সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : আন্দোলন, সংগ্রাম, মিছিল-মিটিংয়ে নেতাদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করেও নেতৃত্বের জায়গায় পিছিয়ে রয়েছেন কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারী নেত্রীদের স্থান নেই বললেই চলে। তৃণমূলের নেতৃত্বে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা অনেকটা উপেক্ষিতই বলা যায়। অথচ নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রæতি ছিল, সব কমিটিতেই অন্তত ৩০ ভাগ নারী প্রতিনিধি থাকবে। কিন্তু বাস্তবে ওই প্রতিশ্রæতির লেশমাত্র নেই। সম্প্রতি ঘোষিত কুমিল্লা দক্ষিণ এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দেখা গেছে, নারী প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা নেহাতই কম। জেলার নারী নেত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দলে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ছাড়া অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ পাওয়া তাদের জন্য আকাশকুসুম ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহিলা আওয়ামী লীগ ছাড়া যেনো তাদের আর কোনো গতি নেই।
দীর্ঘ সময় পর কুমিল্লা দক্ষিণ এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক জেলা উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে মাত্র পাঁচজন নারী নেত্রীর স্থান হয়েছে। তাও গতানুগতিক মহিলাবিষয়ক সম্পাদকসহ নির্বাহী সদস্য পদে। ফলে দলের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে আসতে না পারায় কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। তৃণমূলে নারী প্রতিনিধিত্বের প্রাধান্য পিছিয়ে থাকায় ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে অনেকটা শঙ্কিত রয়েছেন কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা। কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে হেভিওয়েট নেতাদের দাপটের ভীড়ে নারী নেত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার সুযোগ হয়নি। আবার কমিটিতে ত্রিশভাগ নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়টিরও দৃশ্যমান উন্নতি ঘটেনি। কমিটিতে নারীদের ব্যাপকহারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আশানুরূপ ফল আসেনি। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নেত্রীরা যোগ্যতা অনুযায়ী দীর্ঘদিনেও দলের জেলা পর্যায়ের নির্বাহী কমিটিতে স্থান করে নিতে পারেননি।
দীর্ঘ সময় পর এবার কুমিল্লা উত্তর এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়েছে। নেত্রীদের অনেকেই আশা করেছিলেন, তারা দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারবেন। কিন্তু কমিটিতে স্থান হয়নি। কুমিল্লা জেলায় আওয়ামী লীগের যোগ্য ও রাজনৈতিক জ্ঞানে প্রাজ্ঞ অর্ধশতাধিক নেত্রী থাকলেও দুই সাংগঠনিক জেলায় এবারের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন মাত্র পাঁচজন নেত্রী। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এবার এসেছেন মাত্র চারজন নেত্রী। তারা হলেনÑ মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে দাউদকান্দির পারুল আক্তার, উপ-দফতর সম্পাদক পদে চান্দিনার নাজমীন আক্তার এবং নির্বাহী সদস্য পদে দেবীদ্বারের শিরিন আক্তার ও তিতাসের পারভীন আক্তার মুজিব। অন্য দিকে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে কেবল মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে নাঙ্গলকোটের নাসরিন আক্তার মুন্নির স্থান হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেত্রী জানান, ‘দলে কমিটিতে নারী নেত্রীদের জন্য পদ-পদবি জায়গা সঙ্কটের কারণে অনেক ভালো নেতৃত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। আবার নতুনরা রাজনীতিতে যুক্ত হতেও উৎসাহিত হচ্ছে না। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে মেয়েদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। আগে তো এমন ছিল না। আমরা তো ছাত্রলীগের রাজনীতি করেই আজকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। আমরা তো একসময় কলেজ ছাত্রীদের রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে কাজ করেছি। এখন তো আমাদেরই মূল্যায়ন হচ্ছে না। যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও মূল দলে স্থান হয় না। মহিলা আওয়ামী লীগ ছাড়া যেনো আমাদের আর কোনো গতি নেই। ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে তো আমরা সবসময় শঙ্কিত।’
কুমিল্লা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি জোবেদা খাতুন পারুল বলেন, ‘জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্বের অন্তত ৩০ ভাগ নিশ্চিত করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের যে নতুন কমিটি হয়েছে, তাতে নারী প্রতিনিধিত্বের হার কম হওয়ার বিষয়টি নেতারাই ভালো বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব এমপি বলেন, ‘কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্বের হার কম এটা ঠিক। তবে আমরা পর্যায়ক্রমে যোগ্য, মেধাবী ও সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন নারী নেত্রীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করব।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন