সারা দেশে হাড় কাঁপানো কনকনে শীত নেমেছে। কোথাও কোথাও বইছে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ । এ বছর প্রায় পুরো মৌসুম স্বাভাবিক শীতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মাঘের মধ্যভাগে দেখা মিলেছে সেই শীতের। কয়েক দিন ধরে শীতে কাঁপছে পুরো দেশ। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে সারা দেশে চার-পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেয়েছে তাপমাত্রা। ইতোমধ্যে উত্তর জনপদসহ দেশের ২৩ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস-আরো দুই-তিন দিন সারা দেশে রাতের তাপমাত্র এক-দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমবে। এতে নতুন আরো কিছু এলাকা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে। আবহাওয়া অফিস বলছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চলছে। আগামী কয়েক দিন শীতের প্রকোপ আরো বাড়বে। কমবে দিন ও রাতের তাপমাত্র। আগামী কয়েক দিন নদী অববাহিকায় সকাল-সন্ধ্যা ও রাতে কুয়াশা থাকবে। দুই-তিন দিন বৃষ্টির পর দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস ও আবহাওয়াবিদদের ব্যাখ্যায় এ কথা স্পষ্ট, কয়েক দিন পরই শীতের প্রকোপ কমবে।
অবশ্য, সারা বিশে^ই এবার শীতের প্রকোপ কম। ২০১৫ সাল উষ্ণতম বছর হবে বলে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিজ্ঞান সংস্থা ‘নাসা’র বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছেন, ১৮৮০-এর পর ২০১৫ সালই হচ্ছে উষ্ণতম বছর। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা ১৮৫০ সালের পর এবং জাপানের আবহাওয়া সংস্থা ১৮৯১-এর পর ২০১৫ সালকে উষ্ণতম বছর বলে অভিহিত করেছেন। এ বছরের শীতকালকে ২০১৫ সালের উষ্ণতায় প্রভাবিত বলে মনে করা হয়। তবে মৌসুম শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশে আবারো শীত কিছুটা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রধান নিদর্শন হচ্ছে- শীত বা উষ্ণতা যেটাই ধরা হোক না কেন, সেটি সর্বোচ্চ মাত্রায় ঘটবে; ঘন ঘন আবির্ভূত হবে। শীত মৌসুমে সাধারণত উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাংলাদেশমুখী বাতাসের গতি থাকে। সেটিও শীতল। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বর্ষার পর মেঘমুক্ত আকাশ। সাধারণত আকাশ মেঘলা থাকলে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠ শীতল হতে সময় লাগে। তাপমাত্রা ভূপৃষ্ঠে বেশিক্ষণ থাকতে পারে। ফলে ধরণী শীতল হতে না হতেই নতুন দিনে সূর্যের আগমন ঘটে। ফলে মেঘমুক্ত আকাশ ধরণীকে দ্রুত শীতল করে। পাশাপাশি দীর্ঘ-রজনী সূর্যের আগমন বিলম্বিত করে। এসব কারণ উপস্থিত থাকায় ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের গতির জেট এক্সট্রিম (শীতল বাতাসের লাইন বা যেখানে তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রি) নিচে (ভূপৃষ্ঠের দিকে) নেমে এসেছে। ফলে দ্রুত তাপমাত্রা কমে আসে। এসব কারণ মিলিয়েই বাংলাদেশে শীতের প্রকোপ বেড়েছে।
শহর-নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা প্রাকৃতিক কারণেই বেশি। প্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের জন্য তা বয়ে এনেছে বাড়তি কষ্ট ও দুর্ভোগ। বিশেষ করে চরাঞ্চলে। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সেচনির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে কৃষকরা অনেক কষ্টে ক্ষেতে কাজ করছেন। গ্রামের হাটবাজার ও শহরে লোকসমাগম কমে গেছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড় লক্ষ করা গেছে হাসপাতালে। এ দিকে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। শীতে এই প্রকোপ আরো বেশী দিন থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় চিকিৎসকরা রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিচ্ছেন। হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে আবহাওয়ার এমন রূপ দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে শীত পৌষের শুরুতে অনুভূত হওয়ার কথা ছিল তা মাঘের মধ্যবর্তী সময়ে অনুভূত হচ্ছে। বেড়েছে বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগ। ফলে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।
সারা দেশে যে শীত পড়েছে তাতে গরিব মানুষ কাজ করতে না পেরে খাবারের কষ্টে রয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। তারা গরম কাপড়েরর অভাবে শীত নিবারণও করতে পারছে না। এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের ত্রাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। গরিব-অসহায়দের প্রতি সর্বস্তরের মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানাই। তাই সকলের প্রতি আহবান- আসুন, আমরা কম্বল, কান বন্ধনী টুপি, মাফলার, চাদর, শাল, স্যুয়েটার, মোজাসহ যে যা পারি তাই দিয়েই শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই।
মো: লোকমান হেকিম
শিক্ষক-কলামিস্ট।
মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন