বরিশাল বিমান বন্দরের নানা অনিয়ম ও ত্রুটির পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও পরিস্থিতির উন্নয়ন এখনো আশাব্যঞ্জক নয়। অভ্যন্তরীণ এ বিমান বন্দরটির তেমন কোন উন্নয়নও হচ্ছে না গত কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সরকারি-বেসরকারি ৪টি ফ্লাইট অবতরণ করে এ বিমান বন্দরে। গত ২৬ বছরেও এ বিমান বন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কোন যন্ত্রপাতি বসেনি। এরমধ্যে যখন দুটি ফ্লাইট একসাথে বিমান বন্দরে থাকে তখনই কনকর্স হলে যাত্রীদের বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। এখানে দুটি ফ্লাইটের যাত্রীদের বসার মত কোন ব্যবস্থা নেই। কনকর্স হলের এরাইভেল ও ডিপার্চার লাউঞ্জে পর্যাপ্ত শৌচাগার পর্যন্ত নেই।
বছর দুয়েক আগে রানওয়ে লাইটিং ও টার্মিনাল ভবনে লাগেজ ব্যবস্থায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় এখানের ৬ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়েটি সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের একটি প্রকল্পের কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু পুরো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে খোদ কর্তৃপক্ষের মধ্যেই উৎকন্ঠা রয়েছে। সাম্প্রতিককালে বরিশাল বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায় থেকে সরেজমিনে অনুসন্ধান চালানো হয়। সে অনুসন্ধানে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণসহ গুরুতর অনিয়ম ও অব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে বরিশাল বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি কর্ম পরিকল্পনাও চাওয়া হয়।
এ বিমান বন্দরে উড়োজাহাজের নিরাপদ পরিচালনা নিশ্চিতে নিরাপত্তা প্রশ্নে যেসব পূর্বশর্ত পূরণ অত্যন্ত জরুরি তার ১৫টিই অনুপস্থিত বলে প্রবিবেদনে বলা হয়েছে। সম্প্রতি বিমান বন্দরের রানওয়ের পূর্বপাশ ঘেঁষে থাকা ঘাসের জঙ্গলে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিমান বন্দরের দমকল কর্মীদের প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুনের উৎস সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারেননি।
বিমান বন্দরের রানওয়েতে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি ‘লাইন মার্কিং’ পর্যন্ত এতদিন ঘাসে ঢাকা ছিল। সম্প্রতি রানওয়ের দু’পাশের ঘাস কাটা শুরু করেছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে এসব বিষয়ে বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম তালুকদারকে তার সেল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
গত মাসে বেবিচকের পরিদর্শন টিম সরেজমিনে অনুসন্ধান শেষে তাদের রিপোর্ট জমা দেন ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড রেগুলেশন এবং আইএ বিভাগের পরিচালকের কাছে। পরে পরিচালক মুকিত উল আলম এক চিঠিতে বরিশাল বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপকের কাছে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলে জানা গেছে। বেবিচক প্রকৌশল দফতর থেকেও একটি নির্দেশনা পাঠানো হয় বরিশালের ব্যবস্থাপককে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে ত্রুটি সমূহ দূর করতে তাকে ২০ কর্মদিবসের মধ্যে ঢাকায় একটি কর্ম পরিকল্পনা পাঠাতেও বলা হয়। পরিদর্শন রিপোর্ট অনুযায়ী, ফ্লাইট ওঠানামাসহ বিমান বন্দর সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের যে এরোড্রাম ম্যানুয়াল থাকার কথা, তা না পাবার কথাও বলা হয়েছে। ডিজঅ্যাবল এয়ারক্র্যাফট প্ল্যান না পাবার কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে। ফলে কোন কারণে এয়ারক্রাফট অচল হলে সেটিকে রানওয়ে বা এ্যাপ্রোন থেকে সরানো না গেলে ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।
রানওয়েতে উড়োজাহাজ অবতরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি টিএইচআর এবং সেন্ট্রাল লাইন মার্কিং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সেন্ট্রাল লাইন থেকে প্রস্থের উভয় প্রান্তে ১৫০ মিটার দূরত্বে যে আরডব্লিউওয়াই সাইড স্ট্রিপ থাকার কথা তারও অস্তিত্ব নেই রানওয়েতে। পর্যবেক্ষণ দলের প্রতিবেদনে রানওয়ের পাশের ঘাস বড় হয়ে স্ট্রিপ ঢাকা পড়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরে সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির সদস্য (অর্থ) মো. শফিকুল ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) মোয়াজ্জেম হোসেন এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল হাসিব বরিশাল বিমান বন্দর পরিদর্শন করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন