শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজরা আগামী নির্বাচনে যেন মনোনয়ন না পায় - ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৯ পিএম | আপডেট : ৮:১৬ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আর্থিক খাতে যোগ্যতা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। স্বাধীনতাবিরোধী, ঋণখেলাপি, করখেলাপি, বিলখেলাপি, দুর্নীতিবাজরা যেন আগামি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সে বিষয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ় অবস্থান দেখাতে হবে। ব্যাংকগুলো মধ্যরাতে সভা করে ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া নৈতিকতা বিরোধী। যে পরিমাণ ঋণ আদায় করা হয় তারচেয়ে অনেক বেশি অবলোপন করা হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে ১০ শতাংশ ঋণখেলাপির যে তথ্য দেয়া হয় সেটি সঠিক নয়। কোন ঋণখেলাপি যাতে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স এর সদস্য হতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংক মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে। একইসাথে ঋণখেলাপি ও আর্খিক খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারিদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে। আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সদিচ্ছা ও যোগ্যতার অভাব রয়েছে। তাই ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এড়িয়ে চলে। গণতন্ত্র ও সুশাসনের পাশাপাশি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন টেকসই হবে না। অনেক দৃশ্যনীয় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাবে শ্রীলংকার মতো দেশকে বাংলাদেশ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। আজ শনিবার এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে “আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছা” শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা দিনে দিনে ক্যান্সারের রূপ ধারণ করছে। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির পরিধি সঙ্কুচিত করছে। আর্থসমাজিক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাবলেও আর্থিক খাতের অনিয়ম আমাদের জন্য একটি কালো অধ্যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সরকার গর্ববোধ করলেও ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা লজ্জিত হই। দেশে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে উন্নয়ন হচ্ছে আবার মহালুটপাটও হচ্ছে। দেশে আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় দুষ্টু ক্ষত হলো ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচার। অর্থপাচারে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সম্পৃক্ত। কোভিড মহামারির দেড় বছরে দুবাইএ আবাসন খাতে চীনকে পিছনে ফেলে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে বেশি বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশীরা। জানা গেছে একশ্রেণীর বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলারা শুধুমাত্র বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের জন্য গত দেড় বছরে বিনিয়োগ করেছে ২৮৮ কোটি টাকা। এছাড়াও দুবাইএর বিভিন্ন ব্যাংকে কি পরিমাণে টাকা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে জমা করেছে এবং দুর্নীতির অর্থ বিনিয়োগ করেছে তার সঠিক হিসাব জানা যায় নি। বাংলাদেশ থেকে গত এক দশকে ৩২ জন ২০ লাখ পাউন্ড বাংলাদেশী টাকায় ২৪ কোটি টাকা করে বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করেছে। অভিবাসী ভিসা নামে এই সুবিধাটি অতিধনীরা নিয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে গোল্ডেন ভিসার নামে এই অর্থ কিভাবে গেল ? অন্যদিকে ঋণ জালিয়াতির সংস্কৃতি থেকে যেন আমাদের আর্থিক খাত কোনভাবেই শৃঙ্খলমুক্ত হতে পারছে না। ঋণখেলাপির সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সরকার ঋণ জালিয়াতি ও বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করলেও আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তরা নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঋণখেলাপি হয়েও জামানতবিহীন এলটিআর সৃষ্টি করে এবং খাস জমি মর্টগেজ দিয়ে ঋণ নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তরা।


আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নি¤েœর ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন। প্রতিযোগিতায় সমান নাম্বার পেয়ে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা যৌথভাবে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন