকদের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। কিছু সূত্র থেকে নিখোঁজ তিন যুবকের মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ পাওয়া গেলেও নিশ্চিত হতে পারেনি পরিবারগুলো। প্রিয় সন্তানদের খোঁজ পেতে পাগলপ্রায় পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের লোকজন জানান, গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের টুকদিরাই গ্রামের বাসিন্দা আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য এনামুল হকের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বাড়ি ছাড়েন দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামের ফুল মিয়া সরদারের ছেলে জনি সরদার, নতুন কর্ণগাঁও গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জুনেদ আহমেদ ও শাল্লার আনন্দপুর ইউনিয়নের আশুতোষ রায়ের ছেলে আকাশ রায়।
আকাশ রায় দিরাই উপজেলার কল্যাণী গ্রামের বাসিন্দা ও দিরাই বাজারের ব্যবসায়ী বিধান রায়ের ভাগ্নে। মানব পাচারকারী এনামুল হক ওই যুবকদের দুবাই, ইরান, তুরস্ক হয়ে গ্রিসে পৌঁছে দেয়ার চুক্তি করেছিল। এজন্য বাংলাদেশ থেকে দুবাই ২ লাখ টাকা, দুবাই থেকে ইরান ৩ লাখ টাকা, ইরান থেকে তুরস্ক ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও তুরস্ক থেকে গ্রিস পর্যন্ত আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেয় পাচারকারী এনামুল। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার টুকদিরাই গ্রামের হাজি আব্দুল ওয়াহেদ মিয়ার ছেলে এনামুল হক এক সময় ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হঠাৎ সে ঢাকা-সিলেট আসা-যাওয়া করে এলাকার যুব সমাজকে ইউরোপ পাঠানোর স্বপ্ন দেখিয়ে মানবপাচার শুরু করে। স্বপ্নের ইউরোপ পাড়ি দিতে লাখ লাখ টাকা নিয়ে এনামুলের শরণাপন্ন হয় এলাকার অনেকে। দীর্ঘদিন অবৈধভাবে মানবপাচার করে কোটিপতি হয়ে ওঠে এনামুল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন