শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নির্দেশনা

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

সুনিয়ন্ত্রিত ও পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যে কোনো আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনার অন্যতম মাপকাঠি। পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলা, পরিবেশবান্ধব কৃষি, শিল্প ও নগরব্যবস্থাপনা এখন বৈশ্বিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু ইনিশিয়েটিভের অন্যতম অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও আমাদের রাজধানীসহ প্রধান নগরীগুলোর পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পশ্চাদমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আমাদের রাজধানী ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম দূষণযুক্ত ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে স্থান পাচ্ছে। গত চার দশকে ঢাকা শহরের চারপাশের নদনদী, নিম্নভ’মি, খাল, পুকুর ও জলাধারগুলো নির্বিচার দখলবাজির শিকার হয়েছে। নগরীর পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি নগর কর্তৃপক্ষ। এমনকি নগরীর স্যুয়ারেজ সিস্টেম, বর্জ্যব্যবস্থাপনা এবং গণপরিবহণ ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী মানদন্ডে উন্নীত করতেও তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষত ঢাকা শহরের সমস্যাগুলো দূর করা এবং নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল পরিবেশে দুই সিটির মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নগরীর সমস্যাগুলো দূর করার অঙ্গিকার নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি।

সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয় নানা সময়ে প্রতিশ্রুতিসহ কথামালার ফুলঝুরি ছড়িয়েছেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও নানা কথায় নগরবাসীকে আশ্বস্ত করলেও কেউ কথা রাখেননি। এ ক্ষেত্রে নগরবাসী সব সময় সরকারের সর্বোচ্চ মহল তথা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রত্যাশা করেছেন। রাজধানী শহরের পরিবেশ রক্ষা, নদনদী ও খাল পুনরুদ্ধার, স্যুয়ারেজ, বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালত থেকে যেমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, একইভাবে বিভিন্ন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। বাস্তব ক্ষেত্রে সে সব নির্দেশনা ও রুলের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। নানা ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে সিটি কর্পোরেশনে দক্ষ গাড়ি চালক নিয়োগসহ বর্জ্য ব্যবস্থপনায় ডাম্পিং সাইটগুলোকে শহরের ও লোকালয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ীর অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া চলাচলের বলি হয়ে বেশকিছু মানুষ রাজপথে হতাহত হয়েছে। গত বছর গুলিস্তানে ডিএসসিসির বর্জ্যবাহী গাড়ী চাপায় নটরডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শহরের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। সে সময়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্যবাহী গাড়ী চালকদের অদক্ষতা-অযোগ্যতা ও বেপরোয়া কর্মকান্ডের নানা চিত্র বেরিয়ে আসে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ আধুনিক গাড়ী সংগ্রহ করে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালক নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সময়োপযোগী নির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে নির্দেশনাগুলো যেন যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হয় সে দিকেও প্রধানমন্ত্রীকে নজর রাখতে হবে।

নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও আধুনিকায়ন নিশ্চিত করার দাবি দীর্ঘদিনের। প্রকাশ্য রাস্তার উপর অস্থায়ী উন্মুক্ত ডাম্পিং স্টেশন থাকায় দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতায় নগরবাসিকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুধুমাত্র বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা ও ব্যর্থতার কারণে অপরিচ্ছন্নতার কারণে জনদুর্ভোগ ও নাগরিক স্বাস্থ্য সমস্যার সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির অংক নি:সন্দেহে অনেক বিশাল। সাধারনত রাতারাতি বর্জ্য সরিয়ে ফেলার কথা থাকলেও দিনের বেলায় বর্জ্যবাহী গাড়ীর যাতায়াতের কারণে একদিকে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা যত্রতত্র রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়তে দেখা যায়, অন্যদিকে বর্জ্যবাহী গাড়ী চালকদের অদক্ষতা-অযোগ্যতা ও বেপরোয়া তৎপরতার কারণে রাজপথে প্রাণহানি ঘটে চলেছে। এমন মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় তার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভায় ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ১১টি প্রকল্পের একটি প্রকল্প ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা,সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও ম্যাকানাইজড কার পার্কিং ও যানজট নিরসন’ প্রকল্পের প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনার কথা বলেন। লজিস্টিক সার্পোট যেমনই হোক, সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান জনবল ও ব্যবস্থাপনায় সঠিক নিয়মে সময়মত বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে হবে। ময়লার গাড়ী চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নাগরিক সমাজের সচেতনতা, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন