বিশ্বে প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলাম, খ্রিস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রধান। এই চারটি ধর্মের অনুসারীই সবচেয়ে বেশি। এই চার ধর্মের মধ্যে হিন্দু ধর্মকে সবচেয়ে পুরনো বলে গণ্য করা হয়। গবেষকদের মতে, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে এই ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় ২ হাজার ৮০০ বছর আগে। খ্রিস্টান ২ হাজার বছর আগে। ইসলাম প্রায় দেড় হাজার বছর আগে। বলা হয়, ইসলামই হচ্ছে, সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম। এর যাত্রা শুরু হয় প্রথম মানব আদম (আ.) থেকে। এরপর প্রায় ৪ হাজার ২০০ বছর আগে ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় পৃথিবীতে নতুন করে এর সূচনা হয় এবং তৎপরবর্তীতে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর সময় থেকে পরিপূর্ণতা পায়। এ হিসেবে ইসলাম হচ্ছে, বিশ্বে সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম। তবে ইসলামের পরিপূর্ণ যাত্রা শুরু হয় হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মাধ্যমে (৫৭০-৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) এবং বিগত দেড় হাজার বছর ধরে এর অগ্রযাত্রা অব্যহত রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে ইসলাম ধর্ম অনুসারী রয়েছে ১৮০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুযায়ী, সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ২০৬০ সালের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ২০০ কোটি ৭৬ লাখ হবে। শতকরা হিসেবে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় ১.৮৪ হারে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সব ধর্মের চেয়ে বেশি। হযরত মুহম্মদ (স.)-এর সময়কাল থেকে মাত্র দেড় হাজার বছরের মধ্যে ইসলামের মতো এত দ্রুত সম্প্রসারণ আর কোনো ধর্মের হয়নি। প্রধান ৪টি ধর্মের মধ্যে ইসলামের এই অগ্রযাত্রা বিস্ময়কর।
দুই.
দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হিসেবে ইসলামের অগ্রযাত্রা অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য অনেকটা ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে মুসলমানদের সংখ্যা যেভাবে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটছে, তাতে দেশগুলোর সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখতে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো একাট্টা হয়ে একপ্রকার যুদ্ধে নেমেছে। তাদের ইসলামোফোবিয়ায় বা ইসলাম ভীতি পেয়ে বসেছে। এই ভীতি থেকে ইসলাম ঠেকাতে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে চলেছে। ইসলামের বদনাম করার জন্য নানা ছলছুতোর আশ্রয় নিচ্ছে। এমনকি মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য হত্যাযজ্ঞের মতো পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। মূলত ৮০ দশকে পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে তারা ইসলামকে টার্গেট করে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিপদগামী কিছু মুসলমানকে দিয়ে কিছু গোষ্ঠী নিজেরই তৈরি করে এবং তাদের দিয়ে নিজ দেশে হামলা চালিয়ে মুসলমানদের ওপর এর বদনাম চাপিয়ে দিচ্ছে। এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিমান বিস্ফোরণ ঘটিয়ে টুইন টাওয়ার হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস এবং পেন্টাগনে হামলার মাধ্যমে। এই দিনটি নাইন-ইলেভেন হিসেবে পরিচিত। এই হামলায় ২,৯৯৭ জন নিহত, ৬ হাজারের অধিক মানুষ আহত হয় এবং ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক অবকাঠামো ও স¤পদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এর জন্য দায়ী করা হয় আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে। আল কায়দা তথা ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করতে চায়, এর জন্য ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই দায়ী। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সন্ত্রাসী। অথচ পরবর্তীতে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই সংবাদ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এমনকি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং যৌক্তিক বিষয় উত্থাপন করে দেখানো হয়েছে, এই হামলার নেপথ্য কারিগর যুক্তরাষ্ট্র নিজে। মুসলমানদের ওপর দোষ চাপানো এবং ‘ওয়ার অন টেরোরিজম’-এর নামে মুসলমানদের ওপর হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়ার এটি ছিল এক ধরনের ষড়যন্ত্র। এই হামলার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো আল কায়দা ও ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার জন্য আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে দেশটিকে তছনছ করে দেয়। নিরাপরাদ হাজার হাজার মুসলমান হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে, আল কায়দা ধ্বংসের নামে তারা মুসলমানদের হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া ও ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার একটি ক্ষেত্র রচনা করে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ৯/১১ হামলার জন্য দায়ী নন আল-কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। ওই হামলার নেপথ্যে যে তিনিই ছিলেন এমন কোনও প্রমাণও মেলেনি। তালেবান কোনও দিনই সে কথা বিশ্বাস করেনি আর ভবিষ্যতে করবেও না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, সেই ঘটনার পর ২০ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও কি কোনও প্রমাণ মিলেছে? আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুধু একটা অজুহাত ছিল মাত্র। তালেবান মুখপাত্রের এই বক্তব্য টুইন টাওয়ার ধ্বংসের নেপথ্যে যে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল, সেসব তথ্য-উপাত্তকেই সমর্থন করে। আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে গ্রেফতারের ছুতোয় যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর ধরে নিরীহ মুসলমানদের হত্যার মিশন চালায়। অনেকটা নীরবে অপারেশন চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো তাদের মিশন শেষ করে। পরবর্তীতে ইসলামী স্টেট বা আইএস সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন মিশনে নামে। আইএসকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে তা নিধণে সমৃদ্ধ দেশ সিরিয়াতে হামলা চালিয়ে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। নারী-শিশুসহ লাখ লাখ মুসলমানকে হত্যা করে। উদ্ভাস্তুতে পরিণত করে দেশটির জনগণকে। নিজ দেশে তারা পরবাসী হয়ে পড়ে। জীবন বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাতে থাকে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর আগে ইরাকে মানব-বিধ্বংসী অস্ত্রের উছিলায় হামলা চালিয়ে দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। লিবিয়ায় হামলা চালিয়ে দেশটিকে তছনছ করে দেয়। দেখা যাচ্ছে, যেসব মুসলমান দেশ সমৃদ্ধ ছিল; সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে কিংবা অন্য কোনো উছিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো তাদের প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসলামের বিভিন্ন মতবাদের ভেতর মতদ্বৈততা সৃষ্টি করে মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছে। শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব ও সংঘাত তার অন্যতম উদাহরণ।
তিন.
ইসলাম কখনো অন্য ধর্মের ওপর জোর-জবরদস্তি সমর্থন করে না। ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে, আল্লাহর একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষকে এ বিশ্বাসের প্রতি আকৃষ্ট করা ও দাওয়াত দেয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মুসলমানদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তোমরা অন্য ধর্মকে গালি দিও না, তাহলে তারাও তোমাদের গালি দেবে। এর অর্থ হচ্ছে, ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনতা ও পারস্পরিক সহবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আবার মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ কথাও স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম এবং তিনি একথাও বলেছেন, ‘তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ অর্থাৎ ইসলাম হচ্ছে, শান্তির ধর্ম এবং পবিত্র কোরআন হচ্ছে ‘কমপ্লিট কোড অফ লাইফ’ বা পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এতে জোরজবরদস্তির কোনো স্থান নেই। ইসলামের এই অনুরণন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও আকৃষ্ট করছে। তারা পবিত্র কোরআন এবং রাসূল (স.)-এর জীবনী পড়ে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায়। পৃথিবীতে একমাত্র কোরআনই হচ্ছে, একমাত্র গ্রন্থ যা প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি পঠিত হয়। ইসলামের মৌলিক এই বিধানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিনই অন্যধর্ম থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে অনেক মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা না থাকলেও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ অয়েলস ট্রিনিটি সেইন্ট ডেভিড-এর গবেষক কেবিন ব্রিস-এর এক গবেষণায় দেখানো হয়, দেশটিতে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার ২০০ জন অন্যধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করে। ফ্রান্সে ৪ থেকে ৭ হাজার, জার্মানিতে ৪ হাজার, রাশিয়াতে ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিন দিন দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামের এই গতিই খ্রিস্টান অধ্যুষিত পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারা ইসলামের অগ্রযাত্রা ব্যহত করার জন্য কুৎসা রটিয়ে নানা হিংসাত্মক প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে। এতদসত্ত্বেও, ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখতে পারছে না। মুসলমান অধ্যুষিত অনেক দেশে নানা উছিলায় হামলা চালিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেলেও দেশগুলোর জনগণ দেশ ছেড়ে পশ্চিমা দেশগুলোতেই আশ্রয় নিচ্ছে। এতে সেখানে মুসলমানের সংখ্যাও যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি ইসলামও ছড়িয়ে পড়ছে। হযরত মুহম্মদ (স.)-এর জামানা থেকে ইসলামের যে নব ও পূর্ণাঙ্গ যাত্রা শুরু হয়, তা যে মাত্র দেড় হাজার বছরে এত গতি পাবে, সেটা অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক বিস্ময় হয়ে আছে। অথচ আল্লাহর একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নবযাত্রার বিষয়টি সহজ ছিল না। রাসূল (স.)-এর আগমনের পূর্বে আরবে ইসলামের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। তিনি যখন আল্লাহর নির্দেশে তাঁর সার্বভৌমত্ব ও একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন, তখন তাকে সুকঠিন প্রতিকূলতা ও প্রতিরোধের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। এমনকি রাসূল (স.)-এর অতি আপনজনও তার বিরোধিতা করেছেন। হযরত উমর (রা.) তো রাসূলকে (স.) হত্যার জন্য তরবারি নিয়ে ছুটে এসেছিলেন। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ যখন জন্মের পর থেকে বংশ পরম্পরায় যে বিশ্বাস নিয়ে চলতে থাকে, সে বিশ্বাস থেকে অন্য বিশ্বাসে বিশ্বাসী করে তোলার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। আর সেটা যদি নিজ বংশ ও পরিবারের মধ্য থেকে বিশ্বাস পরিবর্তনের কাজ শুরু করা হয়, তখন সেটা কত কঠিনতম কাজ, তা নবী ও রাসূলদের জীবন ও সংগ্রাম থেকে বোঝা যায়। রাসূল (স.) নিজ পরিবারেরই বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। মূর্তি পুজার বিরোধিতা করা এবং আল্লাহর একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠার কথা প্রচার করতে গিয়ে হযরত ইব্রাহিমকে (আ.) আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অন্যান্য নবী-রাসূলদের চরম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এর কারণ ছিল, মহান আল্লাহ তাদের যে সময়কালে ও যে জাতির কাছে প্রেরণ করেছিলেন, সে সময় ও জাতি ছিল আল্লাহর একাত্ববাদের পরিবর্তে তাদের সৃষ্ট দেব-দেবীর মূর্তিপূজারী। এমন এক সময় ও জাতির কাছে আল্লাহ নবী ও রাসূলদের হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহর একাত্ববাদ এবং তা প্রতিষ্ঠায় চাক্ষুষ প্রমাণের কোনো মোজেজাও (ঈসা ও মুসা আলাইহিওয়াসাল্লামকে সীমিত পরিসর বাদে) তাদেরকে দেননি। মোজেজা দেখালেও তা বিশ্বাস না করে তাদেরকে জাদুকর হিসেবে আখ্যায়িত করে অত্যাচার নির্যাতন করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা আদ ও সামুদ জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার যে কথা বলেছেন, তিনি কী করতে পারেন, তার দৃষ্টান্ত দেখানোর জন্য। পবিত্র কোরআন নাজেল করে মুসলমানদের সামনে এই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেছেন, আদ ও সামুদ জাতি তোমাদের চেয়েও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ছিল। তাদের আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। এ কথাও স্পষ্টভাবে বলেছেন, আমি ইচ্ছা করলে সব মানুষকে একই জাতিতে পরিণত করে দিতে পারি। এটাও বলেছেন, তাদের (যারা আল্লাহর একাত্ববাদকে অস্বীকারকারী বা শিরককারী) আমি অবকাশ দেই, যাতে তারা তওবা করে ফিরে আসে। যে কথা বলছিলাম, একটি নতুন মতবাদ বা বিশ্বাস কোনো সমাজ বা জাতিতে কোনো ধরনের দৃষ্টান্ত ছাড়া সেই মতবাদ গ্রহণ করার আহ্বান জানানোর কাজ অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা জ্ঞান-গর্ভ আলোচনা ও যুক্তির মাধ্যমে আল্লাহর একাত্ববাদের কথা তুলে ধরো। আল্লাহ এ কথাও কোরআনে বলে দিয়েছেন, তারা যাদের (মূর্তি) উপাসনা করে, তারা শুধু নিশ্চল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তারা কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তারাই সৃষ্ট। যে জাতি তাদের চিরায়ত দেব-দেবী বা মূর্তিপূজক তাদের বিশ্বাস থেকে নতুন বিশ্বাসে কনভার্ট করার কাজ সুকঠিন। এই কাজই নবী ও রাসূলরা শত কষ্ট, নির্যাতন ও পরিশ্রমের মাধ্যমে করে গেছেন। তাদের সেই কষ্ট ও শ্রমের ফসলই হচ্ছে, আজকের সবচেয়ে দ্রুতগামী ধর্ম ইসলাম।
চার.
ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখতে আজ বিশ্বব্যাপী নানা ষড়যন্ত্র চলছে। মুসলমান নিশ্চিহ্নের বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে ও মিয়ানমারে মুসলমান বিতাড়ন এবং নিধন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, লিবিয়াসহ যেসব মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হামলা চালিয়ে তছনছ করে দিচ্ছে, তা মুসলমান নিধন ও ইসলামের অগ্রযাত্রা ঠেকানোরই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। রাসূল (স.)-এর চরিত্র হনন থেকে শুরু করে বিকৃত কার্টুন আঁকা (নাউজুবিল্লাহ) এবং ভার্চুয়াল জগতে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর নানা অপচেষ্টা চলছে। মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও বর্তমান বিশ্বে ইসলমের সম্প্রসারণ ও মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি রোখা যাচ্ছে না। মুসলমানের উচিত ইসলামের মূল চেতনা এবং রাসূল (স.)-এর আদর্শ এবং সুন্নাকে আরও সুপরিকল্পিত ও যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপন করা। পরস্পরের মধ্যে মতভেদ দূর করে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, একে অপরের ভাই হয়ে, ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং একসুরে কথা বলা।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন