শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

খুলনায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাড়ে ৬ কোটি টাকার কাজ ভাগবাটোয়ারা

প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : খুলনায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ফুলতলা আবাসিক এলাকা উন্নয়নের প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তাদের বাধার কারণে ৩৬টি সিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে সিন্ডিকেটের মাত্র তিনটি শিডিউল। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ও নগদ অর্থের ক্ষতি হয়েছে। ফলে ক্ষুব্ধ সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্রটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
খুলনা গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ফুলতলা আবাসিক এলাকার প্লট উন্নয়নের জন্য সীমানা প্রাচীর, রাস্তা, আরসিসি কালভার্ট, ড্রেন, গভীর নলকূপ স্থাপন, পানি সঞ্চালন লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। কাজের মূল্য ছিল সাড়ে ৬ কোটি টাকা। ২৮ অক্টোম্বর ছিল দরপত্র জমার সময়। পরে তা সংশোধন করে ৩১ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে মোট ৩৬টি সিডিউল বিক্রি হয়। কিন্তু দরপত্র জমার দিন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেন। তাদের বাধার কারণে সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশ নিতে পারেননি। সূত্র জানান, সরকারি অনুমোদিত দর ৭ কোটি ১৫ লক্ষাধিক। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ শেখ আশরাফ হোসেন ও যুবলীগ নেতা ফয়েজ আহমেদের নেতৃত্বে দরপত্রটি ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। তিনটি সিডিউল জমা পড়লেও কাজ পেয়েছেন ঢাকাস্থ মেসার্স কেটিএ জেভি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দরপত্রটি ই-টেন্ডারিংয়ে অর্থাৎ ইজিপি’র মাধ্যমে আহ্বানের নির্দেশ দিলেও স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী তা মানেননি। ম্যানুয়ালি (ওটিএম) দরপত্র নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। তারা ১০ শতাংশ কমে এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বানের দাবি জানান। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাইনুল হক মোতাইদ বলেন, দরপত্রে বাধা দেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ হোসেন বলেন, ভাগ নেয়ার জন্য সবাই সিডিউল কেনে। কিন্তু পরে দেখা যায় কাজের অভিজ্ঞতা বা অন্যান্য কাগজপত্র তাদের নেই। তখন কেউ সিডিউল জমা দিতে পারে না। এখানেও তাই হয়েছে। দরপত্র ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। যুবলীগ নেতা ফয়েজ আহমেদ গতকাল ভারতে গিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এ পুলিশ লাইনের আরআরএফ’র ব্যারাক ভবন ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ কাজের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার টেন্ডার সমঝোতা হয়েছে। গত সোমবার ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় বিশেষ একটি দলের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে এ সমঝোতা হয়। ফলে এ নিয়ে সাধারণ ঠিকারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গণপূর্ত বিভাগ-২ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পুলিশ লাইনের আরআরএফ’র ব্যারাক ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে খুলনা স্থানীয় খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ ভবনে ওই কাজের দরপত্রের আহ্বান করা হয়। ৩০ অক্টোবর ছিল দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। শেষ দিন পর্যন্ত অন্তত ২০টির অধিক দরপত্র বিক্রি হয়। গত সোমবার বেলা ১২টায় ওই দরপত্র জমার শেষ সময় ধার্য করা হয়। দরপত্র উন্মুক্ত করার সময় ছিল বেলা ২টা। তবে শেষ সময় পর্যন্ত টেন্ডর বাক্সে ২০টির বিপরীতে দরপত্র পড়ে মাত্র তিনটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, সকাল থেকে গণপূর্ত বিভাগে বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক প্রভাবশালী ঠিকাদাররা ওই টেন্ডার কাজের সমঝোতার চেষ্টা করেন। তারা দরপত্র জমা দিতে বাধা দিলে সাধারণ ঠিকাদাররা পিছু হটেন। বিশেষ দলের সমর্থকদের সাথে যুক্ত হন ওই অফিসের প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যার কারণে তারা সমঝোতা করতে সক্ষম হন।
গণপূর্ত বিভাগ-২ এর অ্যাস্টিমেটর ফিমা খাতুন বলেন, কয়টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে আর কে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়েছেন তা তার জানা নেই। তবে তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।
গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আব্দুলাহ আল মাসুমও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে। এখন টিইসি কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এর সাথে তার অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কোনো কর্মচারী জড়িত না বলে দাবী করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন