সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

উফশী ও হাইব্রিড ধানের আবাদ বাড়লে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে খাদ্য উদ্বৃত্ত সাড়ে ৮ লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব

উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ না বাড়ায় কৃষি মন্ত্রীর অসন্তোষ

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৩ পিএম

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের ধান আবাদে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে খাদ্য উদ্বৃত্ত বর্তমানের সাড়ে ৮ লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন-এর মোট আবাদের প্রায় ৪০ ভাগ এখনো সনাতন স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের আমনের আবাদ ২%-এরও কম। ফলে বিপুল সম্ভবনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসলে কাঙ্খিত উৎপাদন আসছে না। কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকও অতি সম্প্রতি ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ সম্প্রসারন না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে ব্রি’র বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ লক্ষে কমিটি করার কথাও জানান।

অথচ মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদদের মতে, দেশের অন্যসব এলাকার মত দক্ষিণাঞ্চলে উফশী ও হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ ১০ ভাগ সম্প্রসারন হলেও খাদ্য উদ্বৃত্তের পরিমান ১০ লাখ টন অতিক্রম করতে পারে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১ কোটি মানুষের দৈনিক ৪৪২ গ্রাম দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার আলোকে এ অঞ্চলে বছরে খাদ্য শষ্যের চাহিদা ১৬ লাখ ১০ হাজার টনের মত। কিন্তু আমন, আউশ ও বোরো সহ এঅঞ্চলে বছরে চালের উৎপাদন ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। এছাড়া আরো প্রায় ১০-১২ হাজার টন গম সহ প্রতিবছর সর্বমোট দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন প্রায় ২৭ লাখ ৬৩ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টনের মত। এর মধ্যে উল্লেখিত ৫টি ফসল আবাদে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টনের মত বীজ প্রয়োজন হলেও নীট দানাদার খাদ্য শষ্য থাকছে ২৪ লাখ ৪৫ হাজার টনের মত। সেখান থেকে ১৬ লাখ ১০ হাজার টন খাবার গ্রহনের পরেও প্রতি বছর ৮ লাখ ৩৫ হাজার টনেরও বেশী খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকছে দক্ষিণঞ্চলে।
কিন্তু শুধুমাত্র আমনে এ অঞ্চলের বিপুল পরিমান জমিতে স্থানীয় সনাতন জাতের ধানে আবাদ হচ্ছে। সেস্থলে উফশী জাতের আবাদ প্রবর্তন করতে পারলে উদ্বৃত্তের পরিমান ১০ লাখ টন অতিক্রম করা খুবই সহজ বলে কৃষিবীদগন জানিয়েছেন। উপরন্তু হাইব্রীড জাতের আবাদ ক্রমন্বয়ে বৃদ্দি পেলে উৎপাদন অঅরো বাড়বে বরে মনে করছের কৃষিবীদগন।
ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, গত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় সর্বমোট ৭ লাখ ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টরে যে আমনের আবাদ হয়েছে, তারমধ্যে ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরেই স্থানীয় সনাতন জাতের ধান আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি মাত্র ১.৬১ টন হিসেবে ৪ লাখ ৫ হাজার ১২৮ টন। অথচ ‘ব্রি’ উদ্ভাবিত ‘উফশী’ জাতের ধানের উৎপাদন ছিল হেক্টরপ্রতি ২.৭১ টন হিসেবে ৪ লাখ ৭ হাজার ৩২৩ হেক্টরে ১১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ টন। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলে হাইব্রিড জাতের আমনের আবাদ এখনো ১ হাজার হেক্টরও অতিক্রম করতে পারেনি। গত খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলের ৬ জেলার মধ্যে শুধুমাত্র পিরোজপুরে ৬৯৭ হেক্টর জমিতে ৩.৬১ টন হিসেবে মাত্র ২ হাজার ৫১৬ টন হাউব্রিড চাল উৎপাদন হয়। ফলে গত মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৫২ টন আমন উৎপাদন লক্ষমাত্রার বিপরিতে যে ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ টন চাল উৎপাদন হয়েছে, তার যদি ৮০ ভাগ জমিতেও উফসি আর ১০ভাগে হাইব্রিড জাতের বীজ আবাদ সম্ভব হত, তবে উৎপাদন অনায়াসেই ২০ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব ছিল বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
অপরদিকে বিগত খরিপ-১ মৌসুমে ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টরের আউশ আবাদের মধ্যে হাইব্রিড জাতের আবাদ ছিল মাত্র ৩৭৫ হেক্টরে। যেখানে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল ৩.৮৮ টন। যার গড় ফলন দেশের অন্যসব এলাকার চেয়ে বেশী। অথচ স্থানীয় সনাতন জাতের হেক্টর প্রতি ১.৪২ টন উৎপাদনের ধানের আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২০৪ হেক্টরে। উফশী জাতের ধানের আবাদ ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ১৭৫ হেক্টরে। হেক্টর প্রতি ২.৬৭ টন হিসেবে মোট উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৯৮ হাজার টনের মত।
তবে রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে যে ১ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে, তার ৯৯ ভাগই উচ্চ ফলনশীল হলেও হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ লক্ষ্য রয়েছে মাত্র ৬ হাজার হেক্টরের মত। এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫২১ টন চাল।
এসব বিষয়ে ডিএই’র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বোরো এবং আউশে উফশী জাতের ধান আবাদ সন্তোষজনকভাবে এগুচ্ছে বলে জানিয়ে আমনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত কিছু বাঁধার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান। তার মতে, জোয়ারÑভাটার দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে আমন মৌসুমে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও অতি বর্ষনে ফসল প্লাবিত হয়ে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে আমন মৌসুমে এঅঞ্চলে অকাল বর্ষন সহ জলোচ্ছাসে অনেক জমি ৪Ñ৬ফুট পর্যন্ত পানিতে প্লবিত হয়ে যাচ্ছ। ‘ব্রি’ এখনো দক্ষিণাঞ্চলের এ ধরনের পরিবেশ উপযোগী ধান নিয়ে আসতে পারেনি বলে জানিয়ে ‘ব্রি-২৩’ এবং ‘ব্রি-৭৬’ ও ‘ব্রি-৭৭’ নামের উফশী জাতগুলো এ অঞ্চলে ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পরিচালক। ডিএই’র ব্লক সুপারভাইজারগন সঠিক দায়িত্ব পালন করে না বলে যে অভিযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের জনবলের ঘাটতি প্রায় ৩৫Ñ৪০%। কিছু কর্মীর অবহেলা থাকলেও তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি’।
এব্যাপরে ‘ব্রি ’ বরিশাল অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর জানান, দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ, বিশেষ করে আমন মৌসুমে তা বৃদ্ধি করতে পারলে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়বে। তবে পরিবেশগত কারণে অনেক কিছু এখনো সম্ভব না হলেও আমাদের গবেষনা অব্যাহত আছে। এরপরেও বিদ্যমান জাতগুলো আবাদ করতে পারলে অদুর ভবিষ্যতেই এঅঞ্চলে দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন অন্তত ৩০ ভাগ বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন