শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’র পর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করে নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য পতনের মূল দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আচার্যকে আশ্বাস ও শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করার নির্দেশে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে অফিস করতে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতার তৈরি করবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম শিক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলেন, কার নির্দেশে হামলা হয়েছে সেটি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। এ বিষয়ে আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান উপাচার্যকে স্বাভাবিক নিয়মে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। উপাচার্য হিসেবে তিনি তার দায় এড়াতে পারেন না। শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যকে এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সব পক্ষের সহায়তায় আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পূর্বের মতো জৌলুস নিয়ে পালন করতে বলেছেন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনের সামনে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে পুলিশি হামলার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করে আহত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সকলের প্রতি সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এ প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সম্ভব হবে।
গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনার জন্য উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশকালে উপাচার্য বিরোধী ব্যাঙ্গাত্মক স্লোগান, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন লক্ষ্য করে একদিনের মধ্যে এসব মুছে ফেলার নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রীর কথামতো এসব মুছতে গেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শ্রমিকদের থামিয়ে দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দেয়াললিখন ও গ্রাফিতিকে প্রতিবাদের একটি ভাষা বলে দাবি করেন। তারা বলেন, সেদিনে বর্বোরোচিত পুলিশি হামলার পর থেকে আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্তের স্বাক্ষী এসব দেয়াললিখন ও গ্রাফিতিগুলো।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসার পূর্বে গণমাধ্যমকে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দম্পতিকে এমিরেটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের বিষয়টি জানানোর পর বৈঠককালে এ সম্পর্কিত কোনো দাবি ও প্রস্তাবনা করেন নি শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি উপাচার্যকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক পদ যোগ্য ব্যক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপন, দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, অনলাইন লেনদেনের একাউন্টগুলো পুনরায় চালু এবং সজল কুন্ডুকে এককালীন ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী অন্তত ৯ম গ্রেডের স্থায়ী সরকারী চাকরি প্রদানের দাবি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের সাথে খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে অত্যন্ত যৌক্তিক। তাদের দাবিগুলোর কয়েকটি ইতোমধ্যেই আমরা মেনে নিয়েছি এবং কয়েকটি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি আর কিছু দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উদ্যোগ নেব কারণ আমরা দেখলাম তাদের দাবির অধিকাংশই সার্বিকভাবে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষকদের মানোন্নয়ন সম্পর্কিত। মন্ত্রীর সাথে আলোচনায় গবেষণাখাতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ বার্ষিক বাজেটের অন্তত ৩০% বরাদ্দ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রীকে ন্যূনতম যোগ্যতা বেধে দেয়া, নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ডেমো ক্লাস নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নূন্যতম এভালুয়েশন নম্বরের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, নিয়োগের পূর্বে আবশ্যিক ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে গোপনীয় কোড ব্যবস্থা চালু, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশের সকল স্থায়ী স্থাপনা অপসারণ, বছরের ৩৬৫ দিন আবাসিক হল খোলা রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে শিক্ষার্থীদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে উন্মুক্ত স্থাপত্য প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করার প্রস্তাবনা রাখেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন