করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার পর মানুষের শরীরে পাঁচ গুণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। টিকা গ্রহণকারী ২২৩ জনের ওপর চালানো এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ উপাচার্য ও গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এই তথ্য তুলে ধরেন। গবেষণা প্রকল্পটিতে সহ-গবেষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, টিকা নেওয়ার পর প্রথম ধাপে ৯৮ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি এন্টিবডি পাওয়া পাওয়া গেছে। টিকা নেওয়ার ৬ মাসের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। বুস্টার দেওয়ার পর শতভাগ অংশগ্রহণকারীর শরীরেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া রক্তের প্যারামিটারগুলোতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতার প্রমাণ এ গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বুস্টার ডোজ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের জন্য সমসাময়িক গবেষণার প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরো জানান, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য সেবাদানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণকারী আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। তবে এ ধরনের রোগের কারণে অ্যান্টিবডি তৈরিতে কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী টিকা নেওয়ার পর মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু রক্ত জমাট বাধা বা অন্য কোনো জটিল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গবেষণাকালীন সময়ে পরিলক্ষিত হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণায় দুই ডোজ টিকা নেওয়ার ১ মাস পর, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার ৬ মাস পর এবং বুস্টার ডোজ নেওয়ার ১ মাস পর শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকা নেওয়ার ১ মাস পর এবং তন্মধ্যে ৩০ জনের দুই ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পর ও বুস্টার ডোজ নেওয়ার ১ মাস পর অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ৪২ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় ৬০ লাখ। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৯ হাজার মানুষ মারা গেছেন।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ টাকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ। এবং ৩০ লাখের বেশি মানুষ টিকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি করোনার প্রথম ডোজ নেয়া শেষ হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন