দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সরকারী নির্দেশনা থাকার পরেও ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত গণটিকা কার্যক্রমের দেখা মেলেনি। ফলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর শুনে গণটিকা কেন্দ্রগুলোতে এসে, টিকা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে টিকা নিতে এসে পদে পদে বিড়ম্বনায় শিকার হচ্ছেন টিকা গ্রহিতারা। তিন দিন ঘুরেও টিকা পাওয়ার অভিযোগ করছেন অনেকে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়,টিকা দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টিকার কার্ড হাতে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্তরে ভিড় করছে টিকা গ্রহিতারা। টিকা নিতে আসা উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের ঘুঘুজান গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানায়, তিনি টিকা নেয়ার জন্য তিন দিন থেকে ঘুরছেন, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে তাকে এম,টি ইপিআই সাইফুল ইসলাম জানায় আজকে টিকা দেয়া শেষ অন্যদিন আসেন। একই কথা বলেন পৌর এলাকার বারকোনা গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক মোজাফ্ফর আলী সরকার। তিনি বলেন তার স্ত্রী মাজেদা বেগমকে নিয়ে তিন দিন থেকে ঘুরছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত তার স্ত্রীকে টিকা দেয়া হয়নি। উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের নয়ন বাবু বলেন,গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) গণটিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখতে পান গণটিকা কেন্দ্র বন্ধ। এরপর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেও টিকা দিতে পারেননি। একই কথা বলেন মোসলেম উদ্দিন ও তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন সোমবার গণটিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে, মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন,কিন্তু তাকেও টিকা দেয়া হয়নি। রামভদ্রপুর গ্রামের সুজন মিয়া বলেন তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরি করেন, সেখান থেকে ছুটি নিয়ে এসেছেন টিকা দেয়ার জন্য, কিন্তু তাকেও টিকা দেয়া হয়নি। তছলিম উদ্দিন নামে এক রেলওয়ে কর্মচারী জানায় তিনি সান্তাহার থেকে এসেছেন টিকা নেয়ার জন্য, লাইনে দাড়িয়ে ছিলেন কিন্তু সাড়ে ১২টার পর তাকে বলা হয়,আজকে আর টিকা দেয়া হবেনা।
২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত গণটিকা কেন্দ্র খোলা থাকার সরকারী নির্দেশনা থাকলেও গণটিকা কেন্দ্র বন্ধ থাকলো কেন? জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলেজিষ্ট ইপিআই(এমটিইপিআই) সাইফুল ইসলাম ২৮ফেব্রুয়ারী সোমবার গণটিকা কেন্দ্র বন্ধ রাখার কথা স্বীকার করে বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মশিউর রহমানের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এম,টি,ইপিআই সাইফুল ইসলামের সহকারী পরিসংখ্যানের (চলতি দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বলেন তাদের মাসিক সভা ছিল এই কারনে গণটিকা কেন্দ্র বন্ধ রেখেছিল।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত আবসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নুর-ই-আলম খুশরোজ বলেন,উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মশিউর রহমান গত ২৭ ফেব্রুয়ারী থেকে ছুটিতে আছেন, ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহকারী সার্জন ডাক্তার সাজেদুর রহমান সাজু আছেন প্রশিক্ষনে, তিনিও বিশেষ প্রয়োজনে দিনাজপুর সিভিল সার্জনের কার্য্যালয়ে ছিলেন,এমটিইপিআই সাইফুল ইসলাম নিজ দায়িত্বে গণটিকা কেন্দ্র বন্ধ রেখেছে। তবে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মশিউর রহমানকে, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বার বার বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিনের নিকট গণটিকা কেন্দ্র ২৮ ফেব্রুয়ারী বন্ধ থাকার বিষযে জানতে চাইলে, তিনি বলেন গণটিকা কেন্দ্র সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী খোলা থাকার কথা কিন্তু কেন গণটিকা কেন্দ্র বন্ধ ছিল এই বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
এই বিষয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডাক্তার এএইচএম বোরহান-উল- ইসলাম সিদ্দিকির নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ২৮ ফেব্রুয়ারী গণটিকা কেন্দ্র খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া আছে, কিন্তু কেন বন্ধ ছিল, এই বিষয়ে তিনি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
এদিকে গণটিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন গ্রামের খেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষ, তারা বলেন কাজ বাদ দিয়ে গণটিকা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন টিকা নেয়ার জন্য, কিন্তু সেখানে টিকা দেয়া হচ্ছেনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন