রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

২১ বছর ধরে চলছে কাজ

স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

‘২১ বছর ধরে সেতুর কাজ নিয়ে চলছে ভানুমতির খেল। জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি বালুনদে ব্রিজ হইবো। ৫০ বছর চলে গেল, ব্রিজ আজও হইল না। আমাগো আশা-আকাঙ্খা স্বপ্নই রয়ে গেল। নিজের ২ বিঘা জমির উপর দিয়া সেতু আর রাস্তা হইবো, সেই খুশিতে জমি অধিগ্রহণ না করলেও কোনো মামলা করিনি। কোনো বিলও দিল না, রাস্তা-সেতুও হইল না’ -বলছিলেন উপজেলার খামারপাড়া এলাকার জমি হারানো লিখন আহমেদ।

৫০ বছরেও শেষ হল না বালুনদের সেতুর কাজ। দ্বিতীয় দফায় নতুন করে কাজ শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)-এর বাধার মুখে আটকে গেল রূপগঞ্জের বালু নদের স্বপ্নের সেতু। সেতুটি নিয়ে গত ৫০ বছর ধরেই চলছে গোলক ধাঁধাঁ। স্থানীয়রা বলছেন, সেতু নির্মাণ না হলে বিক্ষোভ, মানবন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭৫.৩০ মিটার দৈর্ঘ্য বালু নদের সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু ২০০১ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পান মেসার্স ইস্টার্ন ট্রেডার্স লিমিটেডের ঠিকাদার জাহিদ হোসেন।
স্থানীয় আলামিন মিয়া বলেন, যে নদীতে নৌকা ছাড়া ছোট ট্রলারও চলতে পারে না, সে নদীর ব্রিজে বিআইডব্লিও বাধা বা আপত্তি জানায় কীভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগ-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সেতুটির নির্মাণের সময় ভার্টিকেল ক্লিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল হতে ১২ দশমিক ২০ মিটার রাখতে হবে। এক গার্ডার থেকে অপর গার্ডারের মধ্যে ৭৬ দশমিক ২২ মিটার ক্লিয়ারেন্স থাকতে হবে। বালু নদীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নদী হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। সেতু ডিজাইন বিভাগ নদীটিকে তৃতীয় শ্রেণির বিবেচনায় ডিজাইন সম্পন্ন করে। এ ডিজাইন অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করে গত ১৬ মে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সেতুর প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি জানায়।
তিনি জানান, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি ১০৯ মিটার দীর্ঘ সেতু এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ১১০ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ কায়েতপাড়া সেতুটি নির্মাণ করেছে বালু নদীকে তৃতীয় শ্রেণির নদী অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রেখে। সেতু দুটির মধ্যখানে সওজ-এর নির্মাণাধীন আমাদের সেতু। ওই দুটি সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং এক গার্ডার থেকে অন্যটির দূরত্ব রাখা হয়ে যথাক্রমে ৩৪ দশমিক ৫০ মিটার এবং ২৫ দশমিক ৫০ মিটার।
তিনি আরো বলেন, আমরা সরেজমিনে দেখেছি, বালু নদী একটি শাখা নদী। সেখানে বড় কোন নৌযান চলাচল করে না। শুষ্ক মৌসুমে নদীটিতে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ মিটার পানি থাকে এবং এর প্রশস্থতা ২৫ থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে নেমে আসে। এছাড়াও আমাদের সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৭৫ দশমিক ৩০ মিটার। বিআইডব্লি-উটিএ বলেছে, গার্ডারের মাঝে গ্যাপ রাখতে হবে ৭৬ দশমিক ২২ মিটার। অথচ নদীটির বিদ্যমান অবস্থায় এ ধরনের প্রশস্থতা নেই।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণ হলে রূপগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠের খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। সেতুটি নির্মিত হলে কাঁচপুর ও সুলতানা কামাল সেতুর যানজট কমে যাবে। দেশের উত্তরাঞ্চল সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ ১০ জেলার যানবাহন অতি সহজে ভুলতা দিয়ে কায়েতপাড়া হয়ে রাজধানী রামপুরায় প্রবেশ করতে পারবে।
প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেতুটি নির্মাণ না হলে ইতঃপূর্বে যে টাকা খরচ হয়েছে তার পুরোটাই অপচয় হবে। আর সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে রূপগঞ্জের সাথে সড়কপথে রাজধানীর সরাসরি সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক) বলেন, বালু নদের সেতুটি হলে রূপগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ খুব সহজ হবে। আর কায়েতপাড়া ইউনিয়নবাসীর জন্য এ সেতু স্বপ্ন। তাই লাখো মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইন শা আল্লাহ এ সেতু হবেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন