শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মেডিক্যাল স্ক্যানিংয়ের ফাঁদে শতাধিক নারীর সর্বনাশ

হাতিয়ে নেয়া হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। গ্রেফতার এক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

অনলাইনে চাকরির কথা বলে নারীদের প্রলোভন দেখাত আল ফাহাদ (১৯)। চাকরি নামে শতাধিক নারীর গোপন অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে সে। পরে এসব ভিডিও দেখিয়ে ভিকটিমদের নানাভাবে বø্যাকমেইলিং করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় ফাহাদ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার রাজধানীর গুলশানের নদ্দা এলাকা থেকে ফাহাদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে একটি দামি ক্যামেরা, দুটি ক্যামেরার লেন্স, একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিম কার্ড, একটি এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। এছাড়াও গুগল ও উইকিপিডিয়াতে টাইপিস্টের চাকরির কথা বলে প্রলোভন দেখাতো সে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, করোনা মহামারীর শুরু থেকেই অপরাধীরা ভার্চ্যুয়াল জগতের অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করছে। প্রতারকরা বিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা, প্রতারণা ও বø্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলছে। ভুক্তভোগী অনেকে ‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ ও র‌্যাবের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানায়। এছাড়া অনেকে র‌্যাবের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেন। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নদ্দা এলাকায় অভিযান চালায়। পরবর্তীতে ‘ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল স্ক্যানিং’-এর নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে বø্যাকমেইলিংয়ের অপরাধে আল ফাহাদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ জানিয়েছে, অসংখ্য নারীকে প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বøাকমেইলিংয়ের কৌশল উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রæপের মাধ্যমে অল্প বয়সী, ১০ শ্রেণী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারীদেরকে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যেমন গুগল-উইকিপিডিয়াতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। এসময় চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের (চাকরিপ্রার্থী) প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিনশ থেকে ৫০০ টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নেয়া হতো। এভাবে অনেক চাকরিপ্রত্যাশীকে আকৃষ্ট করত। অন্যদিকে মোবাইলে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন সময়ে ‘ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল’ করা হবে বলে জানানো হতো। প্রার্থীদের (নারীদের) বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত করত।
তিনি আরো বলেন, এসময় নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিওকলে মেডিক্যাল পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করত। পরবর্তীতে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হত। এভাবে অভিযুক্ত ফাহাদ শতাধিক নারীকে বø্যাকমেইল করেছে। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যাশীদের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হতো। ফাহাদ নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নারীকন্ঠে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুয়া নিয়োগ’ প্রক্রিয়া শেষ করত।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর নাম ব্যবহার করে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রথমে নিজেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিত। একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেছে বলে জানাত। পরবর্তীতে নিজেই ওই কোম্পানির এডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিত এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিতো। পুনরায় ওই অ্যাপস-এর মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নিজেই মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চ্যুয়াল মেডিক্যাল করানোর নামে ভিডিও করত। যেহেতু করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিক্যাল করা সহজ ছিল না, সেক্ষেত্রে ফাহাদ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের বø্যাকমেইল করত।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শতাধিক নারীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করেছে ফাহাদ। যারা তার ফাঁদে পা দিয়েছে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেয়া হত। এভাবে দেড় বছর ধরে শতাধিক নারীকে গোপন ভিডিও দেখিয়ে প্রতিনিয়মিত বø্যাকমেইলিং করত। আসামি ফাহাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সে একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে তার বাবার সঙ্গে রেলস্টেশনের পাশে একটি ফলের দোকানে বসত। ফল বিক্রির আড়ালে ফেসবুকে 'ঙহষরহব ঔড়ন ইউ' ও 'চধৎঃ ঞরসব ঔড়নং রহ উযধশধ' এবং 'চধৎঃ ঞরসব ঔড়নং রহ ইধহমষধফবংয' নামে গ্রæপে সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। পরবর্তীতে গ্রæপে দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে চাকরি দেয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছিল। প্রতারণা ও বø্যাকমেইলিংয়ের কাজে ফেসবুকে বেশ কিছু নারীদের ভুয়া আইডি ব্যবহার করত। ফাহাদ ইয়াবার কারবারের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Harunur Rashid ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:০৩ এএম says : 0
This cancer need radiation therapy urgently.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন