রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাজেটে স্বচ্ছতা নেই, তথ্য উপাত্ত বিশ্বাসযোগ্য নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

সরকারি তথ্য-উপাত্ত ও বাজেটের হিসাবের স্বচ্ছতায় ঘাটতি আছে বলে মনে করে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তথ্য-উপাত্ত বা ডেটা উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল শেরাটনে ‘ফিসক্যাল ডাটা ফর পলিসি মেইকিং ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে সেমিনারে এ কথা বলা হয়।

বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সদস্য, অর্থনীতিবিদ, সাবেক আমলাসহ বিশিষ্টজনরা আলোচনায় অংশ নেন। এতে বক্তব্য রাখেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহানও। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খা। সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সরকারের আর্থিক খাতের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। যথাসময়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে কত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তা জানা যায় না। এতে বলা হয়, রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের মধ্যে গরমিল রয়েছে। ব্যাংকঋণের তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মস‚চি বাস্তবায়নের বিষয়ে আইএমইডির দেয়া তথ্যের সঙ্গে অর্থ বিভাগের তথ্যে মিলে নেই বলেও উল্লেখ করেন তৌফিকুল। অডিট রিপোর্ট ঠিকমতো প্রকাশ হয় না। বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয় তার তথ্য জানা গেলেও প্রকৃত খরচ জানা যায় না।

তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি হলে সরকারের নীতি গ্রহণে অসুবিধা হয় বলে মনে করেন জনপ্রতিনিধিরা। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেন তারা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি হিসাবসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, তথ্য-উপাত্ত একটি বড় ইস্যু এবং চ্যালেঞ্জও বটে। পর্যাপ্ত ডেটা না থাকলে কোনো কর্মকান্ড এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। এর অভাবে বাজেট প্রণয়ন ব্যাহত হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাজেটকে আরও স্বচ্ছ হতে হবে এবং বাজেট প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, শুধু বাজেট প্রণয়ন করলেই হবে না, এমপিদের দায়িত্ব হচ্ছে বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা।

আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ না হলে এবং সহজভাবে সরবরাহ না করা গেলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের সমস্যা হবে। এ জন্য তথ্য-উপাত্ত কীভাবে সহজভাবে সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

আইন ও বিচারসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সরকারি আয়-ব্যয়ের ডেটা উন্মুক্ত না। এখানে যথেষ্ট অস্বচ্ছতার ঘাটতি আছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমার নির্বাচনি এলাকায় যত গরিব লোক আছে, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি। গত সাড়ে তিন বছরে কেউ আমাকে বলেনি আপনার এলাকায় বাজেট কত, কত খরচ হলো।

জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ৩০০ এমপির তেমন কোনো ভ‚মিকা থাকে না। আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। বাজেট তৈরিতে কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে, জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি ছাড়া কোনো করারোপ করা যায় না। অথচ এটা নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা হয় না।

পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, উন্নয়ন বেশি করতে চাইলে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ সহজ করতে হবে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আর্থিক খাতের প্রায় সর্বক্ষেত্রেই অটোমেশন হচ্ছে। এর ফলে আশা করা যাচ্ছে তথ্য সরবরাহ আরও সহজলভ্য হবে। তিনি বলেন, ইতিবাচক দিক হচ্ছে বাজেট সিস্টেমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে করে বাজেট আরও স্বচ্ছ হবে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা পাওয়া যায় না। এতে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জিডিপির প্রবৃদ্ধির অর্ধবার্ষিক হিসাব প্রকাশের পরামর্শ দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এটা করা হলে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং জিডিপির হিসাব নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দেয় তার অবসান ঘটবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন