কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণে চার দফা মেয়াদ বাড়ালেও ভবন হস্তান্তর হয়নি। নতুন বছরে নতুন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাওয়া তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত ৭০% কাজও প্রস্তুত করতে পারেনি। গত বছরের শেষের দিকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ‘নতুন বছরেই ফিরবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা’ সেগুড়ে বালি হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের মনভোলানো দায়সারা কথা দিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করা যায় না। যা সরেজমিনে দেখা গেছে।
মেডিকেল কলেজের নির্মাণাধীন কাজের যে প্রকল্প তাতে ২০২২ সাল পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবে কিনা তাতেও সন্দেহ রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নতুন ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার কথা বলা হলেও নতুন বছরের দুই মাস পার হতে চলছে। এখনো কার্যক্রম শুরু করা তো দূরে থাক, ভবনই হস্তান্তর হয়নি। গণপূর্ত অফিসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে কুষ্টিয়া হাউজিং এলাকায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। সে সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত করা হয়। তাতেও শেষ না হওয়ায় ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। ওই সময় কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবারও বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির শুরুতেই নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে আইএমইডির তদন্ত টিম।
এরপর দু’দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়িয়েও ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়নি। ২০১৮ সালে এ প্রকল্পের প্রথম অধিবেশন হয়। নতুন করে গত বছরের ৫ অক্টোবর কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত অংশসহ সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বর্ধিত অংশের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এর মধ্যে ৬৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে স্থাপনা নির্মাণে। বাকি অর্থ ব্যয় হবে ফার্নিচার ক্রয়সহ অন্যান্য খাতে।
সর্বশেষ একনেকে সভায় প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘদিন পর ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিলেন গত ১৯ জানুয়ারি অধিদফতরের পরিচালকের (পরিকল্পনা ও গবেষণা) স্বাক্ষরে। কলেজ অংশের একাডেমিকসহ তিনটি ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শারমিনা আফতাবকে। এ কমিটিতে দুইজন প্রকৌশলী ছাড়াও সব মিলিয়ে ৭ জন চিকিৎসক রয়েছে। তারা মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে ভবন বুঝে নিবেন। গত বুধবার কমিটির সদস্যরা মেডিকেল প্রকল্প ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা বেশ ককেটি বিষয়ে আপত্তি প্রদান করেছে।
আপাতত একাডেমিক ভবন ও হোস্টেলে স্থানান্তর করা হবে। পরে ডরমিটরি অন্যান্য আবাসিক ভবন স্থাপনা স্থানান্তর করা হবে। সর্বশেষে স্থানান্তর করা হবে হাসপাতাল ভবন।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একাডেমিক ভবনটি রং করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ভেতরের ফিটিংস এর কোনো কাজই এখনো হয়নি। সামনের সড়ক পাকা করন করতে শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছে। ভবন স্থানান্তরের তোড়জোড় চললেও চলতি বছর লেগে যাবে সকল প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে। তবে ছাত্র- ছাত্রী হোস্টেল প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে ঠিকাদাররাও অভিযোগ করেছেন নানা ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে ঠিকাদারদের। সর্বশেষ মেডিক্যাল কলেজের পুরাতন বিল ছাড় করার জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণেক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা।
ভবন হস্তান্তর, টেন্ডারসহ ঠিকাদারদের অভিযোগের বিষয়ে গণপুর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এখন ভবন বুঝিয়ে দিয়ে তারপর আমরা হালকা হতে চাই। কথা বলতে চাই ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার পর। তিনি বলেন, একাডেমিক ভবনে কিছু কাজ বাকি আছে। আর ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল তারা প্রস্তুত রেখেছেন। টেন্ডার নিষ্পত্তির বিষয়ে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সকল টেন্ডার নিষ্পত্তি করা হবে। আর ঠিকাদারদের অভিযোগ অমূলক বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার দেলদার হোসেন বলেন, নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
আমরা জানুয়ারিতে যেতে চেয়েছিলাম সেটা পারেনি। গণপূর্ত এখনো কোনো ভবন আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। ২০২২ সালের শেষের দিকেও বুঝিয়ে দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে কমিটির সদস্যরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন