এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে শীতকালে পানির নাব্যতা একেবারে শুকিয়ে যায়। পানি শুকিয়ে গেলে যেদিকে চোখ যায় শুধু খালি মাঠ দেখা যায়। এসময় হাওরপারের কৃষকরা বোরো ধানের পাশাপাশি শীতকালীন নানা সবজী চাষে আগ্রহ হয়ে উঠে তারা। গত কয়েক বছর থেকে হাওরের মাটি বাদাম চাষের উপযোগী ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাদাম চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে হাকালুকি হাওরে ব্যাপকহারে বাদাম চাষে আশার আলো দেখবেন হাওর তীরের চাষীরা। বর্ষায় হাকালুকি হাওরে থাকে অবিরাম জলরাশি। কিন্তু শীত মৌসুমে হাকালুকির বুক চিড়ে চারদিকে শুধু রবিশস্যের সবুজ সমারোহ। এ সময় পুরো হাওর যেন সবুজের হাতছানি দিয়ে ডাকে সবাইকে। শীত মৌসুমে সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
হাকালুকি হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফসলের মাঠ। ফসলের সবুজ মাঠের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আকর্ষণীয় বাদাম ক্ষেতের মাঠ। বাদামের মাঠে কাজ করার সময় চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকবছর থেকে হাওরের বুকে বাদামের চাষ করে আসছেন। কম খরচে ফলন ভালো হওয়ায় বেশিরভাগ চাষী অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এখন বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বাদামের পাশাপাশি অনেকে একই জমিতে সমন্বিতভাবে বিভিন্ন ফসলের চাষও করতে দেখা যায়।
হাওর পারের স্থানীয় বাসিন্দা বাদাম চাষী মো. হোসেন মিয়া, হারিছ আলী ও সাহেদুর রহমান জানান, গত কয়েকবছর যাবত তারা বোরো ধান ও শীতকালীন সবজীর পাশাপাশি নতুনভাবে বাদাম চাষ করে আসছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রথমে তাদেরকে ৮ কেজি করে চীনা বাদামের বীজ দেয়া হয়েছিলো। সেই বীজ থেকে ভালো ফলন পাওয়ায় তারা বাজার থেকেও আরো বীজ ক্রয় করে ভাগে ভাগে প্রায় ছয় কিয়ার জমিতে জমিতে বাদাম রোপণ করেন। এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর রোপনকৃত বাদামের চাষ থেকে আশা করছি ভালো বাদাম উৎপাদন হবে। বাদামের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের শাক-সবজির চাষও করেন।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ এর উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে ধীরে ধীরে বাদাম চাষের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে হাকালুকি হাওর জুড়ে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাদের অনেককেই সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে হাকালুকি হাওরে। বাদাম চাষের জন্য হাকালুকির মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে বাদামের ফলন ভালো হয়। এছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে। রোগ-বালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন