গণটিকার দ্বিতীয় দিন গতকাল রোববারের রাজধানীর টিকাকেন্দ্রগুলোতে ছিল প্রচণ্ড ভীড়। বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় লাখ লাখ মানুষ রোববারও টিকা গ্রহণ করেছেন।
শনির আখড়ার হেলেনা খাতুন সকাল ৮ টায় চাইল গাইট স্কুল টিকা কেন্দ্রে টিকা নিতে লাইনে দাঁড়ান। দেড় ঘন্টা অপেক্ষার পর টিকা পেয়ে দারুণ খুশি। হেলেনা খাতুন বললেন, পরের বাড়িতে কাজ করি। শনিবার টিকা না পেলেও রোববার টিকা পেয়েছি। এতেই খুশি। এখন বাসায় যাচ্ছি বৃদ্ধ মাকে এনে টিকা দেব। করোনার টিকাদানের বিশেষ কর্মসূচির প্রথম দিন গত শনিবার টিকা নিতে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন রিকশাচালক মো. জুয়েল মিয়া। তিনি দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ সব টিকা শেষ হয়ে যায় পরে আবার টিকা আনা হয়। কিন্তু এই টিকা কেন্দ্রে পৌঁছায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর। ততক্ষণে পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর কাজে ফিরে যান জুয়েল। কিন্তু গতকাল ঢাকা উত্তর সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় মোহাম্মদপুরে টাউন হলের অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রে টিকা নিতে না পেরে ফিরে গিয়েছিলেন মো. জুয়েল। গতকাল রোববার আবার সেখানে গিয়ে লাইনে দাঁড়ান তিনি। তবে আজ তাঁকে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। লাইনে দাঁড়ানোর আধঘণ্টার মধ্যেই তিনি টিকা পান।
জুয়েলের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, রিকশা চালানো বাদ দিয়ে শনিবার টিকার লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু টিকা পাইনি। টিকা আসতেছে শুনে লাইনে দাঁড়ায়েইছিলাম। বিকাল পাঁচটার সময়ও টিকা না আসায় ফিরা গেছি। এখন টিকা পেলাম।
যাত্রাবাড়িতে টিকা নিতে আসা হেদায়েত জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ দুটির কোনোটিই তার না থাকায় এত দিন তিনি টিকা নিতে পারেননি। গত শনিবার টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে রিকশা মালিকের জমার টাকাও আয় করতে পারেননি। এখন টিকা পেয়েছেন।
গণটিকাদানের বিশেষ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রগুলোর কোনোটিতে ভিড় আবার কোনোটিতে ভিড় কম দেখা গেছে। ভিড় কম থাকা কেন্দ্রেগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি কম থাকায় টিকা নিতে আসা লোকজনকে বেশিক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়নি। লোকজন কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন, কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পরই টিকা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন।
কিন্তু যে সব কেন্দ্রে ভিড় বেশি ছিল সেগুলোতে মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহণ করেন। গতকাল সরেজমিন মোহাম্মদপুরের মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে সেখানকার কেন্দ্রেও মানুষের ভিড় খুব বেশি দেখা যায়নি। ভিড় কম থাকায় এই কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের জন্য লাইন আলাদা করা হয়নি। এক লাইনেই টিকা দিতে দাঁড়িয়েছিলেন নারী-পুরুষেরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে প্রায় ৩০ জন টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
হাসপাতালটিতে দায়িত্ব পালনকারী আনসার কমান্ডার ও নিরাপত্তা ইনচার্জ মো. ফয়জুর রহমান বলেন, সকাল আটটা থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখনকার তুলনায় তখন ভিড় একটু বেশি ছিল। তবে ২৬ ফেব্রুয়ারি অনেক মানুষ টিকা নিতে এসেছিলেন। লাইনও হাসপাতালের গেট ছাড়িয়ে রাস্তা পর্যন্ত গিয়েছিল।
কেন্দ্রটিতে নিজের খালা মনোয়ারা বেগমকে কোলে করে টিকা দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন রিকশাচালক মো. জসিম ঢালী। তিনি বলেন, গতকালই খালাকে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অনেক মানুষ থাকায় আর আনিনি। রিকশা চালানোর ফাঁকে দেখলাম মানুষ কম। তাই দ্রুত বাসায় গিয়া রিকশায় খালাকে নিয়ে এসেছি।
ঢাকা উত্তর সিটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রে গিয়েও খুব বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখা গেল না। ওই কেন্দ্রে লাইনও ছিল না। যেখানে টিকাদানকর্মীরা লোকজনের নিবন্ধন করার কাজ করছিলেন, তার সামনে শুধু কিছু মানুষের জটলা ছিল। এই ওয়ার্ডের সচিব ইফতেখারুল মুজিব বেলা তিনটার দিকে বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সকালে ভিড় একটু ছিল, তবে এখন মানুষ কমে গেছে।
ঢাকা দক্ষিণের মাতুয়াইলের মা ও শিশু হাসপাতালে দেখা গেছে কয়েকটি লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। শরীয়তুল্লাহ নামের একজন জানালেন তি এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকা নিতে পেরেছেন। তবে তার স্ত্রী এখনো টিকা নিতে না পারায় অপেক্ষা করছেন। টিকা কার্যক্রমে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই কেন্দ্র বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন