করোনাকালে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা সবচেয়ে বেশি বিষন্নতায় ভুগছেন। রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাইরে হাঁটাচলা করতে গিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি, একবার আক্রান্ত হলে তা আরও মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা বিষন্নতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জনগণকে সচেতনতায় প্রতিবারের মতো আজ দেশব্যাপী ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালিত হচ্ছে। একইসঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও করোনা প্রতিরোধে সচেতন হোন’। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় বারডেম থেকে রমনার টেনিস ক্লাব পর্যন্ত সচেতনাতমূলক সেøাগান সংবলিত প্লাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবেন। সকাল সাড়ে এগারটায় বারডেম অডিটোরিয়ামের তৃতীয় তলায় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখবেন সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, রোটারী জেলা ৩২৮১-এর গভর্নর ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী ও বারডেমের মহাপরিচালক অধ্যাপক এম কে আই কাইয়ুম চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক ফারুক পাঠান।
এছাড়া সকাল ১০টায় বারডেম অডিটোরিয়ামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বারডেম ক্যাম্পাস এবং এনএইচএন ও বিআইএইচএস-এর বিভিন্ন কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে ‘কান্তির বিশেষ প্রকাশনা, সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হবে। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল এ উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালের চতুর্থ তলায় স্বল্পমূল্যে হার্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে।
ডায়াবেটিস চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এই রোগ এখন মহামারি রূপ নিচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৮৪ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যাদের চিকিৎসায় ১৫০ জন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট (ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ) রয়েছেন। এ হিসাবে প্রতি ৫৬ হাজার রোগীর সেবায় চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র একজন। আর মোট জনসংখ্যা হিসাবে প্রতি ১২ লাখ মানুষের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এছাড়া দেশে শতকরা ২০ জন মহিলা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে এসব মায়েদের গর্ভস্থ শিশুর আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, বিষন্নতা ডায়াবেটিস হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে একটি। একইসঙ্গে বিষন্নতাও ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ। পৃথীবিতে যেসব মহামারি এসেছে এর মধ্যে করোনা মানুষের ওপরে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে আগে থেকেই বিষন্নতা ছিল। তবে করোনাকালে এই হার আরও বেড়েছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুনতাসীর মারুফ বলেন, শারীরিক যে রোগগুলোর সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক বেশী দেখা যায়, তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। মানসিক রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে ডায়াবেটিসে ভোগেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন