শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

ক্যান্সার ও মুখের রোগে সচেতন হোন

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১২ এএম

বাংলাদেশে ওরাল ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে, তামাক এবং তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া। ক্যান্সার রোগীদের সচেতনতার অভাব এখনও রয়ে গেছে। ওরাল ক্যান্সার এর শুরুতে অনেক সময় রোগীর কোনো ব্যথা থাকে না। ফলে রোগী এর কোন গুরুত্ব দেয় না এবং সঠিক সময়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হন না। ক্যান্সার নিয়ে যখন রোগী ডাক্তারের কাছে আসেন, তখন দেখা যায় ক্যান্সার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে অর্থ্যাৎ ক্যান্সারের মেটাসটেসিস হয়ে গেছে। ক্যান্সার যত দেরীতে ধরা পড়বে চিকিৎসা ব্যয় তত বেশী বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাই ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা সেবায় ব্যবধান কমাতে হবে। শহর এবং গ্রামের মানুষের সবার ক্যান্সার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে ওরাল ক্যান্সারের পূর্বে প্রিম্যালিগন্যান্ট লিশন বা ক্যান্সার পূর্ব রোগ যেমন মুখের অভ্যন্তরে লাল বা সাদা প্যাচ বা দাগের মত দেখা যায়। সাধারণত জিহ্বায়, গালের অভ্যন্তরে এবং মুখের ফ্লোরে ক্যান্সারের লক্ষণ এবং ক্যান্সার দেখতে পাওয়া যায়। তাই মুখের অভ্যন্তরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই সচেতন হবেন। কাল বিলম্ব না করে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখবেন এসব চিকিৎসা করার জন্য অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষার প্রয়োজন হয় না। তাই অল্প খরচেই আপনি সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। ভিটামিন-বি৬ বা পাইরিডক্সিন এর অভাবে আপনার খশখশে ঠোট এবং ক্রাকড্ বা ফাটা ঠোঁট হতে পারে। এছাড়া ঠোঁটের প্রদাহ দেখা দিতে পারে। তাই ঠোঁটের রোগে অনুমান ভিত্তিক কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করবেন না। ঠোঁট ফেটে গেলে ঠোটের চামড়া টেনে তুলতে যাবেন না। নিজের ঠোঁট নিজে কামড়াবেন না। অতিরিক্ত মানসিক চাপে দাঁত কামড়ানো, ক্যানকার সোর বা ক্ষত, মাড়ি রোগ এবং টেম্পেরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট এর অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। তাই মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন। এডরেনালিন হার্ট রেট বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। দাঁতের চিকিৎসা করার সময় রোগী অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে চিকিৎসা শুরু করার আধ ঘন্টা আগে ট্রাংকুলাইজার জাতীয় ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারে রোগীর পূর্ণ ইতিহাস গ্রহণ করার পর। হাইপোথাইরয়ডিজমে রোগীদের জিহ্বায় মেটালিক স্বাদ পাওয়া যেতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে অহেতুক কোনো ঔষধ খাবেন না। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ম্যাক্রোগ্লসিয়া বা জিহ্বা বড় হয়ে যেতে পারে। ঠোঁট বড় হয়ে যেতে পারে (পানি এবং প্রোটিন জমা হওয়ার কারণে)। ম্যান্ডিবল আন্ডার ডেভেলপড বা সার্বিকভাবে গঠন হয় না অথবা গঠন কম হয়। পেরিওডন্টাল রোগের ঝুঁকি থাকে। পেরিওডন্টাল রোগ থাকলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আপনার যদি নাক ডাকার অভ্যাস থাকে বা মুখ খোলা রেখে ঘুমান তাহলে আপনার মুখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনার মুখ ব্যাকটেরিয়ার আরও নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠতে পারে যার ফলে মর্নিং ব্রেথ এর সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় কখনই গলা শুকিয়ে যেতে দিবেন না। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। আপনি যদি চিৎ হয়ে ঘুমান তাহলে নাক ডাকার অবস্থা বেশি হতে পারে। একপাশ হয়ে ঘুমালে নাক ডাকার পরিমাণ কমে যাবে। শ্বাসনালী সংক্রমণে যেমন ঠান্ডা, কফ এবং সাইনাস সংক্রমণে ব্যাকটেরিয়াযুক্ত মিউকাস নাক ও মুখ দিয়ে নিঃসরিত হতে পারে। যার ফলে আপনার ব্রেথ বা নিশ্বাস এ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যখন আপনার ঠান্ডা চলে যায় তখন আর এ ধরনের সমস্যা থাকে না। কিছু ঔষধ মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ সেসব ঔষধ মুখকে শুষ্ক করে দিতে পারে। অন্যান্য ঔষধের মাঝে নাইট্রেট যা হার্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি, কিছু ঘুমে সহায়ক ঔষধের কারণে কিছু রাসয়ানিক নিঃসরিত হয় যা আপনার নিঃশ্বাসকে গন্ধযুক্ত করে দিতে পারে। যখন সেগুলো আপনার শরীরে ভেঙ্গে যায় তখন আপনি যদি বেশি ভিটামিন গ্রহন করেন তাহলে মুখে গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস হতে পারে। তাই ভিটামিন ইচ্ছা মত গ্রহণ করা যাবে না। মুখের দীর্ঘ মেয়াদী আলসারের ক্ষেত্রে এপস্টেন বার ভাইরাস সম্পৃক্ত থাকতে পারে। এপস্টেন বার ভাইরাস দেহে ইনফেকসাজ মনোনিউক্লিওসিস করে যার কারণে লিম্ফনোড ফুলে যেতে পারে এবং প্লীহা বড় হয়ে যায়। এছাড়া এটি বারকিটস্ লিম্ফোমা এবং ন্যাসোফ্যারিনজিয়াল ক্যান্সারের সাথে জড়িত। তাই শরীরের কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে অথবা মুখের কোনো আলসার ভালো না হলে অহেতুক পরিক্ষা-নিরিক্ষা না করে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা সারা বিশ্বব্যাপী দশটি সচরাচর পরিলক্ষিত ক্যান্সারগুলোর একটি। ঠোঁটের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাধরণত নিচের ঠোঁট বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। মুখের ভিতরের চেয়ে ঠোঁটের ক্যান্সারের প্রগনোসিস বা আরোগ্য সম্ভাবনা ভালো। তাই ঠোঁটের ক্যান্সার হলে ভয় পাবেন না। ঠোঁটের ক্যান্সার লিম্ফনোড বা লসিকা গ্রন্থিতে ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভ করে। সবার আগে সাবমেন্টাল লিম্ফনোড আক্রান্ত হয়ে থাকে। শুধু প্রয়োজন সময়মত চিকিৎসা করা। হেমানজিওমা রক্তনালীর বিনাইন অর্থ্যাৎ নন-ক্যান্সারাস টিউমার। হেমানজিওমা শরীরের যে কোনো স্থানে হতে পারে। কিন্তু বেশি দেখা যায় মুখমন্ডল, মাথার স্কাল্প।

আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে ক্যাপোসিস সারকোমা ইমমিউনোসাপ্রেসিভ অবস্থায়ও দেখা যেতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে সাইক্লোসপরিন সেবন করলে এমনটি হতে পারে। তাই সারকোমার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের সময় রোগীর সব ধরনের প্রাথমিক ইতিহাস গ্রহণ করতে হবে। চুমুর মাধ্যমে মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের ঝিল্লির প্রদাহ হতে পারে। তাই যেখানে সেখানে চুমু বা ব্যাভিচার নয়। শুধু তাই নয়, চুমুর মাধ্যমে মাড়ি রোগ সহজেই বিস্তার লাভ করতে পারে। আর মাড়ি রোগ থাকলে যদি আপনার হৃদরোগ থাকে তাহলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মুখের অভ্যন্তরের রোগ লাইকেন প্ল্যানাসের সাথে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস সংযুক্ত থাকতে পারে। তাই মুখের লাইকেন প্ল্যানাস রোগ নির্ণয়ে বায়োপসি করার আগে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে রোগীর শরীরে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস আছে কিনা? হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের কারণে লিভার সিরোসিস থেকে শুরু করে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। ক্যান্সারের কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। তাই শুধু করোনা ভাইরাস নয় বরং সব ভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন