বুস্টার ডোজ গ্রহণকারী শতভাগ মানুষের শরীরে এন্টিবডি পাওয়া গেছে। এছাড়া ২ ডোজ টিকা গ্রহণের ৬ মাস পর ৭৩ শতাংশের এন্টিবডি হ্রাস পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কোভিড-১৯ এর টিকা সংক্রান্ত এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। আজ বিএসএমএমইউ’র শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ‘হেমাটোলজিক্যাল প্যারামিটারর্স এন্ড এন্টিবডি ট্রিটরি আফটার ভ্যাকসিনেশন অ্যাগেইনষ্ট এসএঅঅরএস-কোভ-২’ শীর্ষক গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, দুই ডোজ টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হবার ১ মাস পর, দুই ডোজ টিকা গ্রহণের ৬ মাস পর এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণের ১ মাস পর শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি এন্টিবডি এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হবার ১ মাস পর এবং তন্মধ্যে ৩০ জনের দুই ডোজ টিকা গ্রহণের ৬ মাস পর ও বুস্টার ডোজ গ্রহণের ১ মাস পর এন্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সাথে জড়িত ছিলেন। অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণকারী আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানীসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন, তবে এ ধরণের রোগের কারণে এন্টিবডি তৈরিতে কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি।
ফলাফলে জানা যায়, শতকরা ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী টিকা গ্রহণের পরে মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছিলেন, তবে রক্ত জমাট বাধা বা অন্য কোন জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গবেষণাকালীন পরিলক্ষিত হয়নি। টিকা গ্রহণের পর প্রথম ধাপে ২২৩ জনের মাঝে ৯৮ শতাংশের শরীরে এন্টিবডি এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। যারা আগেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি এন্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল।
টিকা গ্রহণের ৬ মাস অতিবাহিত হবার পরে দেখা যায়, অধিকাংশের ক্ষেত্রেই এন্টিবডির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন টিকা গ্রহীতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশের এন্টিবডির মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, গড় এন্টি বডির মাত্রা ৬৭৯২ অট/সখ থেকে ৩৯৬৩ অট/সখ তে নেমে এসেছে। এ সময় ২ জন টিকা গ্রহীতার দেহে পর্যাপ্ত এন্টিবডি পাওয়া যায়নি। বুস্টার গ্রহণের পরে শতভাগ অংশগ্রহণকারীর দেহেই এন্টিবডি পাওয়া যায় এবং প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এন্টিবডির মাত্রা পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে গড় এন্টিবডির মাত্রা ২০৮৭৮ অট/সখ এ এসে দাঁড়ায়। রক্তের প্যারামিটার গুলোতে (হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেটসহ অন্যান্য) উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।
এই গবেষণা থেকে টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বুস্টার ডোজ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের জন্য সমসাময়িক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকাদানের উদ্দেশ্য হল মানবদেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করা, যা ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার এবং আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতার সম্ভাবনা কমায় বলে পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে। পাশাপাশি গবেষণালব্ধ ডাটায় দেখা যায়, সময়ের সাথে এন্টিবডির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যায়, আবার বুস্টার ডোজের মাধ্যমে পুনরায় কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ টীকার প্রথম ডোজ এবং সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ এবং ৩০ লাখের বেশি মানুষ টিকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।
এই গবেষণা কার্যক্রমে হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ সহ-গবেষক হিসেবে গবেষণা প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো.জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান উপস্থিত ছিলেন ।
সূত্র: বাসস
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন