১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঐতিহ্যবাহী আবাসিক হল হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল আজ যেমন বয়সের ভারে জরাজীর্ণ তেমনই আবাসন সংকট, গণরুম -গেস্টরুম ও খাবারের দাম- মানের নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। বহিরাগতদের আনাগোনা ও অছাত্রদের আধিপত্য আরো তীব্র করেছে আবাসন সংকট। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজেছেন এই প্রতিবেদক। কথা বলেছেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল হক শিশির ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেনের সাথে। জানার চেয়েছেন হলের সার্বিক উন্নয়নে তাদের ভাবনা। জানতে চাইলে হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, পাঠকক্ষ, অডিটোরিয়াম, টিভিরুম, অতিথিকক্ষ, পাঠাগারসহ সার্বিক বিষয়ে নানামুখী সংস্কারের কথা জানান সভাপতি- সম্পাদক।
এক সাক্ষাৎকারে সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেন বলেন, কমিটি হওয়ার পর পরই আমরা আমাদের প্রভোস্ট স্যারের সাথে বসে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেছি। শিক্ষার্থীদের যেসব অভিযোগ অনুযোগ সব ওনার সাথে শেয়ার করেছি।
সবার প্রথম ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নয়নের প্রতি আমরা নজর দিয়েছি। হলে অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রিডিং রুম ও পাঠাগার রয়েছে- সেগুলোর উন্নয়নের জন্য আমরা চেষ্টা করতেছি। পাঠাগারকে কীভাবে আরো সমৃদ্ধ করা যায় সে ব্যাপারে ভাবতেছি। আমরা চাই একটা উন্মুক্ত পাঠাগার হোক যেখানে হলের সকল শিক্ষার্থী পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, খাবারের দাম কমানো, মান ও পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা বলেছি। ইতোমধ্যে হাউজ টিউটরদের নিয়ে ৩- ৪ বার ক্যান্টিন পরিদর্শন করেছি। ফলে ইতোমধ্যে খাবারের মানে কিছুটা পরিবর্তনও এসেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
গণরুমের বিষয়ে হোসেন বলেন, এই গণরুম তো আসলে ছাত্রলীগের তৈরি কিছু না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবতা। অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া এটা উচ্ছেদ করা সম্ভব না। বরং যারা প্রথম বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তাদের কিন্তু আইনত হলে থাকার কোন নিয়ম নেই। তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা এই ছেলেগুলো যাবে কই? এদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ব্যানারে তাদেরকে আমরা হলে থাকার ব্যাবস্থা করে দেই।
নবীন শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক গেস্টরুমের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে যেমন ছিল ছিল, আমরা এখন নতুন কমিটি পেয়েছি ; এখন থেকে গেস্টরুম নামক কোনো শব্দ আর থাকবে না। থাকলেও সেটা আর আতঙ্কের নাম হবে না। সেখানে জুনিয়র সিনিয়রের একটা মেলবন্ধন তৈরি হবে। বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে আলাপচারিতা হবে। গেস্টরুম মানে হবে মধুর আলাপন। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের পদপ্রার্থীর পথ পাড়ি দিয়ে আজকে নেতা হয়েছি। দীর্ঘ এ সময়ে কোনো নেতিবাচক ভূমিকায় আমাদের নাম উঠেনি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি রক্ষা করার। মুহসীন হল ছাত্রলীগকে তৈরি করব মডেল হিসেবে।
হলে বহিরাগতদের বিষয়ে এই নেতা বলেন, প্রত্যেকটা হলেই মোটামুটি কিছু বহিরাগত থাকে। অতীতেও থেকে আসছে তবে আমাদের হলে কমিটি দেওয়ার আগে ছাত্রলীগের যে সব নেতাকর্মী আছে তাদের রুমে রুমে গিয়ে দেখে এসেছি কিন্তু সেখানে একটা বহিরাগতও আমরা পাইনি। কিছু রয়েছে যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে কিন্তু হলে থাকছে; এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে একটু ভেবেচিন্তে নিতে হবে। কারণ এদের অনেকেই সামনে পরীক্ষা দিবে, কারো এক মাস পর ভাইভা, কারো রিটেন; এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়া মানবিকতারও লঙ্ঘন। সুতরাং মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিব।
সভাপতি শহিদুল হক শিশির বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যেমন নিজের জীবন দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন তেমনিভাবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকুন দিয়ে কাজ করব যাতে পরবর্তী প্রজন্ম একটা ভালো পরিবেশ পায় সোনার বাংলা বিনির্মানের।
গণরুমে বিলুপ্তির বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া আসলে আবাসন সমস্যা দূর করা প্রায় অসম্ভব। ক্যান্টিনের খাবারের গুণগত মান রক্ষার্থে হল প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে শিগগিরই একটা টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান শিশির।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন