মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা জঙ্গি মেজর জিয়া এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই বইমেলায় একেবারে ঝুঁকি নেই বলা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
রোববার সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, অভিজিৎ রায়ের হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। এতে জঙ্গিদের ক্ষিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক। তাদের মূল হোতা মেজর জিয়া এখনো বাইরে। তাই ঝুঁকি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বইমেলায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেজর জিয়াকে গ্রেপ্তারে বিদেশ থেকেও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, আমরাও তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমডি কমিশনার বলেন, ‘জঙ্গিরা যদি আগুনসহ কোনো বিস্ফোরণ ঘটায়, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া থাকবে৷ আমরা আশা করছি, এ ধরনের কিছু ঘটবে না। কারণ, তাদের তৎপরতা প্রায় জিরো পর্যায়ে।’
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় লেখক ও ব্লগার মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সংগঠনটির প্রধান ও সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়া এখনো পলাতক। এ অবস্থায় গত ডিসেম্বরে মেজর জিয়ার সন্ধান পেতে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
মেলায় নজরদারির পরও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বই পাওয়া যায়—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মেলায় প্রতিবছর কিছু আপত্তিকর বই বের হয়ে আসে। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে প্রতিদিন বের হওয়া এত বই নজরদারি করা কষ্টসাধ্য। তিনি বলেন, ‘তাই এবার আমরা বাংলা একাডেমির লিটলম্যাগ চত্বরে সিটি এসবি থেকে সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। তাঁরা বইয়ের বিষয়ে নজরদারি করবেন। মেলা বন্ধের পর গভীর রাতে যদি এমন কোনো বই মেলায় ঢোকানো হয়, তাহলে এর দায়দায়িত্ব ওই স্টলের মালিক ও প্রকাশককে নিতে হবে।’
বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মেলাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহীদ মিনারকেন্দ্রিক ও শাহবাগ-নীলক্ষেতকেন্দ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে তল্লাশি দল থাকবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবে। মূল মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। এ ছাড়া কাউকে সন্দেহ হলে তাঁকে পৃথক কক্ষে নিয়ে তল্লাশি করা হবে বলেও জানান কমিশনার।
কমিশনার আরও বলেন, মেলা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে সাদাপোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্তসংখ্যক পোশাকধারী সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
মেলার আশপাশে মোটরসাইকেল ও গাড়ির টহল থাকবে। এ ছাড়া সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মেলায় মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিস মোতায়েন থাকবে। ডিএমপি কন্ট্রোল রুমের ভেতরে ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষ থাকবে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত মেলা প্রাঙ্গণে আসবেন ও নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন।’
মেলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরিধান করতে হবে। প্রবেশপথে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা থাকবে, মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। স্টলের কর্মীরা টিকা দিয়েছেন মর্মে কার্ড রাখতে হবে, অন্যথায় তাঁদের মেলায় থাকতে দেওয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন