শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রাখাইনে অমুসলিমদের অস্ত্র দেয়ার উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানরা যখন প্রতিকারহীন নির্মম নির্যাতনের শিকার, তখন সেখানকার অমুসলিম নাগরিকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার সরকার। সরকারের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ফর জুরিস্ট ও দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এর ফলে সহিংসতাপীড়িত ওই স্থানের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। রাখাইন প্রদেশের পার্লামেন্টের মন্ত্রী অং সান সুচির দলের নেতা মিন অং অবশ্য মনে করেন, এই উদ্যোগে কোন সমস্যা হবে না বরং এর ফলে উগ্রবাদীদের হামলা থেকে স্থানীয়দের বাঁচানো সহজ হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গারা অনেকদিন থেকেই নির্মম নির্যাতনের শিকার। বর্তমানে ক্ষমতাসীন অং সান সুচির সরকার রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরসনে খুব কমই উদ্যোগ নিয়েছে বলে তার সমালোচনা রয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, সেখানকার সংঘাতের পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শহর লুটপাট ও বেসামরিক লোকদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। রাখাইন প্রদেশের পুলিশ প্রধান কর্নেল সাইন লিইন বলেছেন, তারা রাখাইন আদিবাসী এবং অমুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে আঞ্চলিক পুলিশ সংগ্রহ করছেন। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ফর জুরিস্টের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক স্যাম জারিফ বলেছেন, কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণহীন ও জবাবদিহিহীন অবস্থায় অস্ত্র দেয়া ভয়াবহ ব্যাপার হবে। বিশেষ করে বর্তমান সমস্যার মধ্যে তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
কেবল মুসলিম হবার কারণেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানরা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। নিদারুণ নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পত্র-পত্রিকা-মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাকা-ের বিভিন্ন্ চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। নির্যাতন থেকে বাঁচতে মুসলমানরা ছুটে বেড়াচ্ছে এক দেশ থেকে অন্যদেশে। বর্তমানে সউদী আরব, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভারতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছে। অনেকে জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়তে গিয়ে অঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। এর কোন সঠিক পরিসংখ্যানও কোথাও নেই। অনেকের গণকবর উদ্ধার করা হয়েছে থাইল্যান্ডের গহীন অঞ্চল থেকে। দেশ ছাড়তে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে অনেকে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেখানে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর আশা করা গিয়েছিল, এ সমস্যার যৌক্তিক সমাধান হবে। এটাও মনে করা হয়েছিল, নতুন সরকারের আর্কিটেক্ট অং সান সুচির হয়ত বোধোদয় হবে এবং তিনি এ সমস্যার যুক্তিসংগত সমাধানের উদ্যোগ নেবেন। বাস্তবে তা হয়নি। মাত্র ক’দিন আগেই রোহিঙ্গা নারীদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোও রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছে। এসব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে মানবাধিকার হরণের অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করা যায়। এই বাস্তবতায় সেখানকার সরকার অমুসলিমদের অস্ত্র দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। আমরা অশঙ্কা করি, সেখানে মুসলিমদের সমূলে নির্মূল করতেই এধরনের নীলনকশা করা হয়েছে। এমনিতেই সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তার উপর এধরনের অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য তাদের জীবনকে কতটা দুর্বিষহ করে তুলবে তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ রাখে না।
প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ধর্ম পালনের অধিকার জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের অন্তর্ভুক্ত। বাস্তবতা হচ্ছে কেবলমাত্র মুসলমান হবার কারণেই আজ ফিলিস্তিনের মুসলমানরা নিজ ভূখ-ে কোণঠাসা হয়ে আছে। নিজ ভূমিতে জন্ম নিয়েও রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের ন্যূনতম অধিকার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষায় প্রকাশ্যত সোচ্চার থাকলেও বাস্তবে এর কোন সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে না। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেয়া হলেও কফি আনানকে উগ্রবাদী বৌদ্ধরা যথেষ্ট অপমান করেছে। সেখানকার একশ্রেণীর বৌদ্ধ ধর্মগুরু যে হারে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করছে তাকে তাদের ধর্মানুযায়ী অসহিংসা বলা যায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর সহযোগিতার অভাবেই রোহিঙ্গা মুসলমানরা আজ অমানবিক জীবনযাপন করছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সেখান নতুন করে যে বাহিনী গঠনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, এদের কার্যক্রম শুরু করার আগেই তা নিরোধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় বিশ্ববিবেক জাগ্রত হবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Musha Khan ১৪ জুলাই, ২০১৭, ৬:৩৩ পিএম says : 0
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশেও একটি সক্রিয় সংগঠন থাকা উচিত, যা প্রতিমূহুর্তে সারা বিশ্বে রোহিঙ্গাদের দূর্দশা তুলে ধরবে এবং রোহিঙ্গাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলবে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন