বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

শিশু ক্যান্সার ভালো হয়

১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১০ এএম

শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০২ সালে পৃথিবীর ৯০টি দেশের ১৭৮টি জাতীয় সংগঠনের সম্মিলিত চাইল্ড ক্যান্সার ইন্টারন্যাশনাল (সিসিআই) কর্তৃক এ দিবসটি পালন শুরু হয়। সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়াও এ দিবসটির অন্যতম লক্ষ্য হল মৃত্যুহার হ্রাস করা এবং ক্যান্সার সম্পর্কিত ব্যথা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিশুদের দুর্দশা হ্রাস করা। এবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস পালিত হচ্ছে।

মূলত জেনেটিক কারণেই শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও শিশুদের ক্যানসার রোগের প্রকোপ বাড়ছে দিনে দিনে। শিশুদেরও ক্যানসার হতে পারে, এই ধারণাটাই অনেক অভিভাবকের জন্য নির্মম সত্য হিসেবে প্রকাশ পায়। মায়ের পেটে ভ্রুন অবস্থায় শিশুরা ক্যান্সার হবে এ ধরণের জিন নিয়ে তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, শিশুদের অনেক ক্যান্সারই নিরাময় হয় যদি সময়মতো, সঠিক উপায় অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়। আর প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। তবে নসিকাগ্রন্থি, কিডনি এবং চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।

বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। ২০০৫ সালেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে। ‘প্রতিবছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগীর মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টিআলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদাম মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। আর সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টক্সিনের উপস্থিতি, ক্যামিকেলস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যান্সার হয়।

★শিশুর ক্যানসারের লক্ষণঃ-
১) নাক থেকে রক্ত পড়া: শিশুর নাকের সম্মুখভাগে সূক্ষ্ম রক্তনালি থেকে রক্তপাত হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি কমে যায়। কিন্তু যদি না কমে, বরং ঘন ঘন রক্তপাত হতে থাকে, তাহলে সচেতন হতে হবে।
২) ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া: শিশুর শরীরের কোথাও কেটে গেলে খেয়াল রাখুন, ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে কি-না। সময় বেশি লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩) অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া: ব্যায়াম বা ওজন হ্রাসের কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি শিশুর ওজন কমে যেতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
৪) চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া: চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া। এটি চোখের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ।
৫) শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া শিশুর ক্যানসারের ঝুঁকির অন্যতম উপসর্গ।

৬) ঘন ঘন জ্বর: অকারণ ঘন ঘন জ্বর শিশুর লিউকেমিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
৭) চাকা বা মাংসপিন্ড: পেটের যেকোনো পাশে চাকা বা টিউমার অনুভূত হলে কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
৮) মাথাব্যথা: শিশুর অস্বাভাবিক মাথাব্যথা মস্তিষ্কের ক্যানসারের লক্ষণ।
৯) অচেতন হওয়া: তীব্র জ্বর বা যথাযথ কারণ ছাড়া শিশু যদি হুটহাট অচেতন হতে থাকে, তাহলে তা ব্রেন টিউমারের উপসর্গ হতে পারে।

১০) হাড়ে ব্যথা: কোনো আঘাত ছাড়াই হাড়ে তীব্র ব্যথা, খুঁড়িয়ে হাঁটা প্রভৃতি লক্ষণগুলো হাড়ের ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
১১) দুর্বলতা: অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা শিশুদের লিম্ফোমা নামক ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণ।

★শিশুর ক্যানসারের কারণঃ-
শিশুর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বংশগত কারণকেই প্রধান মনে করা হয়। এ ছাড়া নিম্নোক্ত কারণগুলোও রয়েছে—
* বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ
* অভিভাবকের ধূমপানের অভ্যাস
* গর্ভকালে মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাস
* শিশুর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
* হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

★শিশুরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. জন্ম থেকে প্রথম পাঁচ বছরঃ নিউরোব্লাস্টোমা, কিডনির উইল্মস টিউমার, রেটিনেব্লাস্টোমা, লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা এবং অন্যান্য মস্তিষ্কের টিউমার।
২. পাঁচ থেকে দশ বছরঃ লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা, সারকোমা (হাড়, মাংসের), জনন কোষের ক্যানসার।

৩. দশ বছরের ঊর্ধ্বেঃ লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, হজকিন্স ডিজিজ, অষ্টিওসারকোমা, ইউইং সারকোমা, অন্যান্য টিসু সারকোমা, জনন কোষের ক্যানসার।আর চোখের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, স্নায়ু ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও ব্রেইন ক্যান্সার। এ ছাড়া ব্লাড ক্যান্সার ও হাড়ের ক্যান্সারও হতে পারে।

আর ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শিশু লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। লিউকেমিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রায়ই জ্বর, ক্লান্তি, ত্বকে র‌্যাস, ঘাড়ের গ্রন্থিগুলোর ফোলাভাব সহ ত্বকের ফুসকুড়ি ইত্যাদি। কারো কারো কোনও লক্ষণ নাও থাকতে পারে। পরে রক্ত পরীক্ষায় লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। লিউকেমিয়া সন্দেহ হলে তা দ্রুত পরীক্ষা করা দরকার। যা লিউকেমিয়া নির্ধারণের পাশাপাশি লিউকিমিয়ার ধরণের বিষয়টিও নিশ্চিত করবে। শিশুদের মধ্যে সাধারণত লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বেশী হয় তবে মাইলয়েড লিউকেমিয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এসব রোগ সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের জন্য বিস্তারিত বিবরণসহ বংশগত কোনো কারণ আছে কিনা, তা জানতে হবে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে ৮০ শতাংশ শিশুর রক্ত ক্যান্সার লিউকেমেয়িার নিরাময় সম্ভব।

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
হোমিও চিকিৎসক,
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন