প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের দাদরা গ্রাম। ছায়া সুনিবিড় গ্রামটিতেই প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হিসেবে নয়, ব্রিটিশ আমলের একটি বাড়ির লিজ দেয়া হয়েছে বাৎসরিক মাত্র ১০ হাজার ৫শ’ টাকায়। বাড়িটিতে একসময় বসবাস করতেন হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের দুইভাই। বড়ভাই ডা. ইন্দুভ‚ষন ভট্টাচার্য্য, ছোটভাই বিধুভ‚ষন ভট্টাচার্য্য ছিলেন তৎকালীন কাকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আলিগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ৫ একর জায়গা নিয়ে ব্রিটিশ আমলে জমিদার বাড়ির মত করে তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি হতে পারতো তারাকান্দার অন্যতম প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন। কিন্তু বাড়িটিতে বর্তমানে বসবাস করছেন গোয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান হেলাল এবং শেখ রেজাউল করিম খোকন নামের দুই ভাইয়ের পরিবার।
এই পরিবারের দাবি, তারা বাৎসরিক ১০ হাজার ৫শ’ টাকায় লিজ নিয়েছেন ২ একর ৬০ শতাংশ জমিসহ বাড়িটি। অমূল্য প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন হতে পারার সুযোগ থাকার পরও কিভাবে এই সম্পদ লিজ দেয়া হলো তার উত্তর জানা নেই কারো। বাড়িটির চারপাশে রয়েছে আরও ৫ একরের মত সম্পত্তি। যা এখন কার্যত বেদখল হয়ে গেছে।
জমিদার বাড়ির আদলে তৈরি বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়েছে তার যৌবনাবেদন। বাড়িটিকে ঘিরে যে বাগান এবং গাছগাছালির অস্তিত্ব ছিলো বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী তার কোন অস্তিত্বই নেই এখন। বর্তমানে বসবাসরতদের হাতে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এর অবকাঠামো এমন শঙ্কার কথাই জানিয়েছেন দাদরা গ্রামে বসবাসরত কয়েকজন। কোটি কোটি টাকার সম্পদসহ উপজেলার অন্যতম প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন হিসেবে বাড়িটি এবং এর আশপাশের বেদখল হওয়া জমিগুলো উদ্ধারপূর্বক সরকারের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে প্রশাসন এমনটিই আশা সচেতন মহলের।
দাদরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মোতালেব জানান, ব্রিটিশ আমলে বাড়িটি তৈরি হয়েছে বলে শুনেছি। যার সঠিক বয়স আমাদের অজানা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িটিতে বসবাস করতেন ইন্দুভ‚ষণ এবং বিধূভ‚ষণ ভট্টাচার্য্য নামের দুইভাই। যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝে তারা ভারতে চলে যাবার পরই বেদখল হয়ে গেছে তাদের বিপুল পরিমাণ জমিজমাসহ রাজকীয় এই বাড়িটিও। এখন সেখানে একটি মুসলিম পরিবার থাকে। শুনেছি তারা বাড়িটি লিজ নিয়েছে। তবে দৃষ্টিনন্দন বাড়িটিকে প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে তারাকান্দায় অন্যতম পর্যটন আকর্ষন হয়ে উঠতো।
সরেজমিন পরিদর্শনের সময় বাড়িটিতে বসবাসরত শেখ রেজাউল করিম খোকনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এরশাদ সরকারের আমলে বাড়িটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন। যার বাৎসরিক লিজমূল্য ১০ হাজার ৫শ’ টাকা। আমরা প্রতিবছরই লিজের টাকা পরিশোধ করে আসছি। কোটি টাকা মূল্যের এবং প্রতœতাত্তি¡ক গুরুত্ব রয়েছে এমন বাড়িসহ সম্পত্তির লিজ কিভাবে পেলেন, এমন প্রশ্নে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে কাকনী ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ ইকবাল জানান, প্রত্যার্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা (অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন, ২০০১ এর ধারা ৯ অনুযায়ী প্রকাশিত অংশ-১) এবং প্রত্যার্পণ যোগ্য জনহিতকর সম্পত্তি ব্যতীত অন্যান্য প্রত্যার্পণ যোগ্য সম্পত্তির আইনের ধারা ৯(২) অনুযায়ী কেইসনথি ও তালিকাভুক্তির তারিখ ২৫/ঘ,চ/৭৭ এবং সরকার কর্তৃক দখল/নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের তারিখ ৯/৬/১৯৭৭ ইং।
সে মতে বাড়িটির মূল মালিক প্রসন্ন কুমার ভট্টাচার্য্যের ছেলে ইন্দুভ‚ষণ ভট্টাচার্য্য। যার বিআরএস খতিয়ান নং-২, দাগ নং-২০৭ (বাড়ি)-২ একর ৪০ শতাংশ, ৫৬৪ দাগে (খিলা)-১৩ শতাংশ, ৫৬৫ দাগে (খিলা)-৭ শতাংশ ভ‚মি। ফুলপুর উপজেলা ভ‚মি অফিস হতে বর্তমানে বসবাসরত গোয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান হেলাল এবং শেখ রেজাউল করিম খোকন নামে দুই ভাই লিজ হিসেবে গ্রহণ করেন। তারা প্রতিবছর নিয়মিত লিজের টাকা পরিশোধ করে আসছেন।
এ বিষয়ে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজাবে রহমতের সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার কথা জানান এবং বিষয়টির খোঁজখবর নিতে কাকনী ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ ইকবালকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন